টি-টোয়েন্টিতে নতুনের কেতন ওড়ে

২০০৭ সাল। ভারত দলে তখন প্রতিনিধিত্ব করতেন শচিন টেন্ডুলকার, সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল দ্রাবিড়দের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটাররা। কিন্তু সেই সব বাঘাবাঘা নামকে উপেক্ষা করে এক ঝাঁক তরুণদের নিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যায় ভারতীয় দল। এর পরের গল্প সবারই জানা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশে ফিরেছিল সেই তরুণরা। তরুণরা জ্বলে উঠলে কতো দূর যেতে পারে ক্রিকেট বিশ্বে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়তো সেই ভারত দল। তাদের মতো না হলেও বর্তমান বাংলাদেশও রয়েছে ঠিক একই পথে। নতুন কিছু তরুণের কারণেই টি-টোয়েন্টিতে বদলে গিয়েছে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আগের দিন আরও একবার জানিয়ে দিল এখন সময়টা তরুণদেরই। 

দলীয় ৬৪ রানে যখন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাঠ ছাড়েন তখন বাংলাদেশের পক্ষে বাজী ধরার লোক ছিল খুব কমই। ওভার প্রতি তখনও প্রয়োজন নয়ের বেশি রান। কিন্তু আফগানদের ক্ষুরধার বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে তরুণ তাওহিদ হৃদয় ও শামিম হোসেন পাটোয়ারি যে এমন প্রতিরোধ গড়তে পারবেন তা ভেবেছিল কয়জন? কি সাবলীল ব্যাটিংই না করলেন তারা। যদিও ম্যাচের শেষ ওভারে নাটকীয়তা ছড়িয়েছে। তবে বাংলাদেশ তো জিতে গিয়েছিল হৃদয়-শামিমের ওই জুটিতেই। ৪৩ বলে এসেছে ৭৩ রান। মাঝের ওভারগুলোতে তখন বল করেছেন ওই রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ফজলহক ফারুকিরা।

বাংলাদেশের বদলে যাওয়ার গল্পটা অবশ্য এই ম্যাচ থেকে নয়। গত মার্চে ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে। টানা দুটি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পর বেশ কিছু পরিবর্তন নিয়ে সে সিরিজে মাঠে নেমেছিল টাইগাররা। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তাও আবার তিনটি ম্যাচ জিতে হোয়াইটওয়াশ করে ছাড়ে ইংলিশদের। অথচ ইংল্যান্ড সিরিজের আগে সবমিলিয়ে ১৪৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে জয় ছিল ৪৯টিতে। হার ছিল ৯২ ম্যাচে। বাকি তিনটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। অর্থাৎ জয়ের হার মাত্র ৩৪ শতাংশ। এর অর্ধেকই এসেছে ওমান, আরব আমিরাত, জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডসদের মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলগুলোর বিপক্ষে। তবে এরপর সবশেষ সাত ম্যাচের ছয়টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ।

মূলত তরুণদের উত্থানেই টাইগারদের পারফরম্যান্সে এমন ব্যাপক পরিবর্তন বলে মনে করেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক রাজিন সালেহ। ডেইলিস্টারের সঙ্গে আলাপকালে তরুণদের উত্থান নিয়ে বলেন, 'এখন দলে বেশ কিছু তরুণ খেলোয়াড় এসেছে, যারা ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছে। আগে সিনিয়রদের সঙ্গে তরুণদের পারফরম্যান্সে অনেক পার্থক্য ছিল। মুশফিক, সাকিব, তামিমদের সঙ্গে জুনিয়রদের অনেক পার্থক্য ছিল। এখন দেখেন জুনিয়ররা সিনিয়রদের সঙ্গে সমান তালে পারফর্ম করছে। এটা খুব ভালো একটা দিক। দেখা যায় তাদের মধ্যে কেউই না কেউ ভালো খেলছে। হয় তাওহিদ, না হয় শান্ত কিংবা অন্য কেউ পারফর্ম করছে। এটা ভালো। যে কারণে দলও ভালো করছে।'

তরুণদের উত্থানে মুগ্ধ আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটও। তবে এখানেই না আটকে থেকে নিজেদেরকে আরও উচ্চতর কাতারে নেওয়ার তাগিদটা অনুভব করছেন তিনি, 'আজকে তাওহিদ হৃদয়, (নাজমুল হোসেন) শান্ত, শামিম পাটোয়ারিরা ভালো খেলছে। এরা ভবিষ্যতের জন্য ভালো। দারুণ খেলোয়াড়। তাওহিদের ইনিংসটা খুব ভালো ছিল। শামিম, শান্ত এরা সবাই ভালো। তাদের মধ্যে সেই পটেনশিয়াল আছে। এখন এটাকে ধরে রাখা তাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে কিন্তু তাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। আরও বড় প্লেয়ার হতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।'

একই সঙ্গে তরুণদের নিজেদের মধ্যে আরও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চান পাইলট, 'দেখেন ভারতে যে কোনো সময় দেখা যায় একজন খেলোয়াড় উঠে আসে। এমন পারফর্ম করে যে এমন নিয়মিত পারফর্মারকে ওরা বাদ দিয়ে দেয়। কারণ তরুণ একজন দেখা যায় এমন পারফর্ম করেছে বড় খেলোয়াড়রাও বাদ পড়ে যায়। আমাদের মধ্যেও যখন এমন কিছু হবে তখন আমরা এগিয়ে যাব। এই যেমন সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহ, মাশরাফিরা এসেছে আরও ১৫/১৬ বছর আগে। মাঝে একটা গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। এই জন্যই আমরা পারিনি। আরও ভালো করতে হবে। নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা আরও বাড়াতে হবে। তাহলে সার্বিকভাবে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।'

অবে ব্যাটারদের মধ্যে এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা সে অর্থে না থাকলেও বোলারদের মধ্যে কিছুটা হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে। পেস বোলিং ইউনিটে এখন বাংলাদেশ দলে কেউ আর 'অটো চয়েজ' নন। বিস্ময় জাগিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হওয়া মোস্তাফিজুর রহমানও এখন বাদ পড়ে যান তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, শরিফুল ইসলাম ও ইবাদত হোসেনদের দাপটে। খুব শীগগিরই ব্যাটারদের মধ্যেও এমন প্রতিযোগিতা শুরু হবে বলেই বিশ্বাস করেন পাইলট।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus lands in Chattogram for day-long visit

He landed at Shah Amanat International Airport at 9:22am

1h ago