'আমি ফুটবল খেলার জন্যই জন্ম নিয়েছি'

ছবি: এএফপি

শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হতে থাকলেও সবার মনে ক্ষীণ আশা হয়তো ছিল। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যাবেন কিংবদন্তি ব্রাজিল তারকা। কিন্তু দুরারোগ্য ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াইয়ে পেরে উঠলেন না তিনি। গোটা বিশ্বকে শোকে ভাসিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন ফুটবলের রাজা খ্যাত ফুটবলার।

গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকালে (২৯ ডিসেম্বর) আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতালে মারা গেছেন একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে তিনটি বিশ্বকাপ জেতা পেলে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামে পেলের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার মেয়ে কেলি নাসিমেন্তো। বার্ধক্যজনিত সমস্যার পাশাপাশি কয়েক বছর ধরে কোলন ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। গত নভেম্বরের শেষদিন থেকে ব্রাজিলের সাও পাওলোর ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তার। 

তর্কসাপেক্ষে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবলার হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে পেলেকে। ব্রাজিলের জার্সিতে ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। তবে কেবল শিরোপা দিয়ে তাকে বিচার করা সম্ভব নয়। ফুটবল মাঠের গণ্ডি পেরিয়ে তিনি পরিণত হয়েছেন সারা দুনিয়ার মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাত্রে। আসল নাম এদসন আরান্তেস দো নাসিমেন্তো। তবে মাঠে পায়ের জাদু দেখিয়ে পেলে নামেই খ্যাতির চূড়ায় আরোহণ করেন তিনি।

অসামান্য প্রতিভাসম্পন্ন এই সদ্যপ্রয়াত ফুটবলারের কিছু বিখ্যাত উক্তি তুলে ধরা হলো দ্য ডেইলি স্টারের পাঠকদের জন্য।

'লোকেরা পেলে ও (দিয়েগো) ম্যারাডোনার মধ্যে (কে সেরা তা নিয়ে) তর্ক করে। (আলফ্রেদো) দি স্তেফানো (সবার) সেরা, অনেক বেশি পরিপূর্ণ (খেলোয়াড়)।'

-সর্বকালের সেরা ফুটবলার নিয়ে চিরন্তন বিতর্কের ইতি টানার চেষ্টা পেলে করেন ২০০৯ সালে। তিনি ম্যারাডোনার স্বদেশি আর্জেন্টিনা ও রিয়াল মাদ্রিদ কিংবদন্তি দি স্তেফানোকে সেরা আখ্যা দেন।

'আমি ফুটবল খেলার জন্যই জন্ম নিয়েছি, যেমন করে বিথোভেনের জন্ম হয়েছিল সঙ্গীত রচনার জন্য এবং মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর ছবি আঁকার জন্য।'

-ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার ওয়েবসাইটকে বলেছিলেন পেলে।

'বিশ্ব জুড়ে প্রতিটি শিশু যারা ফুটবল খেলে, তারা পেলে হতে চায়। তাদেরকে কীভাবে একজন ফুটবল খেলোয়াড়ের মতো হতে হয় কেবল তা নয়, কীভাবে একজন মানুষের মতো মানুষ হতে হয় সেটা দেখানোর বড় একটি দায়িত্ব আমার রয়েছে।'

-১৯৯৯ সালে স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডের কাছে আকাশছোঁয়া খ্যাতির বোঝা তুলে ধরেছিলেন পেলে।

'আমি মনে করি, এটি খুব কাছাকাছি রকমের ছিল। আবেগও প্রায় একই ধরনের ছিল। ব্রাজিল যখন হেরেছিল, তখন মনে হয়েছিল যে কেউ একজন মারা গেছে, পুরো দেশটাই মারা গেছে, যেমনটা ঘটেছিল (যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি জন এফ) কেনেডির ক্ষেত্রে। আমার বয়স তখন ছিল ৯ বছর। আমি প্রথমবার দেখেছিলাম যে আমার বাবা কাঁদছে।'

-২০১৪ সালের এক সাক্ষাৎকারে ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে ব্রাজিলের হারের ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি বর্ণনা করেছিলেন পেলে।

'পেনাল্টি হলো গোল করার একটি কাপুরুষোচিত উপায়।'

-নিজের আত্মজীবনী 'পেলে: দ্য অটোবায়োগ্রাফি'তে লিখেছেন তিনি।

'এই পৃথিবীতে সব কিছুই একটি খেলা। একটি ক্ষণস্থায়ী ব্যাপার। আমরা সবাই মারা যাব। আমাদের সবার শেষ পরিণতি একই রকমের, তাই না?'

-মৃত্যু নিয়ে পেলে বলেছিলেন ১৯৭৭ সালে।

'আমি আমার জীবনে এক হাজারেরও বেশি গোল করেছি আর লোকেরা সব সময় আমার সঙ্গে যে বিষয়ে কথা বলে তা হলো সেই গোলটা যেটা আমি করিনি।'

-১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের গোলরক্ষক গর্ডন ব্যাঙ্কসের অসাধারণ সেভ নিয়ে পেলের মন্তব্য।

'পেলে মরে না। পেলে কখনো মারা যাবে না। পেলে চিরদিনের জন্য থেকে যাবে। কিন্তু এদসন একজন সাধারণ মানুষ যে একদিন মারা যাবে আর মানুষ সেটা ভুলে যায়।'

-ফুটবলারের অমরত্ব ও মানুষের মৃত্যু নিয়ে দ্য গার্ডিয়ানের কাছে ২০০৩ সালে বলেছিলেন পেলে।

Comments

The Daily Star  | English

Crime ‘stable’ at 11 murders, 15 rapes a day!

The chief adviser's press wing goes on to assert that the official crime statistics from September 2024 to June 2025 do not "completely" support the claim that crime is sharply rising this year.

13h ago