প্রথম ইনিংসে ১২ রান পিছিয়ে বাংলাদেশ
ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে চোয়ালবদ্ধ মানসিকতায় দারুণ সবে শটে লড়ে যাচ্ছিলেন লিটন দাস। বাংলাদেশ যখন লিড নেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে তখনই করে ফেললেন ভুলটি। আগা সালমানকে তুলে মারতে গিয়ে সীমানায় ক্যাচ তুলে বিদায় নেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। এরপর বাংলাদেশ আর টিকতে পেরেছে কেবল দুই বল।
রোববার রাওয়ালপিন্ডিতে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ সেশনে এসে ২৬২ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ফলে প্রথম ইনিংসে ১২ রানে পিছিয়ে আছে টাইগাররা। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৭৪ রান করেছিল পাকিস্তান।
মাত্র ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর মেহেদী হাসান মিরাজকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন লিটন। এ দুই ব্যাটার গড়েন ১৬৫ রানের রেকর্ড জুটি। মিরাজ বিদায় নিলে লেজের ব্যাটার হাসান মাহমুদকে নিয়ে আরও ৭১ রানের আরও একটি দারুণ জুটি গড়েন লিটন। কিন্তু লিটনের বিদায়ে এ জুটি ভাঙলে স্কোরবোর্ডে আর কোনো রানই যোগ হয়নি।
মিরাজের বিদায়ের পর মূলত এক প্রান্ত আগলে রান বাড়ানোর দিকেই নজর ছিল লিটনের। দারুণ সব শটে করছিলেনও দারুণ। কিন্তু সালমানের বলে লংঅন সীমানায় সাইম আইয়ুবের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। ১৩৮ রানে থামেন এই ব্যাটার। ২২৮ বলে নিজের ইনিংস সাজান ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায়। মাঠ ছাড়ার সময় দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানানো হল লিটনকে।
এর আগে ২০২২ সালের মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শেষবার সেঞ্চুরি করেছিলেন লিটন। অর্থাৎ ২৭ মাসের বেশি সময় পর সেঞ্চুরির স্বাদ নিলেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। মাঝে ১৮ ইনিংসে পাঁচবার ফিফটি করলেও শতক ছুঁতে পারেননি। পাকিস্তানের বিপক্ষে একাধিক সেঞ্চুরি করা বাংলাদেশি ব্যাটারও লিটন।
মিরাজের সঙ্গে এদিন সপ্তম উইকেট জুটিতে ১৬৫ রান করেন লিটন। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে পঞ্চাশের নিচে ৬ উইকেট পড়ার পর এই প্রথম কোনো জুটির রান ছাড়াল দেড়শ। আগের কীর্তিতেও জড়িয়ে ছিল পাকিস্তানের নাম। ২০০৬ সালে করাচি টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৩৯ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রানের জুটি গড়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক ও কামরান আকমল।
মিরাজকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন খুররম শাহজাদ। তার টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের ফাইফারে শেষ হয় মিরাজের ৭৮ রানের ঝলমলে ইনিংস। ফিরতি ক্যাচে তাকে বিদায় করেন খুররম। ১২৪ বল মোকাবিলায় ১২ চার ও ১ ছক্কায় ইনিংস সাজান মিরাজ। টেস্টে সবশেষ তিন ইনিংসেই পেলেন ফিফটি।
এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তাসকিন। খুররমের ষষ্ঠ শিকার হয়ে বিদায় নেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ে। চা-বিরতির পর হাসানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন লিটন। ৭১ রানের জুটি গড়েন। এরপর লিটন আউট হলেও অপরাজিত থাকেন হাসান। অপর প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখেন শেষ ব্যাটার নাহিদ রানার বিদায়। এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন নাহিদ। রিভিউ নিয়ে বাঁচেননি আম্পায়ার্স কলের কারণে। ৫১ বলে ১৩ রান করে অপরাজিত থাকেন হাসান।
এর আগে দিনের শুরুটা ছিল ভয়াবহ। শুরু থেকেই দারুণ বোলিং করেন পাকিস্তানের দুই পেসার খুররম শেহজাদ ও মীর হামজা। রাউন্ড দা উইকেট বোলিং করে অ্যাঙ্গেল কাজে লাগান দারুণ দক্ষতায়। তার সঙ্গে ব্যাটারদের হেয়ালি শট। ফলে ২৬ রানেই শীর্ষ ছয় ব্যাটারকে হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তখন মনে হয়েছিল পঞ্চাশ পূরণ করাও কষ্ট হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
অথচ শুরুতেই হামজার বলে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যান জাকির। এলবিডব্লিউ থেকেও রক্ষা পান আম্পায়ারের ভুলে। কিন্তু জীবন পেয়েও কোনো রান যোগ করতে পারেননি। খুররমের বলে দেন সহজ ক্যাচ। অ্যাঙ্গেল তৈরি করেই সাদমানকে করেন বোল্ড। একইভাবে ছাঁটাই করেন অধিনায়ক শান্তকেও।
হামজার বেড়িয়ে যাওয়া স্লোয়ার ডেলিভারিতে বোকা বনে গিয়ে শার্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন মুমিনুল হক। আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান মুশফিকুর রহিমও আউট হয়েছেন হামজার বেরিয়ে যাওয়া বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। আর খুররমের এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাকিব।
Comments