ভারতকে ইনিংস ব্যবধানে হারাল দক্ষিণ আফ্রিকা
একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার মাটি এখনও অজেয় ভারতের। বেশ কয়েকবারই সম্ভাবনা জাগিয়েও সে দেশে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি তারা। এবারও সে আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের। কারণ গান্ধী-ম্যান্ডেলা ট্রফির প্রথম টেস্টে বিশাল ব্যবধানেই হেরেছে রোহিত শর্মারা। নন্দ্রে বার্গার, কাগিসো রাবাদা ও মার্কো ইয়ানসেনের বোলিং তোপে ইনিংস ব্যবধানেই হারতে হয়েছে ভারতকে।
বৃহস্পতিবার সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে ইনিংস ও ৩২ রানের ব্যবধানে হেরেছে ভারত। প্রথম ইনিংসে ২৭৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ১৩১ রানে গুটিয়ে গেছে রোহিত শর্মার দল। এর আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪০৮ রানে অলআউট হয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম বলেই জীবন পান যশস্বী জসওয়াল। কাগিসো রাবাদার বলে স্লিপে ক্যাচ ছাড়েন মার্করাম। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। ৫ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। তবে এর আগে খালি হাতেই সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক রোহিত। রাবাদার করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বোল্ড হয়ে যান অধিনায়ক। এরপরই যশস্বীকে শিকার করেন বার্গার।
এরপর শুবমান গিলকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলি। ৩৯ রানের জুটিও গড়েন তারা। তবে গিলকে বোল্ড করে দিয়ে এই জুটি ভাঙেন ইয়ানসেন। এরপর তাসের ঘরের মতোই ভেঙে পড়ে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ।
ইয়ানসেনের বলে স্লিপে জীবন পেয়েও ৬ রানের বেশি করতে পারেননি শ্রেয়াস আইয়ার। চা বিরতির পরই তাকে বোল্ড করে দেন ইয়ানসেন। এরপর পরপর দুই বলে দুটি উইকেট তুলে নিলেন অভিষিক্ত বার্গার। বেডিংহ্যামের হাতে ধরা পড়ে গোল্ডেন ডাকে মাঠ ছাড়েন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এর আগে এইডেন মার্করামের হাতে ক্যাচ তুলে দেন আগের ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান লোকেশ রাহুল। ২৪ বলে ৪ রান আসে তার ব্যাট থেকে।
কার্যত তখনই ইনিংস হার দেখতে থাকে ভারত। লেজের কোনো ব্যাটারও দলীয় রান একশ পার হতে আউট হয়ে যান শার্দুল ঠাকুরও। রাবাদার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। জাসপ্রিত বুমরাহ রানআউটের শিকার হন। আর মোহাম্মদ সিরাজকে তুলে নেন বার্গার।
তবে এক প্রান্ত আগলে দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন কোহলি। ৬১ বলে আদায় করে নেন ফিফটি। কিন্তু তাকে কেউ সঙ্গ দিতে পারেননি সে অর্থে। সতীর্থদের ব্যর্থতায় কিছুটা আগ্রাসী ব্যাট চালিয়ে ইনিংস ব্যবধান এড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ ব্যাটার হিসেবে ইয়ানসেনের শিকার হন তিনি। ৮২ বলে ১২টি চার ও ১টি ছক্কায় করেন ৭৬ রান।
দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ৩৩ রানের খরচায় ৪টি উইকেট নেন বার্গার। ৩৬ রানের বিনিময়ে ৩টি শিকার ইয়ানসেনের। ২টি উইকেট পান রাবাদা।
সেঞ্চুরিয়নে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার জন্য আগের দুই দিনই খেলা শুরু হয় দেরিতে। এদিন অবশ্য আকাশ সকাল থেকেই ঝকঝকে। ফলে নির্ধারিত সময়েই শুরু হয় খেলা। আগের দিনের ৫ উইকেটে ২৫৬ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে বেশ সাবধানতার সঙ্গেই ব্যাটিং করতে থাকেন দুই অপরাজিত ব্যাটার ডিন এলগার ও মার্কো ইয়ানসেন। গড়েন ১১১ রানের দারুণ একটি জুটি।
তবে এ জুটি ভাঙতে পারতো আগেই। ইয়ানসেন ফিরতে পারতেন ব্যক্তিগত ২৬ রানে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বলে তার ক্যাচ ছাড়েন লোকেশ রাহুল। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ৮৭ বলে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন ইয়ানসেন। অন্যদিকে আগের দিনের মতো সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন এলগারও। তবে ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও পারেননি। শার্দুল ঠাকুরের বলে উইকেটরক্ষক রাহুলের গ্লাভসে ধরা পড়ার আগে ১৮৫ রান করেন এই ব্যাটার। ২৮৭ বলের এই ইনিংসটি সাজান ২৮টি বাউন্ডারির সাহায্যে।
এরপর জেরাল্ড কোয়েটজি নেমে কিছুটা সঙ্গ দেন ইয়ানসেনকে। ১৮ বলে ১৯ রানের ইনিংসে একটি জীবনও পান কোয়েটজি। কাগিসো রাবাদা ১ রানের বেশি করতে পারেননি। বোল্ড হয়ে যান জাসপ্রিত বুমরাহর বলে। রানের খাতা খুলতে পারেননি নন্দ্রে বার্গার। তবে বুমরাহর বলে বোল্ড হওয়ার আগে ২০ বল মোকাবেলা করেছেন। চোট কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ফিট না হওয়ায় ব্যাটিং করতে পারেননি টেম্বা বাভুমা। ফলে সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও সঙ্গীর অভাবে অপরাজিত ৮৪ রানেই থামতে হয় ইয়ানসেনকে। ১৪৭ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় এই রান করেন তিনি।
Comments