নিউজিল্যান্ডের মাঠে প্রথমবার ওয়ানডে জয়ের ইতিহাস বাংলাদেশের

নিউজিল্যান্ডকে ৯ উইকেটে হারালো বাংলাদেশ। 

সেই ২০০৭ সাল থেকে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে সাদা বলে ক্রমাগত হারতে হয়েছে। ১৬ বছরে টানা ১৮ ওয়ানডে হারের বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ এমন ফল করবে অনেকের কাছেই হয়ত অবিশ্বাস্য। সময় পার্থক্যের কারণে সকালে ঘুম ভেঙে স্কোরকার্ড দেখে বিভ্রমেও পড়তে পারেন কেউ কেউ। কিন্তু সত্যিই টম ল্যাথামদের উড়িয়ে বাংলাদেশ পেয়েছে এমন জয়ের দেখা। তানজিম হাসান সাকিব, সৌম্য সরকার, শরিফুল ইসলামের পেসের ঝাঁজে কিউইদের মাত্র ৯৮ রানে গুটিয়ে দেওয়ার চমক দেখিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল ম্যাচ জিতেছে অনায়াসে।

প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ আগেই খুইয়ে বসেছিলো বাংলাদেশ। শনিবার নেপিয়ারে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ছিল অনেকটা বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়ানোর লড়াই, আরেকবার হোয়াইটওয়াশ থেকে বাঁচার মিশন। তাতে মিলল দারুণ ফল। স্বাগতিক দলকে  রীতিমতো ৯ উইকেটে উড়িয়ে দিল সফরকারীরা। 

এই ম্যাচ জিতলে ঘরের মাঠে টানা ১৮ ওয়ানডে জেতার অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ব রেকর্ড স্পর্শ করত নিউজিল্যান্ড। তাদের মাত্র ৯৮ রানে গুটিয়ে সেটাও হতে দিল না বাংলাদেশ। কিউইদের মামুলি  পুঁজি ১৫.১  ওভারেই তুলে নেয় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা।  দলকে ম্যাচ জিতিয়ে ৪২ বলে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন অধিনায়ক শান্ত। তার আগে কাজের কাজ করে দিয়েছেন তিন পেসার।

১৪ রানে ৩ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে সফল তানজিম সাকিব, আগের ম্যাচে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করা সৌম্য সরকার বোলিং দিয়েও নিজের ফিরে আসা করেন উজ্জ্বল। ১৮ রানে তিনি নেন ৩ উইকেট। শরিফুল বাঁহাতি পেসে ২২ রানে ধরেন তিন শিকার। 

৯৮ রান তাড়ায় নেমে সতর্ক শুরু আনেন দুই ওপেনার সৌম্য আর এনামুল হক বিজয়। প্রথম চার ওভার পার করে দেওয়ার পর সৌম্যের চোখে কিছু একটা পড়ল। পানি দিয়ে তা সরানোর চেষ্টায় হলেন ব্যর্থ,  ফিজিও আই ড্রপ দিলেও কাজ হলো। মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন ১৬ বলে ৪ রান করে।

এরপর অধিনায়ক শান্ত নেমে দ্রুতই বের করতে থাকলেন রান। বিজয় ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। মেঘ সরে নেপিয়ারে তখন রোদের দেখা। সকালের পেসের স্যুইংও গায়েব। আদর্শ কন্ডিশন দেখে মামুলি রান তাড়া অনায়াসে তুলতে লাগল বাংলাদেশ।

বাউন্ডারির ঝলকে দলকে জেতার কাছে নিয়ে ফেরেন বিজয়। ৭ চারে ৩৩ বলে ৩৭ করে তিনি ধরা দেন কিপারের গ্লাভসে। দলের রান তখন ৮৪, ওই উইকেট পতন তাই বিশেষ কোন প্রভাব তৈরি করেনি ম্যাচের।

এদিন টস জিতে বোলিং নিয়ে চতুর্থ ওভারে প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। তানজিমের বেরিয়ে যাওয়া বলে এজড হয়ে কিপারের হাতে জমা পড়েন রাচিন রবীন্দ্র।  উইল ইয়ং প্রতিরোধের চেষ্টায় ছিলেন, কিন্তু তাকে সঙ্গ দিতে পারেননি হেনরি নিকোলস। তানজিমের বলে সরে গিয়ে পুল করে সহজ ক্যাচ তুলে দেন তিনিও।

২২ রানে ২ উইকেট হারানোর পর একটা জুটি পায় স্বাগতিকরা। ইয়ংয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যান অধিনায়ক টম ল্যাথাম। মেঘলা আকাশের নিচে দুই পাশে স্যুয়িং হতে থাকায় কন্ডিশন ছিলো ভীষণ চ্যালেঞ্জের।

৩৬ রানের জুটিটি ভাঙতে তাই শরিফুলকে ডাকেন শান্ত। আক্রমণে এসে ১৭তম ওভারে সাফল্য পান শরিফুল। তার দুর্দান্ত ভেতরে ঢোকা বল কেড়ে নেয় ল্যাথামের স্টাম্প। ইয়ং ড্রাইভ করে দেন সহজ ক্যাচ। খানিক পর মার্ক চামম্যানকেও বোল্ড করে দেন বাঁহাতি পেসার। ৭০ রানে ৫ উইকেট হারানো নিউজিল্যান্ড তানজিমের বলে টম ব্ল্যান্ডেলকে হারালে ওই রানেই হারায় ৬ উইকেট।

এরপর মিডিয়াম পেসে বিষাক্ত স্যুইং ঢেলে উইকেট নেওয়ায় যোগ দেন সৌম্য। জশ ক্লার্কসেন আর অ্যাডাম মিলনেকে পর পর দারুণ ভেতরে ঢোকানো দুই বলে বোল্ড করে দেন তিনি।

পরে আদিত্য অশোকও শিকার হন সৌম্যের। তিন পেসারের তোপে ব্যতিক্রম দেখাচ্ছিল মোস্তাফিজকে। বেশ খরুচেও ছিলেন তিনি। তবে  স্বাগতিকের ইনিংস মুড়ে দিয়ে স্কোরবোর্ডে উইকেট শিকারে নিজের নামটা তুলেন তিনিও।

ইনিংস বিরতিতেই পরিস্কার হয়ে যায় ম্যাচের গতি। সকালের রোদ কেটে তখন দেখা দিয়েছে রোদ। স্যুইংয়ের বিষ বেলা বাড়ার সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের মাঠে আর থাকে, ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো হয়ে যায় পরিস্থিতি। এবারও তাই হলো। ব্যাট করার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়টা পেল বাংলাদেশ দল। সহজ লক্ষ্য এমন কন্ডিশন পেয়ে দ্রুতই ম্যাচ শেষ করে দেয় তারা।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago