তবুও নায়কের নাম জাকের আলী

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বাংলাদেশকে আশাটা প্রথমে দেখান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে তিনি যখন ফিরে যান লক্ষ্য তখনও বহু দূর। সেখান থেকে সঠিক পথে থাকাই তো কঠিন ছিল টাইগারদের জন্য। বাংলাদেশকে তখন নতুন করে আশা দেখান জাকের আলী। ছক্কা-চারের ফুলঝুরি ছুটিয়ে জয় প্রায় এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার অবিশ্বাস্য ইনিংসেও শেষ পর্যন্ত হার মানতেই হয় টাইগারদের।

সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০৬ রান করে সফরকারীরা। জবাবে নিজেদের নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ২০৩ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ দলে এদিন খেলারই কথা ছিল না জাকেরের। মিস্ট্রি স্পিনার আলিস আল ইসলামের ইনজুরি জায়গা করে দেয় তাকে। আর সুযোগ পেয়েই নিজের চরিত্র তুলে ধরলেন এই তরুণ। বিপিএলে ঠিক যে ছন্দে ব্যাট করেছিলেন, এদিনও সেই ছন্দেই খেললেন দারুণ সব শট। যদিও শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে তাকে। তবে হৃদয় জিতে নিয়েছেন জাকের।

এদিন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বিদায়ের পর মাঠে নামেন জাকের আলী। শুরুতে মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গ দিয়ে গেছেন। এরপর মাহমুদউল্লাহ বিদায় নিলে দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। শেখ মেহেদী হাসানের সঙ্গে গড়েন ২৭ বলে ৬৫ রানের জুটি। যেখানে ১৬ বলে ৪৩ রান করেন জাকের। শেষ পর্যন্ত দাসুন শানাকার করা শেষ ওভারে আউট হওয়ার আগে খেলেন ৬৮ রানের ইনিংস। ৩৪ বলে ৪টি চার ও ৬টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ডও গড়েন এই তরুণ।

দুইশর বেশি রান তাড়া করে জেতা বরাবরই কঠিন। তার উপর এমন লক্ষ্যে বাংলাদেশের জয়ের রেকর্ড মাত্র একটি। কাজটা তাই বেশ কঠিনই ছিল টাইগারদের জন্য। সেখানে আবার টপ অর্ডার পুরোপুরি ব্যর্থ। মূলত মাহমুদউল্লাহর ঝড়ো ফিফটিতে প্রাণ পায় বাংলাদেশ। এরপর জাকেরের দুর্দান্ত ইনিংসে স্বপ্ন দেখতে শুরু করে টাইগাররা।

তার উপর আবার এদিনই এক অর্থে অভিষেক হয় জাকেরের। যদিও এর আগে বাংলাদেশের হয়ে তিনটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু এশিয়া কাপের মঞ্চে সেবার দ্বিতীয় সারির দল পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ সহ সব দল। আর ম্যাচগুলো আইসিসি টি-টোয়েন্টির মর্যাদা দেওয়ায় তখন অভিষেক হয় তার। তবে মূল দলে তো এদিনই প্রথম খেললেন এই তরুণ।

লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটাই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। পাওয়ার প্লেতেই তিন উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই বাজে শটে উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিসের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন লিটন দাস। এরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে তৃতীয়টি মারার চেষ্টায় আকাশে তুলে ফিরে যান সৌম্য সরকারও। ১২ আসে তার ব্যাট থেকে।

বিপিএলে দারুণ ছন্দে থাকা তাওহিদ হৃদয় ছক্কা মেরে ইনিংস শুরু করেছিলেন। কিন্তু থেমেছেন ৮ রানেই। উল্টো একটি রিভিউ নষ্ট করে যান তিনি। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজের বলে খেলতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষকের হাতে গেলেও টের পাননি এই ব্যাটার।

