ম্যাকাবির জালে মেসি-নেইমার-এমবাপেদের গোল উৎসব
দুটি করে গোল করলেন লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপে। করালেনও দুটি করে। আক্রমণ ত্রয়ীর আরেক তারকা নেইমারও পেলেন গোল। তাতে ম্যাকাবি হাইফার বিপক্ষে রীতিমতো গোল উৎসব করেছে পিএসজি। একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে নকআউট পর্বও।
মঙ্গলবার রাতে পার্ক দে প্রিন্সেসে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের 'এইচ' গ্রুপের ম্যাচে ম্যাকাবি হাইফাকে ৭-২ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে পিএসজি। এর আগে ম্যাকাবির মাঠে ৩-১ গোলের ব্যবধানে জয় পেয়েছিল ফরাসি ক্লাবটি। মেসি, এমবাপে ও নেইমার ছাড়াও এদিন পিএসজির হয়ে প্রথম গোল পেয়েছেন কার্লোস সোলের। অপর গোলটি আত্মঘাতী। ম্যাকাবির পক্ষে দুটি গোলই করেন আব্দুলায়ে সেক।
কোনোমতে জয় পেলেই এদিন নকআউট পর্ব নিশ্চিত হতো পিএসজির। কিন্তু সমান তালে লড়াই করা বেনফিকাকে পেছনে ফেলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে বড় জয়ই প্রয়োজন ছিল তাদের। সেই কাজটা দারুণভাবেই করেছেন মেসি, নেইমার ও এমবাপেরা।
পাঁচ ম্যাচ শেষে ৩টি জয় ও ২টি ড্রয়ে ১১ পয়েন্ট পিএসজির। সমান ম্যাচে সমান জয় ও ড্রয়ে বেনফিকার পয়েন্টও সমান ১১। তবে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে আছে তারা। এদিন এই গ্রুপের অপর ম্যাচে জুভেন্তাসকে ৪-৩ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে বেনফিকা। গ্রুপ পর্বে শেষ ম্যাচে ম্যাকাবি হাইফার বিপক্ষে লড়বে তারা। অন্যদিকে পিএসজির শেষ ম্যাচ জুভেন্তাসের বিপক্ষে।
ঘরের মাঠে ম্যাকাবির বিপক্ষে শুরু থেকেই দারুণ আক্রমণাত্মক ফুটবল উপহার দিতে থাকে পিএসজি। পাল্টা আক্রমণে ভীতি ছড়াচ্ছিল ম্যাকাবিও। ম্যাচের নবম মিনিটে এগিয়ে যেতে পারতো পিএসজি। সুবর্ণ এক সুযোগ নষ্ট করেন ফ্যাবিয়ান রুইজ। নেইমারের নিখুঁত এক থ্রু পাসে একেবারে ফাঁকায় পেয়েও লক্ষ্যে শট নিতে পারেননি এ সাবেক নাপোলি মিডফিল্ডার।
১৮তম মিনিটে পিএসজির আক্রমণ ত্রয়ীর নৈপুণ্যে সুবর্ণ এক সুযোগ মিলে। মেসির বাড়ানো বল থেকে দারুণ এক কাটব্যাক করে এমবাপে। দারুণ শট নিয়েছিলেন নেইমারও। তবে ঝাঁপিয়ে কোনো মতে ঠেকান ম্যাকাবি গোলরক্ষক জস কোহেন।
তবে পরের মিনিটেই মেসির গোলে এগিয়ে যায় পিএসজি। গোলমুখে ফাঁকায় থাকা এমবাপেকে হেড দিয়ে বল দিয়েছিলেন মেসি। এমবাপে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। প্রতিপক্ষ এক খেলোয়াড়ের পায়ে লেগে পাওয়া আলগা বলে আলতো টোকায় বল বাড়ান মেসির উদ্দেশ্যে। বাঁ প্রান্তে ফাঁকায় পেয়ে দেখে শুনে সময় নিয়ে কোণাকোণি চিপে লক্ষ্যভেদ করেন এ আর্জেন্টাইন।
