মোস্তাফিজের রেকর্ডগড়া বোলিংয়ে বাংলাদেশের রেকর্ডগড়া জয়

আগুন ঝরানো বোলিংয়ে কাজটা সহজ করে দিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে একাই তুলে নিলেন ছয় উইকেট। তাতেই বিধ্বস্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কোনোমতে একশ পার করে দলটি। আর সাদামাটা লক্ষ্য পেয়ে জ্বলে ওঠেন দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকার। দাপুটে ব্যাটিং করে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টিতে কোনো দলকে ১০ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ।

শনিবার হিউস্টনের প্রেইরি ভিউ ক্রিকেট কমপ্লেক্সে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১০৪ রান করে স্বাগতিকরা। জবাবে ৫০ বল বাকি থাকতে জয় নিশ্চিত করে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। তবে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরাই।

উইকেটের ব্যবধানে এর আগে বাংলাদেশের সেরা জয় ছিল ৯ উইকেটের জয়। ২০১৪ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে এবং ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ জয় দুটি পায় টাইগাররা। দুটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হয়েছিল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে।

সিরিজ আগেই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এদিন প্রায় দ্বিতীয় সারির দল মাঠে নামায় যুক্তরাষ্ট্র। একাদশে চার পরিবর্তন আনে তারা। দলের নিয়মিত অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচের নায়ক হারমিত সিং ও দ্বিতীয় ম্যাচের নায়ক আলি খানকে দেওয়া হয় বিশ্রাম। তাদের সঙ্গে দলের সেরা অলরাউন্ডার স্টিভেন টেইলরকে বিশ্রাম দেয় দলটি।

বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ছয় উইকেট পেলেন মোস্তাফিজ। তার ১০ রানে ৬ উইকেট এই সংস্করণে বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগারও। মূলত জয়ের ভিতটা গড়ে দেন এই পেসারই। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১২ সালে বাঁহাতি স্পিনার ইলিয়াস সানির ১৩ রানের বিনিময়ে পাওয়া ৫ উইকেট ছিল আগের সেরা বোলিং।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দেন দুই ওপেনার তানজিদ ও সৌম্য। অবিচ্ছিন্ন ১০৮ রানের জুটি গড়েই মাঠ ছাড়েন এ দুই ব্যাটার। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ হার না মানা ৫৮ রানের ইনিংস খেলেন তানজিদ। ৪২ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ২৮ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন সৌম্য। 

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই ওপেনার শায়ান জাহাঙ্গীর ও আন্দ্রেয়াস গাউসের জুটিতে ভালো সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। ৪৬ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। এ জুটি ভাঙেন সাকিব আল হাসান। সৌম্য সরকারের তালুবন্দি করে ফেরান গাউসকে। তাতে ইতিহাসের পাতায়ও নাম উঠে যায় সাকিবের। প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৭০০ উইকেট নেন এই অলরাউন্ডার। সবমিলিয়ে সাড়া বিশ্বে এই কীর্তি গড়তে পেরেছেন মাত্র ১৭ জন বোলার।

এরপর শুরু হয় মোস্তাফিজের জাদু। জাহাঙ্গীরকে ফিরিয়ে শুরু করেন। এরপর নিতিশ কুমারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে দারুণভাবে ম্যাচে ফেরান তিনি। তার সঙ্গে জ্বলে ওঠেন বাকি বোলাররাও। অধিনায়ক অ্যারন জোন্সকে ছাঁটাই করেন তানজিম হাসান সাকিব। আর মিলিন্দ কুমারের উইকেট তুলে নেন রিশাদ হোসেন। ফলে দলীয় পুঁজি ৬০ রান হতেই পাঁচ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা।

এরপর শ্যাডলি ভ্যান শাল্কউইককে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন কোরি অ্যান্ডারসন। ৩২ রানের জুটিও গড়েন এ দুই ব্যাটার। তাতে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল স্বাগতিকরা। ১৮তম ওভারে বল করতে এসে এ দুই ব্যাটারকেই ফেরান মোস্তাফিজ। দুইজনকেই বোল্ড করে দেন তিনি। শেষ ওভারে জাসদিপ সিংকে বোল্ড করে নিজের ফাইফার পূরণ করেন কাটার মাস্টার। পরে নিসর্গ প্যাটেলকেও তুলে নেন নিজের ষষ্ঠ উইকেট।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন গাউস। ১৫ বলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় এই রান করেন তিনি। এছাড়া জাহাঙ্গীর ১৮, অ্যান্ডারসন ১৮ ও শাল্কউইক ১২ রান করেন। স্বাগতিকদের হয়ে এই চার ব্যাটারই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পেরেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Tariffs

Economic lessons from the tariff war

Our understanding of tariffs might not be complete.

9h ago