হতাশ করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও। বিপিএলের ব্যর্থতা ধরে রাখলেন জাতীয় দলেও। ধীর গতিতে ব্যাট করা এই ব্যাটার আউট হয়েছেন মাথিশা পাথিরানার বলে পুল করতে গিয়ে। বিশাল লক্ষ্য তাড়ায় ২২ বলে খেলে ২০ রান করেছেন অধিনায়ক।

এরপর জাকের সঙ্গে মাহমুদউল্লাহর জুটিতে স্বপ্ন দেখতে থাকে বাংলাদেশ। ২৯ বলে ৪৭ রানের জুটি গড়েন তারা। দারুণ শট শট খেলে ৩১ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন মাহমুদউল্লাহ। ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। যেখানে একটি ছক্কা মেরে স্টেডিয়ামের বাইরে বল ফেলেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার।

মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর শেখ মেহেদীকে নিয়ে দলের হাল ধরেন। ১৯তম ওভারে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হন শেখ মেহেদী। ১১ বলে করেন ১৬ রান। পরে শেষ ওভারে দরকার হয় ১২ রানের। কিন্তু স্ট্রাইকে ছিলেন রিশাদ হোসেন। প্রথম বলে আউট হয়ে যান তিনি। এরপর তাসকিন নেমে জাকেরকে স্ট্রাইক দেন। কিন্তু বাউন্ডারি মারতে গিয়ে লঙ্কান অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কার তালুবন্দি হলে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের আশা। যদিও উইকেটে নেমে চার মেরে ফের আশা দেখাচ্ছিলেন শরিফুল ইসলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

আগে আগে টস জিতে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। শুরুটাও ভালো হয় তাদের। ব্যক্তিগত ৪ রানেই আভিস্কা ফার্নান্ডোকে ফেরান শরিফুল ইসলাম। তবে কামিন্ডু মেন্ডিসকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চালান আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস। ৩৩ রানের জুটিও গড়েন তারা। কামিন্ডুকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। ১৪ বলে ১৯ রান করেন কামিন্ডু।

এরপর কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে দলের হাল ধরেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তৃতীয় উইকেটে ৬১ বলে ৯৬ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে আউট হন কুশল। তবে ততক্ষণে বড় পুঁজির ভিত পেয়ে যায় দলটি। এরপর সেই ভিতে অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কাকে নিয়ে ইমারত গড়েন সামারাবিক্রমা। শেষ চার ওভারে স্কোরবোর্ডে ৬৩ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৭৩ রানের জুটি।

লেগস্পিনার রিশাদ হোসেনের বলে আউট হওয়ার আগে ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন কুশল। ৩৬ বলের ইনিংসটি সাজাতে ৬টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন এই ওপেনার। সামারাবিক্রমা অপরাজিত থাকেন দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬১ রানের ইনিংস খেলে। ৪৮ বলের ইনিংসে ৮টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন সামারাবিক্রমা। শেষদিকে ঝড় তুলে মাত্র ২১ বলে ৪৪ রানের ক্যামিও খেলেন অধিনায়ক আসালাঙ্কা। তার মারা ছয়টি বাউন্ডারিই ছিল ছক্কা।

এছাড়া অতিরিক্তর খাতে ১৯ রান খরচ করে টাইগাররা। এরচেয়ে বেশি অতিরিক্ত রান কেবল একবারই দিয়েছিল বাংলাদেশ। সেটাও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই। ২০১৩ সালে সেবার ২৬ রান।

এদিন ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা হয়তো জিতে নিয়েছেন লঙ্কান অধিনায়ক আসালাঙ্কা। দারুণ এক ক্যামিও ইনিংসের সঙ্গে তিনটি মূল্যবান ক্যাচও ধরেছিলেন। যেখানে ছিল জাকেরের ক্যাচও। তবে এতো কিছুর পরও নায়ক ওই 'অভিষিক্ত' জাকেরই।  

Comments

The Daily Star  | English
future of bangladesh after banning awami league

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

14h ago