এবার নিউজিল্যান্ডের কাছে ১১৫ রানে হারল পাকিস্তান

আগের ম্যাচের রেকর্ড গড়া জয়ে সিরিজে টিকে থাকার আশা জাগিয়েছিল পাকিস্তান। তবে পরের ম্যাচেই আবার ফিরেছে পুরনো রূপে। নিউজিল্যান্ডের পেসারদের তোপে এবার লড়াইটাও করতে পারেনি সফরকারীরা। তাদের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজ নিশ্চিত করেছে কিউইরা। শেষ ম্যাচটি এখন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।

রোববার মাউন্ট মাঙ্গানুইয়ে সিরিজের চতুর্থ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে পাকিস্তানকে ১১৫ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাটিং করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ২২০ রানের বিশাল পুঁজি গড়ে তারা। জবাব দিতে নেমে ১৬.২ ওভারে মাত্র ১০৫ রান করে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। এই জয়ের ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ নিশ্চিত করল কিউইরা।

মূলত নিউজিল্যান্ডের পেসারদের তোপেই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন আপ। চার পেসার মিলে ৯টি উইকেট দখল করেন। জ্যাকব ডাফি পাওয়ারপ্লেতেই তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন, এবং সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি সফরকারীরা।

এদিন টস জিতে ব্যাটিং নিয়ে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলেছে নিউজিল্যান্ড। ফিন অ্যালেন মাত্র ২০ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন, আর টিম সেইফার্ট ও মাইকেল ব্রেসওয়েলের ক্যামিও ইনিংসে স্বাগতিকরা ৬ উইকেটে ২২০ রান সংগ্রহ করে। পাওয়ারপ্লেতেই এক উইকেটে ৭৯ রান তুলে নেয়, যদিও মাঝের ওভারগুলোতে কিছুটা ধীরগতির ব্যাটিং দেখা যায়। তবে শেষদিকে আবার রানবন্যা বইয়ে দিয়ে টানা দ্বিতীয়বার দুইশর বেশি সংগ্রহ করে কিউইরা, যা পাকিস্তানের জন্য অনেক কঠিন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।

জয়ের জন্য ২২১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে পাকিস্তান সুইং ও সিমিং কন্ডিশনে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়ে। অকল্যান্ডের মতো এবার তারা শিশিরের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেনি। ইনিংসের প্রথম ওভারেই মোহাম্মদ হারিসকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন উইল ও'রউরকে। এরপর ডাফি দ্বিতীয় ওভারেই হাসান নাওয়াজ ও অধিনায়ক সালমান আগাকে ফিরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপে বড় ধাক্কা দেন। এরপর দলে নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া জাকারি ফোল্কসও প্রথম বলেই শাদাব খানকে ইনসুইংয়ে বোল্ড করে দেন।

পাকিস্তান মাত্র ৫৬ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে, ফলে ম্যাচের ভাগ্য তখনই প্রায় নির্ধারিত হয়ে যায়। যদিও সাত নম্বরে নামা আবদুল সামাদ ৩০ বলে ৪৪ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন, তবে সেটা ছিল স্রেফ পরাজয়ের ব্যবধান কমানোর চেষ্টা।

ডাফি শেষ ওভারে ফিরে এসে আরেকটি উইকেট নেন, ২০ রানের খরচায় চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ শেষ করেন। ফোল্কসও তিন উইকেট দখল করেন।

নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই টিম সেইফার্ট আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। দ্বিতীয় বলেই শাহীন আফ্রিদিকে চার মারেন, পরের ওভারে খুশদিল শাহকে ছক্কা হাঁকান। এরপর আবরার আহমেদের করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে টানা ছ৬, ৪, ৬ হাঁকিয়ে ১৯ রান তোলেন। ফলে মাত্র ৩.৫ ওভারেই ৫০ রান পূর্ণ করে কিউইরা। তবে এরপর কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলে পাকিস্তান—পঞ্চম ওভারে সেইফার্টকে ফিরিয়ে দেন হারিস রউফ। ২২ বলে ৪৪ রান করে খুশদিল শাহর হাতে ক্যাচ দেন এই ওপেনার।

ফিন অ্যালেন শুরুতে ধীরে খেললেও পরে মারমুখী হয়ে ওঠেন। আবরারের দ্বিতীয় ওভারেও ১৬ রান নিয়ে তার ওপর চাপ বাড়ান। এরপর শাদাব খানের এক ওভারে দুটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে মাত্র ১৯ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তবে পরের বলেই আব্বাস আফ্রিদির বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন।

একপর্যায়ে নিউজিল্যান্ড দুই উইকেটে ১৩৪ থেকে পাঁচ উইকেটে ১৪৯ রানে নেমে যায়, কারণ পাকিস্তান টানা পাঁচ ওভার বাউন্ডারিহীন রেখে কিউইদের কিছুটা চাপে ফেলে দেয়। তবে শেষ পাঁচ ওভারে নিউজিল্যান্ড আবার আগ্রাসী ব্যাটিং করে ৬৩ রান তোলে। ড্যারিল মিচেল ধীরগতিতে শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ২৩ বলে ২৯ রান করেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ব্রেসওয়েলের ২৬ বলে ৪৬ রানের ক্যামিও, যেখানে তিনি পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কা হাঁকান। এর মধ্যে শাহীন আফ্রিদির এক ওভারে ৯৭ মিটার লম্বা ছক্কাও ছিল।

পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে কেবল হারিস রউফ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেছেন, ৪ ওভারে ২৭ রানের খরচায় নেন ৩টি উইকেট। বাকিদের মধ্যে কেউই ওভার প্রতি ১০ রানের কম ইকোনমিতে বল করতে পারেননি, যা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং দাপটেরই প্রমাণ।

Comments

The Daily Star  | English

'Election Commission shamelessly favouring a particular party'

Hasnat Abdullah says police obstructed NCP leaders and activists from entering EC building

59m ago