৩১তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে পিএসজি। তবে গোলটি যেন মেসির গোলের ঠিক অনুলিপি। পার্থক্য এবার প্রতিপক্ষের পা ঘুরে বাঁ প্রান্তে ফাঁকায় পেয়ে যান এমবাপে। দারুণ এক কোণাকোণি চিপে বল জালে পাঠান এ ফরাসি তারকা।
চার মিনিট পর স্কোরশিটে নিজে নাম লেখান নেইমার। এবার সেরা তিন তারকার সম্মিলিত চেষ্টায় গোল পায় পিএসজি। এমবাপের কাছ থেকে বল পেয়ে মেসিকে পাস দিয়ে ডিবক্সে ঢুকে যান নেইমার। তাকে ফিরতি পাস দেন মেসি। ফাঁকায় বল পেয়ে নিখুঁত এক শটে বল জালে পাঠান নেইমার।
৩৭তম মিনিটে একটি গোল পরিশোধ করে ম্যাকাবি। ওমর আতজেলির নেওয়া ফ্রিকিক থেকে লাফিয়ে উঠে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন আব্দুলায়ে সেক। তবে সাত মিনিট পরই ফের ব্যবধান বাড়ায় পিএসজি। এমবাপের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া নিখুঁত এক শটে নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করেন নেন মেসি।
৪৯তম মিনিটে আবু ফানির ক্রস থেকে অসাধারণ এক হেডে প্রায় গোল পেয়ে গিয়েছিলেন ফ্রান্টজি পিয়েরত। কিন্তু অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। পরের মিনিটে টিজারন চেরির নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমা। সেই কর্নার থেকে ডি-বক্সে সৃষ্ট জটলায় ফের ব্যবধান কমায় ম্যাকাবি। পিয়েরতের হেড থেকে ফাঁকায় বল পেয়ে নিখুঁত হেডে বল জালে পাঠান সেক।
৫৬তম মিনিটে নেইমার নিখুঁত থ্রু পাসে ফাঁকায় পেয়েও শট নিতে দেরি করায় সুযোগ নষ্ট করেন হাকিমি। নয় মিনিট পর নিজের দ্বিতীয় গোল আদায় করেন নেন এমবাপে। ডান প্রান্ত থেকে আশরাফ হাকিমির ক্রস থেকে বল পেয়ে দারুণ এক কোণাকোণি শটে বল জালে পাঠান এ ফরাসি তরুণ।
৬৭তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়ায় পিএসজি। দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে কাটব্যাক করতে চেয়েছিলেন নেইমার। তবে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে উল্টো নিজেদের জালেই বল পাঠিয়ে দেন শিন গোল্ডবার্গ। পাঁচ মিনিট পর মেসির পাস থেকে ভালো সুযোগ ছিল বদলি খেলোয়াড় কার্লোস সোলেরের। তবে তার নেওয়া শট অল্পের জন্য লক্ষ্যে থাকেনি।
৭৭তম মিনিটে হ্যাটট্রিকটা প্রায় পেয়ে গিয়েছিলেন মেসি। এমবাপের সঙ্গে দেওয়া নেওয়া করে ডি-বক্সে ঢুকে নেওয়া তার জোরালো শট ক্রসবারে লেগে ফিরে না আসলে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নবম হ্যাটট্রিক পেতে পারতেন এ আর্জেন্টাইন।
তিন মিনিট পর বদলি খেলোয়াড় হুগো একিতেকের নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান ম্যাকাবি গোলরক্ষক। দুই মিনিট পর গোলরক্ষককে একা পেয়ে গিয়েছিলেন এ তরুণ। এবারও তাকে হতাশ করেন ম্যাকাবি গোলরক্ষক। ৮৪তম মিনিটে স্কোরবোর্ডে নাম লেখান সোলের। মেসির কাটব্যাক থেকে নেওয়া নিখুঁত এক শটে বল জালে পাঠান এ তরুণ।
Comments