ব্যাটারদের ব্যর্থতায় হারল বাংলাদেশ, সেমিতে পাকিস্তান

বোলার বল করলেন। ব্যাটার জায়গায় দাঁড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টা করলেন। ব্যাটে বল চুমু খেয়ে চলে গেল উইকেটরক্ষক সাদ বাইগের হাতে। বেনোনির উইলোমুর পার্কে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের চিত্র ছিল প্রায় এমনই। প্রতিষ্ঠিত পাঁচ ব্যাটার আউট হয়েছেন এভাবেই। তাতে সেমি-ফাইনালের দারুণ সম্ভাবনা জাগিয়েও বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে।

শনিবার আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সুপার সিক্সের ম্যাচে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ৫ রানে হারিয়েছে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব-১৯ দল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৪০.৪ ওভারে ১৫৫ রানে গুটিয়ে যায় তারা। জবাবে ৩৫.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৫০ রানের বেশি করতে পারেনি টাইগার যুবারা।

এদিন শুরু থেকেই যেভাবে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের পেছনে ছোটেন ব্যাটাররা, তাতে মনে হয়েছিল লক্ষ্যটা বিশাল। অথচ ৩৮.১ ওভারের মধ্যেই ১৫৬ রান করতে পারলে জয় পেত যুবা টাইগাররা। কিন্তু এমন অবস্থায় দায়িত্ব নিতে পারেননি কেউই। প্রায় সব ব্যাটারই উইকেটে সেট হয়েছিলেন। কিন্তু ইনিংস লম্বা করতে পারেননি।

তার উপর আউট হওয়ার চিত্রও ছিল প্রায় একই রকম। ওপেনিংয়ে নেমে জিশান আলম ছিলেন শুরু থেকেই আগ্রাসী। ১২ বলে ৪টি চারের সাহায্যে ১৯ রান করে বিদায় নেন উবাইদ শাহর বলে। তার অফস্টাম্পের বাইরে রাখা বলে বল ডিফেন্স করতে গেলে ব্যাটে চুমু খেয়ে চলে যায় উইকেটরক্ষক সাদ বাইগের হাতে।

আরেক ওপেনার আশিকুর রহমান শিবলি অবশ্য শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন। ব্যক্তিগত ৪ রানে আউট হন জিশানের অনুলিপি করেই। উইকেটে নেমে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন চৌধুরী মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে ২০ রানের বেশি করতে পারেননি। আলী রেজার বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন তিনি। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় যুবা টাইগাররা।

এরপর আহরার আমিনের সঙ্গে ২৯ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান আরিফুল ইসলাম। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে আহরারকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন উবাইদ। স্লিপে দারুণ ক্যাচ ধরেন হারুন আর্শাদ। জুটি ভাঙার ৭ রানের মধ্যে দুটি দুর্দান্ত ক্যাচে আরও দুটি উইকেট আদায় করে নেয় পাকিস্তানিরা। 

রাজার বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে পড়ে আরিফুলের অসাধারণ ক্যাচ লুফে নেন শামি হোসেন। আর গ্যালিতে ঝাঁপিয়ে শেখ পারভেজ জীবনের ক্যাচ ধরেন আরাফাত মিনহাজ। ফলে বড় বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। এরপর মোহাম্মদ শিহাব জেমসকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান রাব্বি। ৪০ রানের জুটিও গড়েন। কিন্তু হতাশ করেন জেমস। আউট হন সেই একই অনুলিপি করে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৬ রান করে উবাইদ শাহর পঞ্চম শিকার হন। অথচ আগের ওভারে এই বোলারের হাতে সহজ জীবন পেয়েছিলেন। কিন্তু তা কাজে লাগাতে পারেননি।

এরপর অধিনায়ক রাব্বি পরের ওভারে রাজার শিকার হলে কার্যত শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশা। শেষদিকে বর্ষণের ব্যাট কেবল হতাশাই বাড়িয়েছে বাংলাদেশের। বল হাতে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতেও দারুণ খেলেও দলকে জেতাতে পারেননি। হার না মানা ২৪ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলেও মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হয় তাদের।

পাকিস্তানের পক্ষে এদিন দুর্দান্ত বোলিং করেন উবাইদ। ১০ ওভার বল করে ৪৪ রানে ৫টি উইকেট তুলে নেন এই পেসার। আরেক পেসার আলী রাজাও ১০ ওভার বলে করে ৪৪ রান দিয়ে পান ৩টি উইকেট। একটি শিকার মোহাম্মদ জিসানের।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিল পাকিস্তান। দুই ওপেনার শ্যামল হোসেন ও শাহজিব খান গড়েন ৩৭ রানের জুটি। শ্যামলকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন বর্ষণ। দ্রুত আজান আওয়াইসকেও তুলে নেন তিনি। আর অধিনায়ক সাদ বাইগকে দারুণ এক থ্রোতে রানআউট করেন আরিফুল ইসলাম।

এক প্রান্ত আগলে রাখা ওপেনার শাহজিবকে ছাঁটাই করেন জীবন। তাতে পাকিস্তানিদের চেপে ধরে বাংলাদেশ। আহমেদ হাসানকে তুলে নিয়ে সে চাপ আরও বাড়ান বর্ষণ। এরপর জীবনের ঘূর্ণিতে হারুন আর্শাদ আউট হলে বিপদে পড়ে যায় পাকিস্তান।

তবে সপ্তম উইকেটে আলী আস্ফান্দকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন আরাফাত মিনহাজ। ৪৩ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। আস্ফান্দকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন জীবন। এরপর আর কোনো ব্যাটারই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। ১৭ রানের ব্যবধানে শেষ তিন উইকেট হারালে কোনোমতে দেড়শ রান পার করে পাকিস্তান।

Comments

The Daily Star  | English

BDR carnage rooted in 'long-term plot', says investigation commission

It was abetted by intelligence failures, gross negligence, and the involvement of several political figures, according to the commission chief

44m ago