বাংলাদেশের হয়ে যত বেশি সম্ভব ‘ক্লিন শিট’ রাখতে চান মিতুল

mitul marma

ফেডারেশন কাপ এবং বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ২১ ম্যাচের মধ্যে ১৫টিতে কোনো গোল হজম না করে এই মৌসুমে আবাহনীর গোলরক্ষক মিতুল মারমা ছিলেন সেরা পারফর্মার। মিতুল এই মৌসুমে মাত্র আটটি গোল হজম করেছেন।  আজ ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিপক্ষে বিপিএলের একটি ম্যাচে মৌসুমের শেষ ম্যাচ খেলবেন। এরপর আগামী মাসে সিঙ্গাপুরের ম্যাচের জন্য জাতীয় দলের প্রস্তুতিতে যোগ দেবেন। দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ২১ বছর বয়সী এই গোলরক্ষক তার পারফরম্যান্স, উন্নতি, ঘরোয়া লিগ এবং জাতীয় ফুটবল দল নিয়ে কথা বলেছেন।

এই মৌসুমে আপনার সাফল্যের পেছনে মূলমন্ত্র কী ছিল?

মিতুল মার্মা: আমার পারফরম্যান্সের উন্নতি জাতীয় ফুটবল দলের সঙ্গেও সম্পৃক্ত, যেখানে আমাদের লক্ষ্য থাকে ক্লিন শিট রাখা। এটা অর্জন করতে হলে আমাকে ক্লাব পর্যায়ে ভালো খেলতে হবে। যখন আমি আবাহনীতে যোগ দিয়েছিলাম, তখন আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম যেনো সর্বনিম্ন গোল হজম করি। কারণ আবাহনী প্রাথমিকভাবে যে স্কোয়াড চেয়েছিল দুর্ভাগ্যবশত তা গঠন করতে পারেনি। তাই আমরা স্থানীয় খেলোয়াড়রা নিজেদের সেরাটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন দলের মতো মৌসুম শুরু করার অঙ্গীকার করেছিলাম। আমার মনে হয়, আমরা অন্য দলগুলোর চেয়ে বেশি কঠোর অনুশীলনও করেছি।

এতগুলো ক্লিন শিট রাখতে পেরে কেমন লাগছে?

মিতুল: এর জন্য শুধু আমাকেই কৃতিত্ব দিলে চলবে না, কারণ এটা ছিল একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। ডিফেন্ডার থেকে শুরু করে আক্রমণভাগের খেলোয়াড়—সবাই পুরো মৌসুমজুড়ে ভালো ডিফেন্ড করেছে, তাই আমার ওপর চাপ কম ছিল।

এই মৌসুমের মিতুল মার্মা এবং গত মৌসুমের মধ্যে মিতুল মার্মার পার্থক্য কী ছিল?

মিতুল: পার্থক্যটা হলো আমার মানসিকতায়, যা জাতীয় দলের প্রধান কোচ [হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা] এবং গোলকিপিং কোচ [নয়ন]-এর বদৌলতে গড়ে উঠেছে। আমি তাদের সঙ্গে আমার শক্তি ও দুর্বলতা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং জাতীয় ক্যাম্পে থাকাকালীন উন্নতির জন্য কাজ করেছি। আবাহনীর গোলকিপিং কোচও আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন।

শেখ জামাল এবং শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মতো দুটি বড় দলের অনুপস্থিতিতে এইবার লিগ কতটা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল? এছাড়াও, আবাহনীর পারফরম্যান্স নিয়ে আপনার কী ধারণা?

মিতুল: আবাহনী উপকৃত হতে পারত যদি আমরা মৌসুমের শুরু থেকেই চারজন বিদেশি খেলোয়াড় পেতাম। তবুও আমাদের লিগে রানার্স-আপ হওয়ার সুযোগ আছে। খেলোয়াড় এবং কর্মকর্তারা আবাহনীর জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমি মনে করি, সেই ত্যাগ আমাদের ভালো খেলার জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা ছিল।

শেখ জামাল এবং শেখ রাসেলের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও, আমার মনে হয় লিগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছিল। আবাহনী, মোহামেডান এবং কিংসের মধ্যে একটি ত্রিমুখী লড়াইয়ে পরিণত হয়েছিল – আগের মৌসুমের মতো যেখানে শুধু একটি দল আধিপত্য বিস্তার করত। রানার্স-আপ হওয়ার লড়াই শেষ রাউন্ডেও খোলা আছে।

ফেডারেশন কাপ এবং বিপিএল জেতার কাছাকাছি এসেও জিততে না পারার কোনো আক্ষেপ আছে কি?

