বাঁহাতি স্পিন নিয়ে পরীক্ষার ফল বের হবে কবে?
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব আল হাসান অধ্যায়ের সমাপ্তি হয়ে গেছে হয়তো। তা যদি না-ও হয়, ফিনিশিং লাইন দূরে নয়। বাঁহাতি স্পিনে দীর্ঘদিন বাংলাদেশের মুখ হয়েই ছিলেন সাকিব। নতুন বাস্তবতায় টাইগারদের ওয়ানডে দলে এই ভূমিকায় তার জায়গা নেবেন কে?
আদতে প্রশ্নটি হওয়া উচিত- তাইজুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদের মধ্যে কে? সাকিবকে বাদ দিলে, শেষ পাঁচ বছরে ওয়ানডেতে এই দুজনের বাইরে আর কোনো বাঁহাতি স্পিনারকে নিয়েই তো মাঠে নামেনি বাংলাদেশ।
২০১৯ সাল থেকে চলমান আফগানিস্তানের সিরিজের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে ৮৩টি। এর মধ্যে ৬৯ ম্যাচে অন্তত একজন বাঁহাতি স্পিনার ছিলেন টাইগারদের একাদশে। অবশ্য সাকিবই একমাত্র বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে ৩৯ ম্যাচ খেলেছেন। আর সাকিবের সঙ্গে কিংবা সাকিব ছাড়া অন্য কেউ- এভাবে বাংলাদেশ বাঁহাতি স্পিনার খেলিয়েছে বাকি ৩০টি ওয়ানডেতে।
সেগুলোতে মূলত তাইজুল ও নাসুম মিউজিক্যাল চেয়ার খেলায় অংশ নিয়েছেন। এক সিরিজে নাসুম, তো অন্য সিরিজে তাইজুল। ২০২২ সালে অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নাসুমের ওয়ানডে অভিষেকের সিরিজে তাইজুলও ছিলেন স্কোয়াডে। অনুপস্থিত ছিলেন সাকিব।
এরপর বাংলাদেশ খেলেছে মোট ১১টি ওয়ানডে সিরিজ (বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপসহ)। একটি বাদে সব সিরিজেই নাসুম ও তাইজুলের মধ্যে একজনকে ম্যাচ খেলিয়েছে বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্ট। পাঁচটি সিরিজে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন নাসুম, বাকি পাঁচটিতে তাইজুল।
তাইজুল ও নাসুমের আসা-যাওয়ার খেলা শুরুটা হয় সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে জুটির আমলে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অভিষেক সিরিজে নাসুম ১৪.৮০ গড়ে তিন ম্যাচে ৫ উইকেট নিলেও পরের সিরিজে খেলতে পারেননি কোনো ম্যাচ। অন্যদিকে, ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জে একটি ম্যাচে ২৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুটি ম্যাচে মাঠে নামার সুযোগ হয় তাইজুলের। সেখানে ২৭.৩৩ গড়ে ৩ উইকেট নিলেও পরবর্তী সিরিজের স্কোয়াড থেকেই বাদ পড়ে যান তিনি।
ভারতের বিপক্ষে সাকিবের ফেরার সিরিজে নাসুম এক ম্যাচ খেলে ৫৪ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য। স্কোয়াড থেকে তার বিদায়ের পালা এরপর চলে আসে ২০২৩ সালের ইংল্যান্ড সিরিজে। ইংলিশদের বিপক্ষে তিন ম্যাচে ২৭.৩৩ গড়ে তাইজুল নেন ৬ উইকেট। সেসময় তাইজুল ও নাসুমের এই অদল-বদল নিয়ে তৎকালীন প্রধান কোচ হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, তারা দুই স্পিনারকেই প্রস্তুত রাখতে চান। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে দুজনের অভিজ্ঞতার ঝুলি যত সমৃদ্ধ রাখা যায়, সে চিন্তাধারায় সিরিজ বণ্টন করে তাদের খেলানোর পরিকল্পনা।
কিন্তু সাকিব থাকাকালীন সময়ে তৃতীয় একজন বাঁহাতি স্পিনারকে প্রস্তুত করার প্রয়োজনীয়তা ছিল কতটুকু? যথেষ্ট আস্থার অভাব, দুই স্পিনারকে কি এই বার্তাই দেয় না এমন অদল-বদল? যেন তারা কোনো পরীক্ষায় বসেছেন!
