মিরপুরে খেলা লটারির মতন, টের পাচ্ছেন তাইজুলরা 

প্রতিপক্ষের জন্য ফাঁদ পেতে সেই ফাঁদে নিজেরাই ধরা রেখে জেরবার দশা বাংলাদেশ দলের। মিরপুরের উইকেট নিয়েও তাই আলোচনা চলমান।
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

'কখনো কখনো মাকড়সা তার নিজেই জালেই আটকা পড়ে যায়',  বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড টেস্ট শেষ হওয়ার পর এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলে। ইঙ্গিতটা মিরপুরে বাংলাদেশের অতি টার্নিং উইকেট বানানোর ফন্দির দিকেই। প্রতিপক্ষের জন্য ফাঁদ পেতে সেই ফাঁদে নিজেরাই ধরা রেখে জেরবার দশা বাংলাদেশ দলের। মিরপুরের উইকেট নিয়েও তাই আলোচনা চলমান। সিরিজে বাংলাদেশের সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম যেমন বলছেন, মিরপুরে টেস্ট খেলা অনেকটা ফিফটি-ফিফটি, মানে লটারির মতন।

তাইজুলের মতে, স্বাগতিক হয়েও মিরপুরের উইকেটের আচরণ কেমন হবে তা বুঝতে পারেন না তারা। কখন কী হবে তা পুরো ভাগ্যের উপর নির্ভর করার মতন হয়ে যায়।

২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া আর ইংল্যান্ডকে সেই 'লটারিতে' হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর বড় দলগুলোর বিপক্ষে গোলকধাঁধায় খাবি খাচ্ছে নিজেরাই। শ্রীলঙ্কা, ভারতের বিপক্ষে এমন অননুমেয় পিচ দিয়ে হয়েছে। এবার উপমহাদেশের বাইরের দলও মিরপুরের লটারিতে বাংলাদেশকে হারিয়ে চলে গেছে।

মাত্র ১০৬৯ বলের টেস্ট জায়গা করে নিয়েছে ইতিহাসের সপ্তম সংক্ষিপ্ত টেস্টের তালিকায়। সফরকারী অধিনায়ক টিম সাউদি রাখঢাক না রেখেই বলে গেছেন তার পুরো ক্যারিয়ারের খেলা সবচেয়ে বাজে উইকেট এটি।

বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা অবশ্য বাস্তবতা বুঝেও সংকটের জায়গা আড়াল করে চলেছেন। সিলেটে বেশ ভালো উইকেটে প্রতিপক্ষকে ১৫০ রানে হারানোর পর হয়ত মনে করা হয়েছিলো মিরপুরের পিচে কাবু হবেন কেইন উইলিয়ামসনরা।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাতকারে তাইজুল বলছেন, 'দেখুন সিলেটে কাজটা সহজ ছিলো না, কিন্তু আমরা পেরেছি। কিন্তু আপনি যখন মিরপুরে খেলবেন তখন সব সময় এটা ফিফটি-ফিফটি, আমরা সেই সুযোগটা নিয়েছি।'

মিরপুরের ফিফটি-ফিফটি বা লটারির মতন পিচে হিসাব না মেলেনি। বাংলাদেশ হয়ত ভুলে গিয়েছিলো প্রতিপক্ষেরও যে আছে কিছু ভালো মানের স্পিনার, বাংলাদেশের ব্যাটারদের তাই পড়তে হয় কঠিন পরীক্ষায়। এছাড়া গ্লেন ফিলিপসের মতন মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া আগ্রাসী ব্যাটারও থাকেন বড় দলগুলোর স্কোয়াডে। এখন আর উপমহাদেশের বাইরের দলকে র‍্যাঙ্ক টার্নারে বলে কয়ে হারানোর উপায় কোথায়?

মিরপুর টেস্টের পর তাই তুমুল আওয়াজ উঠেছে উইকেট নিয়ে। এমন পিচে খেলে আসলে টেস্টে উন্নতি কতটা সম্ভব, প্রশ্ন তুলছেন বিশ্লেষকরা। নাজমুল হোসেন শান্ত টেস্টের পরই বলেছিলেন, তারা উন্নতির জন্য নয়, টেস্ট খেলবেন জেতার জন্য। উন্নতি করবেন ঘরোয়া ক্রিকেটে।

তাইজুলেরও একই মত,  'প্রতি দলই ঘরের মাঠের সুবিধা নেয়। আমরা যখন বাইরে খেলতে যাব সেভাবে প্রস্তুত হয়ে যাব। এর মানে এই না যে আমরা ঘরের মাঠে সব সময় স্পোর্টিং উইকেটে খেলব। আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে যখন খেলব তখন স্পোর্টিং উইকেটে খেলতে পারি। আপনি টেস্ট লড়াই করার জন্য শুধু খেলবেন না, জেতার জন্য খেলবেন। আমরা মিরপুরে জিততে চেয়েছি, ড্র করতে নয়।

মুশকিল হলো, মিরপুরে ঘরের মাঠের সুবিধা আসলে নিতে পারল কোথায় বাংলাদেশ। যে উইকেটের আচরণ নিজেরাই বুঝতে পারেন না সেই উইকেটকে হোম এডভান্টেজ আর বলা যাচ্ছে কি?

সিলেটে প্রথম টেস্টের উইকেটও ছিলো স্পিন বান্ধব। বাঁহাতি স্পিনে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১০ উইকেট নেওয়া তাইজুলের বোলিংই দিচ্ছে সেই প্রমাণ। তাইজুলের নিজের কথার স্বরেই বোঝা যাচ্ছে সিলেটের বোধগম্য উইকেটই তাদের জন্য ছিলো বেশি আদর্শ,  'সিলেটের উইকেট স্পোর্টিং ছিলো ব্যাটার-বোলার সবাইকেই সাহায্য করেছে। বোলার হিসেবে চ্যালেঞ্জ ছিলো, আমি সেটা নিয়েছি। বোলার হিসেবে উইকেট বোঝা ও ব্যাটারদের চিন্তা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। দলের জয়ে অবদান রাখতে পারা দারুণ ছিলো।'

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago