বিবর্ণ পারফরমান্সে অস্বস্তি বাড়াল বাংলাদেশ
খেলার আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলা তামিম ইকবালের কথার উত্তাপ ছড়ালো ম্যাচের দিনেও। সেই উত্তাপের স্পর্শ অবশ্য প্রকৃতিতে লাগেনি। চট্টগ্রামে বারবার হানা দিল বৃষ্টি, তিন দফায় বন্ধ থাকল খেলা। শেষে বৃষ্টি আইনে বাংলাদেশকে হারালো আফগানিস্তান। বৃষ্টিকে অবশ্য দায় দেওয়ার উপায় নেই, বাংলাদেশ যা খেলেছে আকাশ পরিষ্কার থাকলেও লাল সবুজের দলে থাকত ঘন কালো অন্ধকার।
বুধবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ডিএলএস মেথডে সফরকারীরা জিতেছে ১৭ রানে। ৪৩ ওভারে বাংলাদেশের ১৬৯ রানের পর হাসমতুল্লাহ শহিদির দলের লক্ষ্যে ছিল ১৬৪ রান। ২১.৪ ওভারে ২ উইকেটে ৮৩ তোলার পর আর খেলা হয়নি। তাতে তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে যেতেও সমস্যা হয়নি তাদের।
বাংলাদেশকে হারানোর ম্যাচে আফগানদের একক কোন নায়ক নেই। ফজল হক ফারুকি (৩/২৪), রশিদ খান (২/২১) মুজিব উর রহমানদের (২/২৩) বোলিংয়ের কথা বলা যায়। রান তাড়ায় ইব্রাহিম জাদরানও (৫৮ বলে ৪১*) আলোচনায় আসতে পারেন। তবে বাংলাদেশের হন্তারক বোধহয় নিজেদেরই কেমন আড়ষ্ট হয়ে থাকা।
তামিমের কথার রেশ ধরে একটি একটি গণমাধ্যমে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তামিমের কড়া সমালোচনা করলে বাংলাদেশ অধিনায়কের উপর নজর ছিল শুরু থেকে।
কাভার ড্রাইভ আর স্কয়ার কাটে দুই চারে মনে হচ্ছিল তামিম বুঝি অস্বস্তির সব হাওয়া এক ফুঁৎকারে উড়িয়ে দেবেন। কিন্তু কোথায় কি! অস্বস্তি যেন এবারও আরও চেপে ধরল। সেই ফারুকি দিয়েই শুরু। গত বছর বাংলাদেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তিন ম্যাচের প্রতিটিতেই আউট করেছিলেন তামিমকে। এবং একইরকম বল করে। ভেতরে ঢোকা বল খেলতে পা নাড়াতে পারছিলেন না তামিম।
এবার ফারুকি শুরুতে থাকলেন বেশ এলোমেলো। কিন্তু হুট করেই একটা ভালো বল দিয়ে পেয়ে গেলেন প্রিয় উইকেট। আউটের ধরণ অবশ্য এই দফায় কিছুটা ভিন্ন, লেন্থ থেকে সামান্য লাফিয়ে উঠা বল খোঁচা মেরে কিপারের হাতে ধরা দেন তামিম। ২১ বলে ১৩। মাথা নিচু করে মাঠ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তা পা হয়ত বেশ ভারি হয়ে গিয়েছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন শতভাগ ফিট না থাকার পরও খেলছেন নিজের অবস্থা বুঝতে। তা কি অবস্থা বুঝলেন?
