স্বপ্নের নায়ক এমিকে কাছে পেয়ে উচ্ছ্বসিত মাশরাফি
ফুটবল যখন থেকে বুঝতে শিখেছেন তখন থেকেই আর্জেন্টিনার ভক্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে লম্বা সময় ধরে সে দলটির ব্যর্থতাই দেখতে হয়েছে তাকে। তবে ২০২১ সালের কোপা আমেরিকা দিয়ে বদলে যায় সব কিছু। যেখানে প্রত্যক্ষ অবদান রয়েছে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের। সেই গোলরক্ষক আজ এসেছেন বাংলাদেশে। নিজ দেশে তাকে পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত মাশরাফি।
মাশরাফির মতো বাংলাদেশের সমর্থকরাও তখন থেকে ভালবাসতে শুরু করেন এমিলিয়ানোকে। এরপর বিশ্বকাপে তার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে যান এ গোলরক্ষক। পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে তার এবং পুরো আর্জেন্টিনা দলের প্রতি বাংলাদেশি সমর্থকদের উন্মাদনা ছিল চোখে পড়ার মতো। যা উঠে আসে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও। যা নজর এড়ায়নি এমিলিয়ানোদেরও। সামাজিকমাধ্যমে নিজেও বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন এই গোলরক্ষক।
সেই এমিলিয়ানো আমস্টারডাম থেকে আজ সোমবার ভোরে বাংলাদেশে পা রাখেন। যদিও ঢাকায় ১১ ঘণ্টা অবস্থান কালে প্রকাশ্যে কোথাও উপস্থিত হবেন না তিনি। ফলে সমর্থকদের উন্মাদনা দেখার উপায় নেই তার। তবে ডিজিটাল ব্যবসায়িক গোষ্ঠী নেক্সট ভেঞ্চারসের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছেন তিনি। যেখানে কিছুটা হলেও দেখতে পেয়েছেন। সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন মাশরাফিও। দুই সন্তানকে নিয়ে যোগ দেন নড়াইল এক্সপ্রেস। বিশ্বকাপ জয়ী এ গোলরক্ষককে স্বাগত জানান তিনি।
এরপর সামাজিকমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন মাশরাফি, 'এমিকে ভালো লাগার শুরু কোপা আমেরিকা থেকেই, যেখানে সে টাইব্রেকারে দুটি গোল আটকে দিয়ে দলকে জয় এনে দিল। কত বছর পর বড় কোনো শিরোপা জিতল আর্জেন্টিনা! লিওনেল মেসিও পেল দেশের হয়ে প্রথম বড় ট্রফির স্বাদ। স্বাভাবিকভাবেই পাখির চোখে তাকিয়ে ছিলাম বিশ্বকাপের দিকে। কিন্তু সৌদি আরবের সাথে হেরে মনে হয়েছিল, আরেকটি বিশ্বকাপও হয়তো শেষ হবে হতাশায়। কিন্তু অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ানো এবং পরে বিশ্বকাপ জয় দেখতে পারাটা ছিল অনেক দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের মতো।'
এমিলিয়ানো সঙ্গে দেখা হওয়ায় অনুভূতিও প্রকাশ করেন সাবেক এ পেসার, 'সেই জয়ের অন্যতম নায়ক এমির সঙ্গে দেখা হলো আমাদের এই ঢাকায়। খুব অল্প সময়ের জন্য দেখা, কিন্তু দারুণ এক অনুভূতি। বিশ্বকাপ জয়ী দলের গোলকিপার চোখের সামনে! সে তো জানে না, আমার এবং আমার মতো আরও কত কোটি মানুষের কত বছরের অপেক্ষা শেষ হলো, যেদিন তার ঐ হাত ধরেই আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জয় করল!'
গত বছরের ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনার তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন এমিলিয়ানো। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালের অতিরিক্ত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে কোলো মুয়ানির একটি শট অবিশ্বাস্য দক্ষতায় ঠেকিয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে রাখেন। এরপর টাই-ব্রেকারেও রাখেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান।
সেই স্মৃতি তুলে ধরে আরও লিখেছেন, 'আজকে সে ইন্টারভিউয়ের মাঝেই একবার ট্রাউজার উঠিয়ে দেখাল, পায়ের ঠিক সেই জায়গায় একটি ট্যাটু করিয়েছে, বিশ্বকাপ ফাইনালে শেষ বাঁশির ১৮ সেকেন্ড আগে কোলো মুয়ানির শটটি আটকিয়ে দিয়েছিল যে জায়গা দিয়ে। এক সেকেন্ডের জন্য মনে হলো, আসলে বিশ্বকাপটাতো ওখানেই জিতে নিয়েছে।'
এমিলিয়ানোকে দেখে উচ্ছ্বসিত মাশরাফির সন্তানরাও। তার ভাষায়, 'আজকে আসলে বেশি ভালো লাগছে আমার সন্তানদের জন্য। যখন বললাম, "এমি আসছে, তোমাদের কি দেখা করার ইচ্ছা আছে?" ওরা লাফাচ্ছিল। সবশেষ দুটি দিন ওরা ঠিকমতো ঘুমাতে পারছিল না এমিকে দেখবে বলে। আজকে এমির সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বললাম, "বাচ্চারা তোমার অটোগ্রাফ নিতে চায়।" সে এত আন্তরিকতা দেখাল, এক কথায় অসাধারণ। এমনকি সে ছবিও তুলে দিল ওদের সঙ্গে। এখন তারা মহাখুশি, আর ওদের খুশিতে আমিও এখন মহাখুশি।'
এরপর এই গোলরক্ষককে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, 'এমি, আপনাকে স্বাগত এই বাংলার মাটিতে। এখানে আপনাদের অগুনিত ভক্ত আছে, যুগ যুগ ধরে। আশা করি, আপনারও ভালো লাগছে এই মাটিতে পা রেখে।'
একদিন বাংলাদেশও ফিফা বিশ্বকাপ খেলবেন বলে আশা করছেন মাশরাফি, 'পাশাপাশি এটাও ভাবি, সত্যি বাংলাদেশ একদিন বিশ্বকাপ ফুটবলে কোয়ালিফাই করবে আর আমরা আমাদের পতাকা নিয়ে মিছিল করব, ইনশাল্লাহ। অনেকের কাছে এখন এটা অবাস্তব মনে হতে পারে। তবে আমি বিশ্বাস করি, কাজটা কঠিন, খুব কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। স্বপ্ন পূরণের সেই দিনটির অপেক্ষায় আছি, ইনশাল্লাহ।'
Comments