ফিলিপস-স্যান্টনারের দৃঢ়তার সঙ্গে পেরে উঠল না বাংলাদেশ
মেহেদী হাসান মিরাজকে ব্যাকফুট পাঞ্চে কাভার দিয়ে সীমানা ছাড়া করেই উদযাপন করলেন গ্লেন ফিলিপস। তার খানিক আগেই অবশ্য এই দৃশ্যের আভাস মিলেছিল। শূন্য রানে জীবন পাওয়া কিউই ব্যাটার মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে প্রবল চাপে গড়লেন ম্যাচ জেতানো জুটি। তাতে সওয়ার হয়ে স্পিন স্বর্গে সফরকারীরা তুলে নিল দারুণ জয়।
শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। ৭৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৭০ রানের জুটিতে ম্যাচ শেষ করে ব্ল্যক ক্যাপসদের হিরো ফিলিপস আর স্যান্টনার। প্রথম ইনিংসে ৮৭ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ম্যাচ জেতানো ৪০ রান করে ফিলিপস নিজেকে করলেন সবার থেকে আলাদা, স্পিনারদের দাপুটের মাঝে ম্যাচ সেরাও তিনি। এই জয়ের পর দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে নিউজিল্যান্ড শেষ করল ১-১ সমতায়। প্রথমবার কিউইদের টেস্ট সিরিজ হারানোর স্বপ্ন অধরাই থাকল বাংলাদেশের।
বাংলাদেশের দেওয়া ১৩৭ রানের লক্ষ্য ৩৯.৪ ওভারে তুলে নিল কিউইরা। ফিলিপসের সঙ্গে অসাধারণ জুটিতে সঙ্গ দেওয়া স্যান্টনার অপরাজিত থাকেন ৩৫ রানে। এর আগে বল হাতেও তিনি দেখান ঝলক।
ম্যাচ চার দিনে শেষ হলেও খেলা হয়েছে আসলে দুই দিনেরও কম। সব মিলিয়ে ১৭৮.১ ওভার খেলা হয়েছে। এই পরিসংখ্যান বুঝিয়ে দেয় মিরপুরে কতটা কঠিন রাখা হয়েছিল ব্যাটারদের কাজ।
স্পিনারদের বল আচমকা বাউন্স নিয়েছে, টার্ন করেছে আবার গড়িয়েও গিয়েছে। এমনকি শরিফুল ইসলামের বল গড়িয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হুট করে লাফিয়ে বুক সমান উচ্চতায় উঠতে দেখা গেছে।
ব্যাট করার জন্য কঠিন এই কন্ডিশনে ১৩৭ রানের লক্ষ্যে নেমে শুরুতে স্পিন নয়, পেসের ঝাঁজে পড়ে কিউইরা। বাঁহাতি পেসার শরিফুল বাউন্সের হেরফেরে ভীষণ ভোগাতে থাকেন।
লাঞ্চের আগে তিন ওভার টিকে গেলেও ডেভন কনওয়ে লাঞ্চের পর আর শরিফুলকে সামলাতে পারেননি। পঞ্চম ওভারে ১৫ বলে ২ রান করে তিনি বিদায় নেন।
এরপর কেইন উইলিয়ামসনকে নিয়ে প্রতিরোধের চেষ্টা চালান টম ল্যাথাম। উইলিয়ামসন দুই চারে ভালো কিছুর আভাস দিলেও আউট হন আনপ্লেয়বল এক বলে। তাইজুল ইসলামের আচমকা লাফানো বলে পা বেরিয়ে গেলে স্টাম্পিং হন নুরুল হাসান সোহানের তৎপরতায়।
ল্যাথাম এক পাশে রান বাড়ালেও পুরো সিরিজে ম্রিয়মান হেনরি নিকোলস মিরাজকে সামলাতে পারেননি। মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে থামেন থিতু হওয়া ল্যাথামও। কিপার ব্যাটার টম ব্লান্ডেল তাইজুলের লাফানো বলে কিপারের হাতে ধরা দিলে ৫১ রানে ৫ উইকেট পড়ে যায় নিউজিল্যান্ডের।
ড্যারেল মিচেল ছিলেন বিপদজনক। প্রথম ইনিংসেও গ্লেন ফিলিপসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জুটি গড়েছিলেন তিনি। এবারও দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। তবে জুটিটা জমে উঠার আগে আঘাত হানেন মিরাজ। মিরাজকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন ১৯ রান করা মিচেল। স্লিপে তার সহজ ক্যাচ নেন শান্ত। ৬৯ রানে প্রতিপক্ষের ৬ উইকেট ফেলে তখন ম্যাচে দাপট বাংলাদেশের।
এরপরই সেই দাপট ক্রমেই মিইয়ে দিতে থাকেন ফিলিপস-স্যান্টনার। শূন্য রানে শান্ত ক্যাচ ছাড়লে বেঁচে যান ফিলিপস। জীবন পেয়ে আর কোন ভুল করেননি। তাদের আলগা করতে একাধিক রিভিউ নিয়েও হতাশ হয় বাংলাদেশ।
বেলা বাড়ার সঙ্গে রোদের দেখা পাওয়া গেলে ব্যাট করার জন্যও কন্ডিশন একটু ভালো হয়েছে। এক-দুই রানের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই দুজন বের করেছেন বাউন্ডারি। বাংলাদেশ অধিনায়ক শান্ত এক সময় বাধ্য হন ফিল্ডিং ছড়িয়ে নিতে। শেষের ২০-৩০ রান প্রায় চাপহীন অবস্থায় তুলে ফেলে তারা।
Comments