অধিনায়কের দেখানো পথেই যেন খানিক বাকি ইনিংসও তাসের ঘর। লিটন দাস যেন শুরু থেকে অনেক বেশি সময় নিলেন। আড়মোড়া ভেঙে রান বাড়ানো শুরু করতেই বিদায়। মুজিব যে গতিতে বল করেছিলেন না বুঝেই পুল করে টাইমিং করতে পারেননি।
দুরন্ত ছন্দে থাকা নাজমুল হোসেন শান্ত ক্রিজে এসেই ছিলেন চনমনে। দারুণ স্ট্রেট ড্রাইভে মোহ ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু টাইমিংয়ের হিসাব নিকাশ তাকেও কাবু করেছে। মোহাম্মদ নবীর বলে স্লুগ সুইপ খেলতে গিয়ে টপ এজড হয়ে ধরা দেন।
সবচেয়ে অবাক করা ছিল সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং। ধুঁকতে ধুঁকতে উপস্থিতি অস্বস্তিকর করে তুলেছিলেন। ৪০ এর নিচে স্ট্রাইকরেটের ইনিংস থামেন নবির দারুণ ক্যাচ। মুশফিকুর রহিম ভরসা হতে পারেননি। রশিদ খানের অনেক শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ব্যাটে পাননি, নিচু হয়ে যাওয়া বল ভেঙে দেয় তার স্টাম্প। এই নিয়ে সব সংস্করণে রশিদের বলে ৯ বার আউট হলেন মুশফিক।
আগের বছর এই মাঠেই চরম বিপাকে পড়া দলকে উদ্ধার করেছিলেন আফিফ হোসেন আর মেহেদী হাসান মিরাজ। এবার দুজনেই ব্যর্থ। ১৩৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা দল তাই বাকি রান করে হৃদয়ের দৃঢ়তায়। বাকিদের মলিন ছবির ভিড়ে নিজেকে আলাদা করতে পেরেছেন। ৬৯ বলে ৫১ করে একদম শেষ দিকে আউট হয়েছে। তার ইনিংস প্রমাণ করে এই কন্ডিশনে আসলে রান করা যেত।
সহজ রান তাড়ায় আফগানিস্তানের দুই ওপেনার করেন সতর্ক শুরু। কোন রকম ঝুঁকি না নিয়ে এগুতে থাকেন তারা। রানরেটের চাপ না থাকায় তেমন কিছু করারও দরকার ছিল না। পেসাররা ভালো জায়গায় বল করলেও উইকেটের পরিস্থিতি আসছিল না। ফিল্ডিংও ছিল না জুতসই। অধিনায়ক তামিমকে ফিল্ডিংয়ে মনে হয়েছে আনফিট। মোস্তাফিজুর রহমানের বলে একটি চার মিড অফে দাঁড়ানো তার পাশ দিয়ে গেলেও ঝাঁপিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করেননি।
বাংলাদেশ প্রথম সাফল্য পায় ১৬তম ওভারে। দারুণ আঁটসাঁট বল করতে থাকা সাকিব রাহামানুল্লাহ গুরবাজকে শিকার ধরেন। নিজের চেনা ঢং বাদ দিয়ে ধীরলয়ে খেলা রাহমানুল্লাহ করেন ৪৫ বলে ২২ রান।
আরেক ওপেনার ইব্রাহিম জাদরানকে আর টলানো যাচ্ছিল না। তবে তিনে নামা রহমত শাহকে স্লিপে লিটন দাসের ক্যাচ বানিয়ে খেলায় কিছুটা উত্তেজনা ফেরায় বাংলাদেশ। পেসারদের দিয়ে বল করানো তামিম স্লিপে, লেগ স্লিপ, গালিতে ফিল্ডার রেখে চেষ্টা চালান খানিকক্ষণ। বাংলাদেশের চাপ সামনে বাউন্ডারি বের করে ফেলেন হাসমতুল্লাহ শহিদি। ২২তম ওভারেই ফের নামে বৃষ্টি। তখন ডিএলএস মেথডে ১৭ রানে এগিয়ে ছিল আফগানরা। এরপর বৃষ্টি থামলে খেলা শুরুর একটা সময় নির্ধারিত হতেই আবার নামল বৃষ্টি। তাতে ভেস্তে গেল বাংলাদেশের সকল সম্ভাবনা।
তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথম ম্যাচ হেরে সিরিজে পিছিয়ে গেল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের বছরে সিরিজ জেতার পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষ্য ছিল স্বাগতিকদের। প্রাথমিক লক্ষ্যেই লেগেছে জোর ধাক্কা, সঙ্গে তামিম বাড়িয়েছেন অস্বস্তি।
Comments