ফাহিম স্যারের অধীনে খেলার সংখ্যা বাড়ার বদলে কমেছে: রুমানা

গত বছরের এশিয়া কাপে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লেও সাবেক বাংলাদেশ অধিনায়ক রুমানা আহমেদের কণ্ঠস্বর অনলাইনে আরও জোরালো হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ৩৪ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার ঘরোয়া ক্রিকেটের সুযোগ কমে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে তার আশঙ্কার কথা জানান। কথোপকথনের কিছু অংশ নিচে তুলে ধরা হলো:
আপনি বেশ কিছুদিন ধরে নারী ক্রিকেট নিয়ে সরব। এর কারণ কী?
রুমানা আহমেদ: আমি হতাশ হয়েছি এটা দেখে যে আমাদের সঙ্গে সবসময় ভিন্ন আচরণ করা হয়, এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদের মেয়েদের নিয়ে খুব একটা ভাবে না।
নারী বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (ডব্লিউবিপিএল) হচ্ছে না, ঘরোয়া ক্রিকেটের সুযোগ কমছে, এবং আসন্ন বিশ্বকাপের আগে কোনো প্রস্তুতি নেই। বর্তমান পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
রুমানা: ডব্লিউবিপিএল কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতি বছর তারা পরের বছর থেকে আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর আলোচনা সেখানেই শেষ হয়ে যায়। বোর্ড নারী দলকে বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য একটি আদর্শ পরিস্থিতি দিতেও ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া খেলোয়াড়দের যাচাই করার জন্য বছরে মাত্র একটি টুর্নামেন্ট [নারী ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ] আছে, এবং খেলোয়াড় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। সত্যি বলতে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটারদের মূল্য কী, তা আমি বুঝতে ব্যর্থ।
বোর্ড কি পাইপলাইনকে অবহেলা করে শুধু ১৮-২০ জন খেলোয়াড়ের উপর নির্ভর করছে?
রুমানা: পুরুষ দল বিভিন্ন সাপোর্ট স্কোয়াডের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ভূমিকা থেকে উপকৃত হয়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে, নারী ক্রিকেটের জন্য এমন কিছুই নেই।
নাজমুল আবেদিন ফাহিম নারী বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর তার কাজকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
রুমানা: তার কাছেও আমাদের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু আমি দেখেছি তার মেয়াদে খেলার সংখ্যা বাড়ার পরিবর্তে কমেছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার আগে আমরা এনসিএল [জাতীয় ক্রিকেট লিগ] এবং বিসিএল [বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ] খেলতাম। এ বছর বিসিএলে মোট তিনটি ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু দুটি খেলার পরই টুর্নামেন্ট শেষ হয়ে যায়। তারা পরে ম্যাচটি আয়োজনের পরিকল্পনা করলেও তা আর হয়নি। এ বছর শুধু প্রিমিয়ার লিগই একমাত্র ঘরোয়া টুর্নামেন্ট হিসেবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা শুধু ২০-২৫ জন ক্রিকেটার নিয়ে কাজ করছে, তাহলে পাইপলাইন কীভাবে তৈরি হবে?
রুপালী ব্যাংকের মতো একটি বড় দল এ বছরের ডব্লিউডিপিএল থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। এটি কি খেলোয়াড়দের আর্থিক ক্ষতি করেছে?
রুমানা: আমাদের নারী খেলোয়াড়রা এই একটি টুর্নামেন্ট থেকে কিছু টাকা আয় করেন। কিন্তু এ বছর খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক অনেক কমে গেছে। দলগুলো সময়মতো টাকা দেয়নি, যেখানে পারিশ্রমিকের পরিমাণও খুবই কম। ভালো দলগুলো এখন এখানে আসতে চায় না, কারণ নারী ক্রিকেটে কোনো কাউন্সিলরশিপ নেই।
নারী ক্রিকেটের জন্য কী জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?
রুমানা: আমি মনে করি নারী নির্বাচন প্যানেলের উন্নতি করা উচিত। এখন মাত্র একজন নির্বাচক আছেন, এবং সবকিছু তার নির্দেশেই চলছে। ঘরোয়া টুর্নামেন্টের সংখ্যা বাড়ানো উচিত। আমি বাংলাদেশের হয়ে অনেক ক্রিকেট খেলেছি, কিন্তু এখন জাতীয় দলে তো দূরের কথা, ঘরোয়া ক্রিকেটেও খেলার সুযোগ পাচ্ছি না। তাহলে আমি নিজেকে কোথায় দেখাব এবং জাতীয় দলের জন্য নিজেকে প্রমাণ করব?
বিসিবি কি আপনাকে, সালমা খাতুন এবং জাহানারা আলমকে অবসরের পর কোনো ভূমিকাতে আসার প্রস্তাব দিয়েছে?
রুমানা: আমি এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রস্তাব পাইনি... আমরা এখনও কঠোর পরিশ্রম করছি, এবং দেশের নারী ক্রিকেটের জন্য আমরা অনেক কিছু করেছি। আসলে এখন আমাদের অভিভাবক কে, তা আমি জানি না।
খবরে বলা হয়েছে যে সাবেক কোচ হাসান তিলকরত্নে সিনিয়র খেলোয়াড়দের চাননি। এটা কি সত্যি?
রুমানা: তিনি দলে অনেক বৈষম্য করতেন, সিনিয়র-জুনিয়র বিভাজন তৈরি করেছিলেন... তার পছন্দের পাঁচ-ছয়জন খেলোয়াড়ের একটি গ্রুপ ছিল, এবং তিনি সবসময় তাদের সঙ্গেই পরিকল্পনা করতেন। কম স্ট্রাইক-রেটে রান করার জন্য তিনি কখনো [ফারজানা হক] পিঙ্কিকে প্রশ্ন করেননি। কিন্তু একই সময়ে তিনি অন্য কাউকে শুরু থেকেই মারার কথা বলতেন।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
রুমানা: আমি কী ভাবব? যদি তারা আমার পারফরম্যান্স বা ফিটনেস সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা না দেয় — যা আমি প্রমাণ করতে প্রস্তুত — তাহলে আমার কী করা উচিত?
Comments