জসওয়াল-দুবের তাণ্ডবে সিরিজ ভারতের
গুলবাদিন নাইবের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে লড়াকু পুঁজিই পেয়েছিল আফগানিস্তান। কিন্তু যশস্বী জসওয়াল ও শিভাম দুবের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেই পুঁজি হয়ে গেল মামুলী। এ দুই ব্যাটারের তাণ্ডবে সহজ জয় মিলে ভারতের। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিল রোহিত শর্মার দল।
রোববার ইন্দোরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৭২ রান করে আফগানরা। জবাবে ২৬ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙ্গর করে স্বাগতিকরা।
তবে লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। শুরুতেই খালি হাতে ফিরে একটি বিব্রতকর রেকর্ড গড়েন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। শীর্ষস্থানীয় দলগুলোর মধ্যেই তিনিই সর্বোচ্চ ১২ বার শূন্য রানে আউট হন। পেছনে ফেলে দেন বাংলাদেশের সৌম্য সরকার ও জিম্বাবুয়ের রেগিস চাকাভাকে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এ দুই ব্যাটার ১১ বার শূন্য রানে আউট হয়েছেন।
আরেক ওপেনার যশস্বী জসওয়ালকেও শুরুতে ফেরাতে পারতো আফগানিস্তান। ফজলহক ফারুকির বলে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। তবে সুযোগ লুফে নিতে পারেননি এই পেসার। আর জীবন পেয়েই ঝড় তুলতে থাকেন জসওয়াল। ঝড়ো গতিতেই দলীয় ফিফটি আদায় করে নেয় দলটি। দলীয় ৬২ রানে বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে কিছুটা স্বস্তি আনেন নাবিন উল হক। তাকে ইব্রাহীম জাদরানের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। ১৬ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ২৯ রান করেন কোহলি।
এরপর শিভাম দুবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন জসওয়াল। তৃতীয় উইকেটে ৯২ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন এ দুই ব্যাটার। এক প্রান্তে ঝড় তুলে মাত্র ২৭ বলে ফিফটি তুলে নেন জসওয়াল। এরপর মোহাম্মদ নবির করা দশম ওভারে টানা তিনটি ছক্কা মারেন তিনি। তার সঙ্গী দুবেও তাণ্ডব চালাতে থাকেন। দ্বাদশ ওভারে নাবিনের বলে ৩টি চার মারেন। সে ওভারেই স্পর্শ করে ফিফটি। মাত্র ২২ বলেই ৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেন তিনি।
এর পরের ওভারে জসওয়ালকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন করিম জানাত। উইকেটরক্ষক রহমানউল্লাহ গুরবাজের হাতে ক্যাচ দেওয়ার আগে ৩৪ বলে ৫টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৬৮ রান করেন জসওয়াল। সে ওভারে জিতেশ শর্মাকেও তুলে নেন করিম। এরপর রিঙ্কু সিংকে নিয়ে বাকি কাজ শেষ করেন দুবে। শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৬৩ রান করে অপরাজিত থাকেন এই ব্যাটার।
আফগানিস্তানের পক্ষে ১৩ রানের খরচায় ২টি উইকেট পান করিম।
এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানদের শুরুটা খারাপ হয়। বল হাতে প্রথম দুটি বল ওয়াইড করেন আর্শদিপ সিং। তৃতীয় বলে বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। পরের ওভারে মুকেশ কুমারকে একটি ছক্কাও মারেন এই ওপেনার। তবে খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পরের ওভারে বল হাতে নিয়ে গুরবাজকে শিভাম দুবের ক্যাচে পরিণত করেন রবি বিষ্ণুই। দলীয় ২০ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।
তিনে নেমে গুলবাদিন নাইব শুরু করে আগ্রাসী ঢঙেই। মুকেশের ওভারে দুটি বাউন্ডারি তুলে নেন। আর বিষ্ণুইর ওভারে দুটি চার ও একটি ছক্কায় ১৮ রান তুলে নেন এই ব্যাটার। আরেক ওপেনার ইব্রাহীম জাদরানকে নিয়ে গড়েন ৩৩ রানের জুটি। ইব্রাহীমকে বোল্ড করে এ জুটি ভাঙেন আকসার প্যাটেল। এরপর আজমতউল্লাহ ওমরজাই নেমে সুবিধা করতে পারেননি। দুবের বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন দলীয় ৬০ রানে।
এক প্রান্তে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং চালিয়ে জান গুলবাদিন। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় মাত্র ২৮ বলে ফিফটি তুলে নেন তিনি। ফিফটির পর আর একটি ছক্কা হাঁকানোর পর আকসারের বলে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিতের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন এই অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত ৩৫ বলে ৫৭ রান করেন তিনি। আর দলীয় রান একশ পেরুতেই ফিরে জান অভিজ্ঞ ব্যাটার মোহাম্মদ নবিও। বিষ্ণুইর দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি।
১০৪ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে এক প্রান্ত আগলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন নজিবউল্লাহ জাদরান। তবে ১৭তম ওভারে বিষ্ণুইর বলে চড়াও হন। সে ওভারে দুটি ছক্কা ও একটি চার মারেন তিনি। তবে পরের ওভারেই আর্শদিপের বলে বোল্ড ফিরলে শেষ হত নজিবউল্লাহর ইনিংস। ২১ বলে ২৩ রান করেন তিনি। এরপর করিম জানাত ও মুজিব উর রহমান ছোট দুটি ক্যামিও খেললে লড়াইয়ের পুঁজি পায় আফগানিস্তান। ১০ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ২০ রান করেন করিম। আর ৯ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ২১ রান করেন মুজিব।
ভারতের পক্ষে চার ওভার বল করে ৩২ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন আর্শদিপ। ২টি করে উইকেট নেন বিষ্ণুই ও আকসার।
Comments