শিরোপা ধরে রাখার মতোই দল কুমিল্লার 

ছবি: সংগৃহীত

বিপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। সবচেয়ে বেশি তিনটি শিরোপা তাদের দখলে, বর্তমান চ্যাম্পিয়নও তারা। সাফল্যের এই পরিসংখ্যান এবার আরও উজ্জ্বল হতেই পারে। অন্তত দলটির স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়দের নাম ও তাদের সাম্প্রতিক ছন্দ দিচ্ছে তেমন আভাস।

ছন্দে থাকা দেশি তারকাদের সমারোহ

টি-টোয়েন্টিতে দেশের সেরা দুই পারফর্মারকেই নিজেদের দলে পেয়েছে কুমিল্লা। ড্রাফটের আগে বাঁহাতি পেসার মোস্তাফিজুর রহমানকে ধরে রাখে তারা। তাতে লিটন দাসকে হারানোর ঝুঁকি তৈরি হয়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন কুমিল্লার। ড্রাফটে প্রথমেই খেলোয়াড় ডাকার সুযোগ পেয়ে যায় তারা। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার লিটনকে শুরুতেই টেনে নিয়ে বড় চিন্তা দূর করে ফেলে।

বাংলাদেশের মাঠগুলোতে কন্ডিশনের কারণে মোস্তাফিজ প্রশ্নাতীতভাবেই সেরা বোলিং অস্ত্র। পুরো ফিট ও সেরা ছন্দের মোস্তাফিজ প্রায় প্রতি ম্যাচেই গড়ে দিতে পারেন ব্যবধান। 

লিটন শেষ হওয়া বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কাটিয়েছেন দুর্দান্ত সময়। সব সংস্করণ মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার ছুঁইছুঁই রান করেছেন। টি-টোয়েন্টিতে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ১৪০-এর বেশি, বাংলাদেশের আর কারও ১৩০ স্ট্রাইক রেটও ছিল না। টি-টোয়েন্টিতে কোনো সংশয় ছাড়াই লিটন এখন সেরা টাইগার ব্যাটার। বিশেষ করে, পাওয়ার প্লেতে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার মতো ঝাঁজ দেখাতে পারেন তিনি। মন্থর উইকেটে কঠিন পরিস্থিতি দেখলে মানিয়ে নিয়েও খেলার এলেম তার বেশ পোক্ত।

কুমিল্লার দুটি শিরোপা জয়ে অধিনায়ক ছিলেন ইমরুল কায়েস। টপ অর্ডার এই ব্যাটারকে এবারও একই ভূমিকায় রাখতে যাচ্ছে তারা। ইমরুলের অভিজ্ঞতা আছে পরিস্থিতি বুঝে জুতসই রান করার। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সাম্প্রতিক ফর্ম খুব একটা সুবিধার নয়।

কুমিল্লার দলে দারুণ ভারসাম্য নিয়ে আসবেন অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। মিরপুরের মাঠে তার অফ স্পিন কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে দারুণ কার্যকর। বাংলাদেশের যে কজন ব্যাটার মন্থর উইকেটে মানিয়ে নিয়ে ঝড়ো ব্যাটিং করতে পারেন, মোসাদ্দেক তাদের একজন। তিনি একাদশে থাকলে একজন বাড়তি বোলার বা ব্যাটার খেলানোর অবস্থা তৈরি হয় দলের।

গেল বিপিএলের ফাইনালে কুমিল্লার বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের হয়ে ঝড়ো ফিফটি করেছিলেন সৈকত আলি। রোমাঞ্চকর জয়ের পরিস্থিতি তৈরি করেছিলেন তিনি। সেই সৈকতকে এবার বরিশাল থেকে নিজেদের দলে নিয়ে এসেছে কুমিল্লা। মেরে খেলার ফ্রি লাইসেন্স দিয়ে সৈকতের কাছ থেকে 'ইমপ্যাক্ট' রাখা পারফরম্যান্স আদায় করতে পারে দলটি। ওপেনিং কিংবা ওয়ান ডাউনে এই ডানহাতি হতে পারেন আদর্শ।

