দুর্দান্ত ফুটবল খেলে মালদ্বীপকে হারাল বাংলাদেশ

ম্যাচের শুরু থেকেই ভালো ফুটবল উপহার দিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ধারার বিপরীতে হুট করেই গোল হজম করে বসে তারা। তবে সে ধাক্কা দারুণভাবেই সামলে নেয় জামাল ভুঁইয়ারা। উল্টো পুরো ম্যাচে দাপট দেখিয়ে গোল আদায় করে নেয় তিনটি। তাতে মালদ্বীপের বিপক্ষে কাঙ্ক্ষিত জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। ২০ বছর পর সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এই দলটিকে হারাল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

রোববার বেঙ্গালুরুর শ্রী কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে 'বি' গ্রুপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপকে ৩-১ গোলে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের হয়ে একটি করে গোল পেয়েছেন রাকিব হোসেন, তারিক কাজী ও শেখ মোরসালিন। মালদ্বীপের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন হামজা মোহামেদ।

ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য এক অর্থে বাঁচা মরার লড়াই-ই ছিল। আসরে টিকে থাকতে হলে জিততেই হতো তাদের। ড্র করলেও সুযোগ থাকতো। সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে ভুটানের বিপক্ষে জয়ের পাশাপাশি তাকিয়ে থাকতে হতো প্রতিপক্ষদের ফলাফলের উপর। তবে ভাগ্যটা নিজেদের হাতেই রেখেছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপের বিপক্ষে পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেই জয় তুলে নিয়েছে তারা।

লেবাননের বিপক্ষে আগের ম্যাচে হারলেও দারুণ লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। ম্যাচের ৮০ মিনিট পর্যন্ত জাল অক্ষত রাখার পর তারিক কাজীর একটি ভুলেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সব। সেই তারিকই এদিন ম্যাচ জয়ের অন্যতম নায়ক। তার গোলেই লিড পায় বাংলাদেশ। আর শেষ দিকে গোল করে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করেন মোরসালিন।

এদিন ম্যাচের সপ্তম মিনিটেই ভালো সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। বিপজ্জনক জায়গায় বল পেতে পারতেন রাকিব। যদি তবে সোহেলে রানার বাড়ানো বলে গতি আর কিছুটা কম থাকতো। তবে চার মিনিট পর এই সোহেলের সামনেই ছিল আরও একটি সুযোগ। তবে তার হেডে জোর না থাকায় সহজেই ধরে ফেলেন মালদ্বীপ গোলরক্ষক হোসেন শরিফ।

কিন্তু ১৮তম মিনিটে ধারার বিপরীতে গোল আদায় করে নেয় মালদ্বীপ। হাসান হাইসামের কাছ থেকে বল এয়ে ফাঁকায় থাকা হামজা মোহামেদকে বল বাড়ান আলী ফাঁসির। বল পেয়ে কিছুটা সময় নিয়ে দূরপাল্লার নিখুঁত এক কোণাকোণি শটে বল জালে পাঠান দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা এ ফরোয়ার্ড। প্রথমার্ধে এটাই ছিল তাদের প্রথম ও একমাত্র আক্রমণ।

এর তিন মিনিট পর অবশ্য বিপদ প্রায় ডেকে এনেছিলেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। বল ক্লিয়ার করতে ডি-বক্সে থেকে বেড়িয়ে হেড নিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঠিক মতো নিতে পারেননি। তবে পেছনে থেকে ঈসা ফয়সাল এসে ক্লিয়ার করলে সে যাত্রা বেঁচে যায় তারা।

৩৪তম মিনিট সমতায় ফিরতেই পারতো বাংলাদেশ। সোহেল রানার কর্নার কিক থেকে হেড নিয়েছিলেন তপু। একেবারে গোললাইন থেকে ফেরান হুসেইন নাহিয়ান। তবে ফিরতি বল মালদ্বীপের নাইজ হাসানের গায়ে লেগে জালের দিকেই যাচ্ছিল। এবার ঝাঁপিয়ে ঠেকান মালদ্বীপ গোলরক্ষক।

৪২তম মিনিটে সমতায় ফেরে বাংলাদেশ। সোহেল রানার ক্রস থেকে ডি-বক্সে হেড নিয়ে রাকিবকে পাস দেন তপু বর্মণ। একেবারে ফাঁকায় থেকে বল জালে পাঠাতে কোনো ভুল হয়নি তার। তবে প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে বাংলাদেশকে লিডও এনে দিতে পারতেন রাকিব। দুরূহ কোণ থেকে নেওয়া শট লাফিয়ে দুর্দান্ত দক্ষতায় কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান মালদ্বীপ গোলরক্ষক।

দ্বিতীয়ার্ধেও শুরু থেকেই উজ্জীবিত ফুটবল খেলতে থাকে বাংলাদেশ। এ অর্ধের শুরুতেই এগিয়ে যেতে পারতো তারা। জামালের কর্নার কিক থেকে ডাইভ দিয়ে দারুণ হেড নিয়েছিলেন বিশ্বনাথ ঘোষ। তবে লক্ষ্যে থাকেনি। ৫২ মিনিটে জামালের থ্রু বলে ফাঁকায় পেয়ে গিয়েছিলেন ফাহিম। কিন্তু রাকিবকে পাস দিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে হাতছাড়া করেন সেই সুযোগ।

৬২ ধাক্কা বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন গোলদাতা রাকিব। তার জায়গায় মাঠে নামেন মোহাম্মদ ইব্রাহীম। একই সঙ্গে আরও দুটি পরিবর্তন করেন বাংলাদেশ কোচ হ্যাভিয়ার ক্যাবরেরা। মোরসালিন ও মজিবুর রহমান জনিকে মাঠে নামান তিনি। তবে সেই পরিবর্তনে মাঝ মাঠের ধার বাড়ে বাংলাদেশের।

পাঁচ মিনিট পরই এগিয়ে যায় তারা। কর্নার থেকে গোলমুখে জটলা সৃষ্টি হলে শট নেন তারিক কাজী। তার শট গোললাইন থেকে ঠেকান এক ডিফেন্ডার। এরপর আবারও শট নেন তিনি। আবারও গোললাইন থেকে ব্লক করেন এক ডিফেন্ডার। তৃতীয়বার হেড নেন তারিক। এবার তার হেড ঠেকাতে পারেননি কেউ। প্রথমবারের মতো এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।

৭১তম মিনিটেই তৃতীয় গোলটি পেতে পারতো তারা। কর্নার থেকে বল পেয়ে এক ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে দারুণ এক শট নিয়েছিলেন মোরসালিন, কিন্তু দারুণ দক্ষতায় ঠেকান মালদ্বীপ গোলরক্ষক শরিফ। ৮১তম মিনিটে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন দ্বিতীয় গোলদাতা তারিক কাজীও। তবে নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে মোরসালিনের গোলে তিন পয়েন্ট নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়ের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে তাকে দারুণ পাস দেন বিশ্বনাথ। ডান প্রান্তে এক খেলোয়াড়কে কাটিয়ে দারুণ ফিনিশিংয়ে বল জালে পাঠান মোরসালিন। 

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

6h ago