বাংলাদেশকে গোল বন্যায় ভাসাল অস্ট্রেলিয়া
শক্তির বিচারে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ। র্যাঙ্কিংয়ে তো আকাশ পাতাল ব্যবধান। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রত্যয় প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের কোচ হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা। তবে ম্যাচে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। এক চেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে বাংলাদেশকে রীতিমতো গোল বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছে সকারুরা।
বৃহস্পতিবার মেলবোর্নের এএএমআই পার্কে ২০২৬ সালের ফিফা বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
ম্যাচের আগে সবচেয়ে আলোচনা ছিল অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়দের উচ্চতা নিয়ে। দলটির সব খেলোয়াড়ই ছয় ফুটের উপরে। অনেকের উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুটেরও বেশি। শেষ পর্যন্ত সকারুদের উচ্চতায় ভুগতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তবে শূন্যে তো বটেই বডি টাসেলে কোনোবারই সকারুদের সঙ্গে পাত্তা পাননি জামাল ভুঁইয়ারা।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে খেলা ফর্মেশনে এদিনও আস্থা রেখেছিলেন বাংলাদেশের কোচ। চার ডিফেন্ডার নিয়েই মাঠে নামেন তিনি। তবে এক অর্থে রক্ষণ সামলেছেন দলের সবাই। কিন্তু কাজ হয়নি। রক্ষণভাগে অভিজ্ঞতার দেখা গিয়েছে স্পষ্ট। বেশ কয়েকবারই তরুণ হাসান মুরাদ ও শাকিল হোসেন আগেই চার্জ করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন।
এদিন ম্যাচের চতুর্থ মিনিটেই পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ফ্রিকিক থেকে ক্রেইগ গুডউইনের নেওয়া ক্রসে দারুণ এক হেডে লক্ষ্যভেদ করেন হ্যারি শুটার। ২০তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় দলটি। জ্যাকসন আরভিনের বাড়ানো বল পেয়ে ডান প্রান্ত দিয়ে ঢুকে গোলমুখে একেবারে ফাঁকায় থাকা ব্রান্ডন বোরেওকে কাটব্যাক করেন কনর ম্যাটকাফে। ফাঁকা পোস্টে আলতো টোকায় বল জালে জড়াতে কোনো ভুল হয়নি এই মিডফিল্ডারের।
২৯তম মিনিটে দারুণ এক সেভ করে করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল মারমা। বাঁ প্রান্ত থেকে গুডউইনের ক্রস থেকে বোরেওর হেড ঠেকান তিনি। চার মিনিট পর কর্নার থেকে কেনু বাক্কাসের নেওয়া শট অল্পের জন্য বারপোস্টের উপর দিয়ে গেলে বেঁচে যায় বাংলাদেশ। তবে ৩৭তম মিনিটে ব্যবধান ঠিকই ৩-০ করে ফেলে সকারুরা। লুইস মিলারের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ক্রস দেন ম্যাটকাফে। দুই ডিফেন্ডারের মাঝ থেকে নেওয়া মিচেল ডিউকের হেড মিতুলের মাথার উপর দিয়ে জালে জড়ায়।
তিন মিনিট পরই নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান ডিউক। বোরেওর দূরপাল্লার শট বারপোস্টে লেগে ফিরে আসলে ফাঁকায় পেয়ে আলতো টোকায় লক্ষ্যভেদ করেন এই ফরোয়ার্ড। এরপর সকারুদের দুই দফা হতাশ করেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক মিতুল। ৪১তম মিনিটে আরভিনের শট দারুণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে ঠেকান তিনি। ম্যাচের যোগ করা সময়ে ম্যাটকাফের নেওয়া শট ঠেকান এই গোলরক্ষক।
দ্বিতীয়ার্ধেও একই ধাঁচে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। দুই মিনিট না যেতে গোলও পায় দলটি। বাঁপ্রান্ত থেকে জর্ডান বসের ক্রস, ছয় গজের বক্সে, আলতো টোকায় অনায়াসে জালে পাঠান দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে বদলি নামা জেমি ম্যাকলারেন। ছয় মিনিট পর ডি-বক্সের বাইরে থেকে কনর ম্যাটক্যাফের বাঁ পায়ের শট ঝাঁপিয়ে রুখে দেন মিতুল, আলগা বলে ম্যাকলারেনের প্রচেষ্টাও ঠেকান তিনি।
৬৯তম মিনিটে মাসিমো লোউঙ্গোর শট একেবারে গোললাইন থেকে ঠেকান মোহাম্মদ হৃদয়। তবে লাভ হয়নি। ভালোভাবে ক্লিয়ার করতে পারেননি। সেই বলে ধরে ফের আক্রমণ করে ম্যাকলারেনের গড়ানো শটে ষষ্ঠ গোল আদায় করে নেয় অস্ট্রেলিয়া। পাঁচ মিনিট পর একেবারে ফাঁকায় থেকে হেড নিয়েও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি বোস। ৭৮তম মিনিটে নিজের হ্যাটট্রিক পেয়ে যেতে পারতেন ম্যাকলারেন। বোসের ক্যাটব্যাক থেকে ভালো শট নিয়েছিলেন তিনি। তবে সতীর্থ কুসিনি ইয়েঙ্গির পায়ে লেগে বেরিয়ে যায়।
তবে ৮৪তম ঠিকই নিজের হ্যাটট্রিক তুলে নেন ম্যাকলারেন। ডান প্রান্ত থেকে মিলারের ক্রস থেকে গোলমুখে ফাঁকায় পেয়ে আলতো টোকায় জালের দেখা পান তিনি। পাঁচ মিনিট পর পেনাল্টি পেয়েছিল সকারুরা। ডি-বক্সে এইডেন ও'নিলকে ফাউল করেন শাকিল। তবে স্পটকিক থেকে গোল আদায় করে নিতে পারেনি তারা। লুওঙ্গোর শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান মিতুল। যোগ করা সময়ে গোল করার মতো আরও তিনটি সুযোগ ছিল তাদের সামনে। তবে মিতুলের দৃঢ়তায় আর গোল হজম করেনি বাংলাদেশ।
Comments