বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে থাকবে: সৌরভ

বৃহস্পতিবার গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কাপের ট্রফি উন্মোচন আয়োজনে আসেন সৌরভ। তার সম্মানে নানান রকম আয়োজন উপভোগ করে মঞ্চে উঠেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক।
Sourav Ganguly
ঢাকায় সৌরভ গাঙ্গুলি। ছবি: স্টার

নব্বুইর দশক থেকেই বাংলাদেশের মানুষের কাছে সৌরভ গাঙ্গুলি ভীষণ জনপ্রিয় এক নাম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছাড়ার ১৫ বছর পরও যেন তার আবেদন কমেনি একটুও। এক দশক পর আবার বাংলাদেশে এসে এই তারকা পড়লেন শত শত ক্যামেরা আর বিপুল মানুষের সামনে। পরে প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, এদেশের মানুষের ভালোবাসা বরাবরই তাকে অন্যরকম স্পর্শ করে। এদেশের ক্রিকেটের সঙ্গেও যে তিনি জড়িয়ে আছেন ঐতিহাসিক সূত্রে।

বৃহস্পতিবার গুলশানের একটি অভিজাত হোটেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র কাপের ট্রফি উন্মোচনে আসেন সৌরভ। তার সম্মানে নানান রকম আয়োজন উপভোগ করে মঞ্চে উঠেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক।

বাঙালি হওয়ায় বাংলাদেশের সঙ্গে তার অনেকদিনের যোগসূত্র। ১৯৮৯ সাল থেকে খেলা এবং খেলার বাইরের বিভিন্ন আয়োজনে এখানে এসেছেন বহুবার। আরও একবার এসে আগের মতই নিবিড়তা অনুভব করছেন তিনি,  'যতবারই আমি এখানে আসি, এত মানুষের ভালোবাসা পাই আমি বুঝতে পারি না এটা ভারত না বাংলাদেশ। আমাকে এত ভালোবাসা, এত নিজের মনে করার জন্য আন্তরিক শুভেচ্ছা।'

'বাংলাদেশে প্রথম আসি ১৯৮৯ সালে। আমি অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে এশিয়া কাপ খেলতে এসেছি। সেই থেকে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। প্রচুর বন্ধু আমার এখানে। ইফতেখার রহমান মিঠু (বিসিবি পরিচালক) সেই থেকে আমার বন্ধু। ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় এসেছিলাম শেষবার। এরপর ভারতীয় ক্রিকেটের নানান দায়িত্বে ব্যস্ত হওয়ায় হয়ত গেল দশ বছর আমি আসিনি। কিন্তু মিঠুর সঙ্গে, তার পরিবারের সঙ্গে, বাকি বন্ধুদের সঙ্গে আমার দেখা হতো পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়।'

Sourav Ganguly, Khaled Masud, Akram Khan

একই আয়োজনে ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। অভিষেক টেস্ট স্কোয়াডের আকরাম খান, খালেদ মাসুদ পাইলটরা। ২০০০ সালে অভিষেক টেস্টে ভারতের বিপক্ষেই নেমেছিল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ভারতের অধিনায়ক হিসেবে টস করতে নেমেছিলেন সৌরভ। অধিনায়ক হিসেবে টেস্টে সেটাই ছিল তার শুরু। সেবারই টেস্টে প্রথমবার টস করেছিলেন দুই বাঙালি অধিনায়ক।

উপলক্ষ পেয়ে সৌরভ ফিরে গেলেন ২৩ বছর আগের সময়টায়, জানালেন তার নামটাও বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে থাকবে জড়িয়ে,  'আমার প্রথম টেস্ট অধিনায়কত্ব বাংলাদেশে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সঙ্গে আমার নাম জড়িয়ে থাকবে। কারণ ওটা ছিল বাংলাদেশেরও প্রথম টেস্ট ম্যাচ। আমার মনে আছে তখন নতুন স্টেডিয়াম (মিরপুরে) হয়নি, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা হতো। বাংলাদেশ সম্ভবত প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিল। ড্রেসিংরুমে গিয়ে ভাবলাম, জীবনের প্রথম টেস্ট নেতৃত্বে হেরে যাব! পরে আমরা ম্যাচে ফিরে আসি এবং জিতি। আমার জীবনের বহু মূল্যবান মুহূর্ত বাংলাদেশে।'

ঢাকায় ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনালে তখনকার রেকর্ড  ৩১৪ রান তাড়া করে ভারতকে জিতিয়েছিলেন সৌরভ। খেলেছিলেন ১২৪ রানের ইনিংস। স্মরণ করলেন সেই ইনিংসের কথাও,  'আমার স্পষ্ট মনে আছে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমরা ৩১৫ রান তাড়া করে জিতি। তখনকার দিনে ৩১৫ রান চেজ করা খুব কঠিন ছিল।  বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তখন এত সুন্দর আলো ছিল না। ফুটবলের আলোয় খেলা হয়েছে এবং সে ম্যাচটা আমরা জিতি।'

ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র কাপ টুর্নামেন্টের মূল সুর মাদকমুক্ত দেশ গড়া। যুব সমাজকে মাদক থেকে সরিয়ে খেলার দিকে নিয়ে আসা। এই ভাবনার জায়গা থেকেও নিজের বার্তা দিয়েছেন সাবেক বিসিসিআই সভাপতি, 'বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে চেষ্টা করছেন সেটা সত্যিই প্রয়োজনীয়। সারা বিশ্বেই এই ক্যাম্পেইন দেখেছি। কারণ ড্রাগস কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের কাছে একটি আতঙ্কের কারণ। আমি মাননীয় মেয়র সাহেবকে ধন্যবাদ জানাই। উনি খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশের যুব সমাজকে ব্যস্ত রেখেছেন। আমি মনে করি মাদকের সমাধান একমাত্র স্পোর্টস।'

সৌরভের সম্মানে বেশ কিছু বাংলা গানের সঙ্গে কোরিওগ্রাফির আয়োজন করা হয়েছিল। প্রিন্স অব কলকাতা জানান, এখানকার সঙ্গীতেরও তিনি ভক্ত, 'বাংলাদেশের মানুষ অনেক সংস্কৃতিবান। এদেশের গান বাজনা সম্পর্কে আমি জানি।  মিউজিক হলো বাংলাদেশের মানুষের হার্টবিট। এখান থেকে বহু গায়ক-গায়িকা ভারতবর্ষে গেছে, তাদের গান শুনেছি।'

বিদায় বেলায় আবারও সবাইকে ভালোবাসা জানিয়ে যান সৌরভ, 'সবাইকে অনেক শুভেচ্ছা, অনেক ভালোবাসি। তোমরা এরকমই থাকবে, তোমরা ভালো থাকো। আবার বলি, যতবার আমি বাংলাদেশে আসি, আমার অসাধারণ লাগে। এত মানুষের ভালোবাসা... ভালোবাসা মানে সত্যিকারের ভালোবাসা। এসব দেখে আমি সত্যিই আপ্লুত হই। আপনারা সবাই ভালো থাকবেন।' 

অভিষেক টেস্টের স্কোয়াডের সদস্যরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান, আতাহার আলি খান, গাজী আশরাফ হোসেন, সাবেক ফুটবলার কায়সার হামিদ ও জাতীয় ভলিবল দলের অধিনায়ক হরষিত বিশ্বাস। শেষ দিকে সব ক্রীড়াবিদদেরর সঙ্গে মঞ্চে ছবি তুলেন সৌরভ। 

Comments

The Daily Star  | English

Chhatra League banned

The interim government last night banned Bangladesh Chhatra League, caving in to demands from the student movement against discrimination.

51m ago