দিনশেষে অশ্বিন-জাদেজায় ম্লান হাসানের শুরুর ঝলক

ছবি: ওয়ালটন

দিনের শুরুতে পেসার হাসান মাহমুদ এলোমেলো করে দিলেন ভারতের টপ অর্ডারকে। তার নেতৃত্বে দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলল বাংলাদেশের বোলারদের দাপট। সেই ঝলক দিনশেষে ম্লান হয়ে গেল রবীন্দ্র জাদেজার ফিফটি ও রবিচন্দ্রন অশ্বিনের সেঞ্চুরির সমন্বয়ে বিশাল জুটিতে। ফলে কোণঠাসা অবস্থান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বড় পুঁজির পথে রয়েছে স্বাগতিকরা।

বৃহস্পতিবার চেন্নাইতে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে টস জিতে বোলিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে মাঝে ভীষণ বিপদে পড়লেও তা কাটিয়ে উঠেছে ভারত। তারা দিন শেষ করেছে ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান তুলে। তাদের রান রেট ৪.২৩।

২২৭ বলে ১৯৫ রানের অবিচ্ছিন্ন সপ্তম উইকেট জুটিতে শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে ভারত। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আটে নামা অশ্বিন খেলছেন ১০২ রানে। ১১২ বল খেলে ১০ চার ও ২ ছক্কা মেরেছেন তিনি। সাতে নামা জাদেজা সেঞ্চুরির সুবাস নিয়ে আছেন ৮৬ রানে। ১১৭ বল মোকাবিলায় তার ব্যাট থেকেও এসেছে ১০ চার ও ২ ছক্কা। দিনে বাংলাদেশের সফলতম বোলার হাসানের শিকার ৫৮ রানে ৪ উইকেট।

ছবি: ওয়ালটন

নতুন বল হাতে নিয়ে শুরুতেই ব্যাটারদের কঠিন পরীক্ষা নিতে থাকেন হাসান। ছোট ছোট সুইংয়ে বল ভেতরে ঢুকিয়ে ব্যাটারদের বেকায়দায় ফেলতে থাকেন তিনি। রোহিত শর্মা তার বলে একবার এলবিডব্লিউর হাত থেকে আম্পায়ার্স কলে বেঁচে গেলেও থিতু হতে পারেননি। অ্যাঙ্গেলে পরাস্ত করে ভারতের অধিনায়ককে স্লিপে ক্যাচ বানান হাসান। ১৯ বলে ৬ রান করে ফেরেন তিনি।

তিনে নামা শুবমান গিল রানের খাতাই খুলতে পারেননি। তিনি অবশ্য ফেরেন আলগা শট খেলে। হাসানের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের গ্লাভসে জমা পড়েন ৮ বল খেলা গিল।

দ্রুত ২ উইকেট হারানোর পরিস্থিতিতে দলকে ভরসা দিতে পারেননি বিরাট কোহলি। ভারতের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটার হাসানের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে জমা পড়েন লিটনের গ্লাভসে। দশম ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত। নিজের টানা তিন ওভারে উইকেট নেওয়ার উল্লাসে মাতেন হাসান।

এরপর দুই বাঁহাতি যশস্বী জয়সওয়াল ও ২০২২ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথম টেস্ট খেলতে নামা রিশভ পান্ত মিলে প্রতিরোধ। বিশেষ করে, ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা থেকে সেরে ওঠা পান্ত খেলতে থাকেন চেনা ঢঙে। জমে ওঠে জুটি। ৩ উইকেটে ৮৮ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় ভারত।

চতুর্থ উইকেট জুটিতে আসে ৯৯ বলে ৬২ রান। জুটি আলগা করেন হাসানই। মধ্যাহ্ন বিরতির পর পান্ত-জয়সওয়ালের জুটি আর বেশি আগায়নি। থিতু থাকা পান্ত অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে দেন লিটনের হাতে ক্যাচ। ৫২ বলে ৬ চারে ৩৯ করে ফেরেন তিনি।

তরুণ জয়সওয়াল দলের হাল ধরে রেখেছিলেন। রয়েসয়ে খেলে তুলে নেন ফিফটি, ৯৫ বলে। এই ব্যাটারকে গতিতে পরাস্ত করেন পেসার নাহিদ রানা। ঘন্টায় দেড়শো কিলোমিটারের কাছাকাছি গতিতে বল করে নাড়িয়ে দেন জয়সওয়ালকে। গতির সঙ্গে বাড়তি বাউন্স আদায় করে স্লিপে ক্যাচ বানান ৫৬ করা ওপেনারকে। ১১৮ বল মোকাবিলায় ৯ চার মারেন তিনি।

৯৮ বলে ৪৮ রানের জুটি ভাঙার পরের ওভারেই আরেক ধাক্কা খায় ভারত। স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ধুঁকতে থাকা লোকেশ রাহুল। ৫২ বলে তিনি করেন ১৬ রান। ১৪৪ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ভারত হয়ে পড়ে দিশেহারা।

ওই অবস্থায় অশ্বিন ক্রিজে গিয়েই হাত খুলে খেলতে থাকেন। বাংলাদেশের ক্লান্ত বোলারদের চেপে বসতে না দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেন তিনি। তরতর করে বাড়তে থাকে রান। ১৭৬ রান নিয়ে চা বিরতিতে থেকে ফিরে অশ্বিন ও জাদেজার কাঁধে ভর দিয়ে শেষ সেশনে বিনা উইকেটে ১৬৩ রান আনে ভারত। এই সময়ে ৩২ ওভারে গড়ে ৫.০৯ গড়ে ওঠে রান।

অশ্বিনই আগে স্পর্শ করেন ফিফটি, ৫৮ বলে। জাদেজা হাফসেঞ্চুরিতে যান ৭৩ বলে। বাংলাদেশকে হতাশ করে তাদের জুটি শতরানে পৌঁছায় ১১৪ বলে। টেস্টে সপ্তম উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের আগের সর্বোচ্চ ছিল ১২১। ২০০০ সালে সৌরভ গাঙ্গুলি ও সুনিল যোশির গড়া সেই জুটি পেরিয়ে যান অশ্বিন ও জাদেজা। দিনের দুই ওভার বাকি থাকতে মাত্র ১০৮ বলে অশ্বিন পূরণ করেন সেঞ্চুরি।

সারাদিন বাংলাদেশের ওভার রেট ছিল খুবই ধীরগতির। প্রথম দুই সেশনে মোট বোলিং হয় মাত্র ৪৮ ওভার। আধা ঘণ্টা সময় বাড়িয়েও দিনশেষে ১০ ওভারের ঘাটতি থেকে যায়। আর হাসান ছাড়া বাংলাদেশের বাকি বোলাররা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। সাকিব আল হাসান আক্রমণে আসেন ৫৩তম ওভারে। তার বোলিংয়ে ছিল না চেনা ধার।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank signals market-based exchange rate regime

The central bank will allow the exchange rate of the dollar to be determined by market forces

41m ago