লিটন থাকার পরও বাড়তি দুজন কিপার-ব্যাটার রেখেছে কুমিল্লা। তাদের মধ্যে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনের একাদশে ঠাঁই পাওয়া কঠিন। লিটন সম্ভবত খেলবেন স্পেশালিষ্ট ব্যাটার হিসেবে। সেক্ষেত্রে জাকের আলি অনিককে কিপিং করতে দেখা যেতে পারে।

ঘরোয়া ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময়ে সব সংস্করণেই রান পাচ্ছেন অনিক। লোয়ার মিডল অর্ডারের পাশাপাশি মিডল অর্ডারেও তিনি বেশ ভালো বিকল্প। বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম ও বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনিকে ফের দলে এনেছে তারা। এছাড়া, আছেন অফ স্পিনার নাঈম হাসান ও ডানহাতি পেসার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ। তরুণ পেসার আশিকুর জামানকে দলে নিয়েছে কুমিল্লা। এতে বেড়েছে স্কোয়াডের গভীরতা।

বিদেশি তারার ভিড়

কুমিল্লার বড় শক্তি তাদের নামীদামী সব বিদেশি তারকা ক্রিকেটার। পাকিস্তানের মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদি, হাসান আলি, আবরার আহমেদ আর খুশদিল শাহকে সরাসরি চুক্তিতে নিয়েছে তারা। তাদের মধ্যে বাঁহাতি পেসার শাহিনের খেলা অবশ্য অনিশ্চিত। উইকেটরক্ষক-ব্যাটার রিজওয়ান ঢাকায় প্রথম পর্বে খেলবেন না। নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষে তার দলে যোগ দিতে দিতে কুমিল্লার অন্তত চারটি ম্যাচ চলে যাবে। লেগ স্পিনার আবরার আহমেদও কমপক্ষে প্রথম দুই ম্যাচ থাকবেন না। তবে বাঁহাতি ব্যাটার খুশদিল ও ডানহাতি পেসার হাসানকে শুরু থেকেই পাওয়ার কথা রয়েছে। 

বিপিএলের শুরু থেকেই থাকবেন আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবি। বাংলাদেশের কন্ডিশনে নবি তার অফ স্পিন ও আগ্রাসী ব্যাটিং দিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারেন। রিজওয়ান আসার আগ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের চ্যাডউইক ওয়ালটনকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করাতে পারে কুমিল্লা। নিজের দিনে যে কোনো বোলিং লাইনআপ তছনছ করে দিতে সক্ষম ওয়ালটন। এছাড়া, মিডল অর্ডারে ব্যাক-আপ হিসেবে জিম্বাবুয়ের শন উইলিয়ামসকেও নিয়েছে তারা।

কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন কীভাবে একাদশের সমন্বয় করেন তা অবশ্য দেখার বিষয়। স্কোয়াড বিবেচনায় এবারের বিপিএলে 'হট ফেভারিট' বলতে হলে কুমিল্লাকেই রাখতে হয় বিবেচনায়।

আগামী ৬ জানুয়ারি টুর্নামেন্টের প্রথম দিন শিরোপা ধরে রাখার মিশনে রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে মাঠে নামবে কুমিল্লা। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স স্কোয়াড:

সরাসরি চুক্তিতে: মোস্তাফিজুর রহমান, মোহাম্মদ রিজওয়ান (পাকিস্তান), শাহিন শাহ আফ্রিদি (পাকিস্তান), হাসান আলি (পাকিস্তান), খুশদিল শাহ (পাকিস্তান), মোহাম্মদ নবি (আফগানিস্তান), আবরার আহমেদ (পাকিস্তান)। 

ড্রাফট থেকে দেশি: লিটন দাস, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, তানভীর ইসলাম, ইমরুল কায়েস, আশিকুর জামান, জাকের আলি অনিক, সৈকত আলি, আবু হায়দার রনি, নাঈম হাসান, মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ, মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন।

ড্রাফট থেকে বিদেশি: শন উইলিয়ামস (জিম্বাবুয়ে), চ্যাডউইক ওয়ালটন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)।

Comments

The Daily Star  | English
CAAB pilot licence irregularities Bangladesh

Regulator repeatedly ignored red flags

Time after time, the internal safety department of the Civil Aviation Authority of Bangladesh uncovered irregularities in pilot licencing and raised concerns about aviation safety, only to be overridden by the civil aviation’s higher authorities.

9h ago