প্রশ্নের স্রোতে যেন অসহায় নির্বাচকরা

মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণার  সংবাদ সম্মেলনে যতগুলো প্রশ্ন হলো দু’একটি ছাড়া তার সবই তামিম ইকবালকে নিয়ে। এসব প্রশ্নের কয়েকটির কাছাকাছি থাকলেও অনেক প্রশ্নেই দূরের কোন আবছা দ্বীপ দিয়ে ধরে ছুটতে হলো প্রধান নির্বাচককে।
Habibul Bashar Sumon, Minhajul Abedin Nannu, Abdur Razzak
বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ব্যাখ্যা দিতে গণমাধ্যমের সামনে হাজির হন তিন নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও আব্দুর রাজ্জাক। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

গোলাপি রঙের ব্লেজার পরে ড্রেসিংরুম থেকে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে হাঁটা ধরলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, তার পাশে আরও দুই নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন আর আব্দুর রাজ্জাক। চেনা সাংবাদিকদের দেখে কিছুটা হালকা হওয়ার চেষ্টা করলেও তার চেহারায় টের পাওয়া যায় থমথমে ভাব। খানিক পরের প্রশ্নের স্রোত সামলানোর প্রস্তুতি হয়ত নিচ্ছিলেন মনে মনে।

মঙ্গলবার বিশ্বকাপ দল ঘোষণার  সংবাদ সম্মেলনে যতগুলো প্রশ্ন হলো দু'একটি ছাড়া তার সবই তামিম ইকবালকে নিয়ে। এসব প্রশ্নের কয়েকটির কাছাকাছি থাকলেও অনেক প্রশ্নেই দূরের কোন আবছা দ্বীপ দিয়ে ধরে ছুটতে হলো তাকে। 

অবশ্য নির্বাচকদের দায় দেওয়াটা হয়ত অন্যায়ই হবে। যে সিদ্ধান্ত আপনি নেবেন না, তার উত্তর দিতে গেলে অস্বস্তি বোধ করারই কথা।

তামিমকে নিয়ে গত আড়াইমাস ধরে চলতে থাকে নাটকীয়তা। কোন পক্ষ থেকেই আসেনি পরিষ্কার বার্তা। বিসিবি থেকে যেমন রাখা হয়েছে অস্পষ্টতা। তামিম নিজেও ভেতরের সব কথা না বলে রেখেছেন রহস্য। ধোঁয়াশাময় পরিস্থিতিতে তাই ডানা মেলতে থাকে বিতর্ক। তামিমের বাদ পড়ার মধ্য দিয়ে সেই বিতর্ক থামল কিনা এখনো বলার উপায় নেই।

গত জুলাই মাসে আফগানিস্তান সিরিজের সময় নাটকীয়ভাবে অবসর নেওয়ার পর তামিমকে ফেরানো হয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে। এরপর তার চোট নিয়েই ছিল যত আলাপ। চোট সামলে খেলা চালিয়ে যাওয়ার কথা শোনা যাচ্ছিল বিসিবির বিভিন্ন পর্যায় থেকে।

ফিট থাকলে তামিমের বিশ্বকাপ যাওয়া নিয়ে কোন সংশয় কখনো বলা হয়নি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাট করে ৪৪ রান করার পর মনে হচ্ছিল তিনি নিশ্চিতভাবেই থাকছেন বিশ্বকাপে।

কিন্তু এরপরই বদলাতে থাকে পরিস্থিতি। ম্যাচ খেলার পর অস্বস্তি বাড়ায় তৃতীয় ওয়ানডে থেকে বিশ্রাম চান তামিম। প্রধান নির্বাচক জানালেন, সেই বিশ্রাম চাওয়ার পরই তারা বুঝে যান তামিম খেলা চালিয়ে যাওয়ার অবস্থায় নেই। মিনহাজুল জানান তখনই তারা সিদ্ধান্তের কাছে চলে যান,  'বৃষ্টির জন্য প্রথম ম্যাচটা ভেসে গেছে, দ্বিতীয় ম্যাচটি পুরোপুরি খেলেছে এরপরের ম্যাচে তৃতীয় ম্যাচে খেলতে পারেনি। তখন মেডিকেল দলের সঙ্গে আমরা সবাই আলোচনা করেছি, সেখান থেকে আপডেট পেয়েছি। তারপরই তো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই জিনিস ক্লিয়ার করছি, এ কারণেই আমরা ওকে স্কোয়াডে রাখিনি।'

তামিমের স্কোয়াডে না থাকা নিয়ে খবরটা অবশ্য ভিন্নই পাওয়া যায় দিনভর। আগের রাতে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গে দেখা করে কঠিন শর্ত দিয়ে দেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তামিমের দিকে ইঙ্গিত করে তিনি নাকি বলেন, হাফ ফিট কোন খেলোয়াড়কে দলে নিলে অধিনায়কত্ব করবেন না। এতেই অনেকটা পরিষ্কার হয়ে যায় কি হতে যাচ্ছে।

সাকিবের মতো একই অবস্থান দেখান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও। তবে এই দুজনের ইচ্ছাতেই তামিমকে বাদ দেওয়া হয়েছে কিনা তা স্বীকার-অস্বীকার করার কোন দিকেই গেলেন না প্রধান নির্বাচক, 'আমাদের ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কি আলোচনা হয় সেটা তো এখানে খোলাসা করতে পারবো না। আমাদের মধ্যে কি আলোচনা হয় সেটা তো বলতে পারবো না।'

তামিমের বদলে তরুণ ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমকে নেওয়া হয়েছে কেবল চার ম্যাচ দেখে। এই চার ম্যাচে তিনি এখনো নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি। ওপেনিং পজিশনে ব্যাকআপও রাখা হয়নি। সব প্রশ্নেরই একটাই জবাব মিনহাজুলের, 'সবার সঙ্গে আলোচনা করেই নেওয়া হয়েছে সিদ্ধান্ত।'

সাবেক অধিনায়ক ও দলের সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে দলে না রাখার কারণ তামিমকে বলা হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নেও অস্পষ্টতা রেখে দেন তিনি, 'তামিমের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে তবে সব তো আর জানানো যায় না। তবে সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'

চোট থাকলে একজন খেলোয়াড়কে বাদ দেওয়াই স্বাভাবিক। তামিমের যেখানে সব ম্যাচ খেলার নিশ্চয়তা নেই তাকে দলে নেওয়ার ঝুঁকিও না নেওয়া যৌক্তিক। কিন্তু তামিমের চোট যেকোনো সময় ফিরতে পারে, তাকে খেলতে হবে চোট সামলে। এই তথ্য অনেক পুরনো। এসব মেনে নিয়েই তাকে বিশ্বকাপের প্রক্রিয়ায় রেখেছিল বিসিবি।

সব জানার পরও তাকে এতদূর টেনে আনা এবং বিশ্বকাপ যাত্রার আগের দিন পর্যন্ত সব কিছু ঝুলিয়ে রাখার কোন যুক্তি পাওয়া দুস্কর। এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে প্রধান নির্বাচকও চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে যেতে চাইলেন। তার বা তাদের আসলে কিইবা করার আছে?

Comments

The Daily Star  | English
quota reform movement,

Govt publishes preliminary list of those killed in July-August protests

The interim government today published a preliminary list of 726 people who died during the student-led mass protests in July and August.

43m ago