ইংল্যান্ড সিরিজের পর বাংলাদেশ টানা দুটি ওয়ানডে সিরিজ খেলে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। সাকিবের সঙ্গে একটিতে থাকেন তাইজুল, অন্যটিতে নাসুম। প্রথমে ঘরের মাঠে নাসুম দুই ইনিংসে বিশের কম গড়ে বোলিং করে ৩ উইকেট পান। সফরে গিয়ে আইরিশদের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ৩২ গড়ে ১ উইকেট নেন তাইজুল।
এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে চট্টগ্রামে এক ম্যাচে ৩৩ রানে তাইজুল শিকার করেন ২ উইকেট। সেই সিরিজ চলাকালীন দৃশ্যপট পাল্টে যায় আচমকা। তামিমের অবসর-কাণ্ডে নেতৃত্ব চলে যায় সাকিবের হাতে। এরপর ২০২৩ সালে এশিয়া কাপ, নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও সবশেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকেন তাইজুল।
ওই সময়ে এশিয়া কাপে দুই ম্যাচ খেলে উইকেটশূন্য থাকেন নাসুম। মিরপুরে কিউইদের বিপক্ষে ২৮.৭৫ গড়ে ৪ উইকেট নিলেও বিশ্বকাপে একটি উইকেটও পাননি। ভারতে তিন ম্যাচে ৭.০২ ইকোনমিতে বোলিং করা নাসুম বাদ পড়ে যান বিশ্বকাপের পরই।
চলতি বছর শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে তাইজুল ফেরেন নাজমুল হাসান শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দলে। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৭.৪৬ ইকোনমিতে বল করে দুই ম্যাচে ১ উইকেট পাওয়া এই স্পিনারের জায়গায় এখন আফগানিস্তান সিরিজের স্কোয়াডে আছেন নাসুম।
কিন্তু ৪৫.৮৩ গড়ে ওয়ানডেতে বোলিং করা নাসুমের উপর কতদিন ভরসা রাখবেন নির্বাচকরা? বিশেষ করে, ব্যাটিং সহায়ক পিচে তার নির্বিষ বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকার কথা বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে তিনি উইকেট পেয়েছেন মোটে ১২টি। বিপরীতে, পরিসংখ্যান রেকর্ড পক্ষে রয়েছে তাইজুলের। তিনি ২০ ম্যাচে ২৫.৯৬ গড়ে বোলিং করে নিয়েছেন ৩১ উইকেট।
স্পিনবান্ধব উইকেট হলে কার্যকরী বাঁহাতি স্পিনার খুঁজে পেতে হয়রান হতে হবে না বাংলাদেশকে। কিন্তু বাঁহাতি স্পিনারে ভরপুর এদেশের একজন উচ্চমানের বোলার প্রয়োজন, যিনি কিনা বিরুদ্ধ কন্ডিশনেও জেগে উঠতে পারেন।
সাকিবের বিদায়বেলায় বাঁহাতি স্পিনে ভরসা করার মতো একটি কাঁধ খুঁজে নেওয়ার সময় এসে গেছে। তাইজুল নয়তো নাসুম- তিনজন আলাদা অধিনায়ক ও দুটি আলাদা নির্বাচক প্যানেলের অধীনে চলা এই অদল-বদলের সমাপ্তিরেখা টানা তাই জরুরি। বাদ পড়লেও দলের ভাবনায় রয়েছেন, যতই এমন বার্তা দেওয়া হোক, যেকোনো ক্রিকেটারের চাওয়া থাকবে লম্বা সময়ের জন্য সুযোগ। পরীক্ষার হলে বসা তাইজুল ও নাসুম সেই দাবি তুলতেই পারেন!
এখন প্রশ্ন হলো, বাঁহাতি স্পিন নিয়ে এই পরীক্ষার ফল বের হবে কবে?
Comments