মিতুল: পুরো মৌসুম কঠোর পরিশ্রম করার পর, অবশ্যই আমাদের ট্রফি জিততে না পারার আক্ষেপ আছে। তবে আমি মনে করি, রানার্স-আপ হওয়াটাও ছোট অর্জন নয়। ফেডারেশন কাপ জিততে না পারার আক্ষেপ আমরা দীর্ঘ সময় ধরে বহন করব। ফাইনালের সময় ছন্দে ব্যাঘাত ঘটায় আমরা কাপটি হেরেছিলাম।

জাতীয় দলের তৃতীয় পছন্দের গোলরক্ষক থেকে নাম্বার ওয়ান হলেন কীভাবে?

মিতুল: আমি বিশ্বাস করি, কঠোর পরিশ্রমই সব অর্জনের ভিত্তি, এবং আমি কখনোই কাজ করা বন্ধ করিনি। আমি সিনিয়র গোলরক্ষকদের কাছ থেকেও শিখেছি। আমার মনে হয়, মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া মুহূর্তটি ছিল ২০২৩ সালের এশিয়ান গেমস। চীনের বিপক্ষে আমাদের ম্যাচের পর কোচ [কাবরেরা] আমাকে বলেছিলেন, 'তুমি এখন জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত, এবং তুমি সিনিয়র দলের হয়ে খেলবে।' তারপর থেকে, আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তবে আমি নিজেকে নাম্বার ওয়ান গোলরক্ষক মনে করি না – আমি শুধু প্রতিটি ম্যাচে আমার সেরাটা দেওয়ার দিকে মনোযোগ দিই।

ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ ২০টিরও বেশি গোল হজম করেছে, এই অবস্থায় আসন্ন এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে ঘরোয়া পারফরম্যান্সকে কি কাজে লাগানো সম্ভব?

মিতুল: আমরা ভারতের বিপক্ষে আমাদের প্রথম ম্যাচেই ক্লিন শিট রেখেছি। আমার লক্ষ্য হলো জাতীয় দলের জন্য যতটা সম্ভব ক্লিন শিট রাখা এবং আমাদের জিততে সাহায্য করা। তবে, ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক ম্যাচের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।

১০ জুনের সিঙ্গাপুর ম্যাচের আগে আপনার মনে কী চলছে?

মিতুল: প্রথমত, আমরা সবাই ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় খেলে নিজেদের প্রস্তুত করছি। হামজা চৌধুরী ইতিমধ্যেই একটি ম্যাচ খেলেছে, এবং শমিত সোম সিঙ্গাপুর ম্যাচের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তাই আমরা ভারতের বিপক্ষে খেলার সময় যা ছিলাম তার চেয়ে শক্তিশালী হব। হামজা এবং শমিতের মতো মিডফিল্ডারদের অন্তর্ভুক্তি আমাদের আরও বেশি স্কোরিং সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে একটি বাড়তি সুবিধা দেবে।

তবে ম্যাচটি কঠিন হবে কারণ সিঙ্গাপুরেরও হামজা ভাইয়ের মতো দুইজন বা তিনজন ভালো খেলোয়াড় আছে। কিন্তু আমরা আমাদের ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে চাই। আমার মনে হয়, আমাদের জেতার ভালো সুযোগ আছে।

সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ নিয়ে যে উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে, তাতে আপনার কেমন লাগছে?

মিতুল: আমার সত্যিই গর্ব হচ্ছে যে বাংলাদেশের মানুষ ফুটবলের প্রতি এমন আগ্রহ দেখাচ্ছে, যা আগে খুব একটা দেখা যেত না। এই সমর্থন আমাদের জাতির জন্য কিছু বড় কিছু করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

মোহাম্মদ মহসীন, সাঈদ হাসান কানন, আমিনুল হক এবং বিপ্লব ভট্টাচার্য্যের মতো দুর্দান্ত গোলরক্ষকরা দীর্ঘ সময় জাতীয় দলের হয়ে অবদান রেখেছেন, কিন্তু সম্প্রতি কোনো গোলরক্ষকই দীর্ঘ সময় ধরে তাদের অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। মিতুল মার্মা কি তার জায়গা ধরে রাখতে পারবেন?

মিতুল: সত্যি বলতে, জাতীয় দলে একটি জায়গা ধরে রাখা খুব কঠিন। তবে আমি যতদিন দলের অংশ থাকব, ততদিন আমার সেরাটা দিতে চাই।

Comments

The Daily Star  | English

Foreign debt repayment surges 25%

Bangladesh’s repayment of foreign loans surged in the first 10 months while the inflow of loans from bilateral and multilateral lenders continued to fall, according to provisional data from the Economic Relations Division (ERD) released yesterday.

3h ago