নাটকীয়তার পর টসের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, ফলের অপেক্ষা
বিস্ময়কর এক ম্যাচেরই জন্মো হলো। নারীদের সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা কে জিতল তা ম্যাচ শেষের পরও জানা যাচ্ছে না। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর টাইব্রেকারের ১১ শটেও মীমাংসা আসেনি। পরে টস করে ভারতকে জয়ী ঘোষণা করেন রেফারি। তবে ম্যাচ কমিনশনার খানিক পর জানান প্লেয়িং কন্ডিশনে না থাকায় টসের সিদ্ধান্ত বাতিল করছেন তারা! তবে আগে একবার জয়ী ঘোষণা করায় নতুন সিদ্ধান্ত মানতে রাজী হচ্ছে না ভারতীয় দল। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য বাড়ছে অপেক্ষা।
মূল ম্যাচে এতটা উত্তেজনা ছিলো না। খেলার শুরুর দিকে শিবানি দেবির গোল ধরে খেলায় নিয়ন্ত্রণ আর দাপট রেখে ছুটছিল ভারত। কোনভাবেই আক্রমণে ধার আনতে না পারা বাংলাদেশের হতাশা বাড়ছিল ক্রমেই। তবে ৯০ মিনিটের পর যোগ করা সময়ে সাগরিকা বদলে দেন সমীকরণ। তার ঝলকে যোগ করা সময়ে নাটকীয়ভাবে সমতায় ফিরে আসে স্বাগতিক দল। এরপর টাইব্রেকারের এগারো শটেও সমাধান না আসায় টস করতে দুই অধিয়াককে ডাকেন রেফারি। টসের পর তাতে জিতে ভারতীয়রা উল্লাসে মেতে উঠে, হতাশায় নুড়ে পড়ে বাংলাদেশ দল। গ্যালারিতেও তৈরি হয় উত্তেজনা।
টাইব্রেকারের দুই দলের দশ জন শট নেওয়ার পর গোলরক্ষকরাও নেন শট। প্রতিটিতেই হয় গোল। ভারতের একটি শট ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক স্বর্ণা রাণী মন্ডল। তবে পরে দেখা যায় ভারতের খেলোয়াড় শট নেওয়ার আগেই স্বর্ণা গোললাইন থেকে এগিয়ে এসে দাঁড়ান। নিয়ম অনুযায়ী সেই শট বাতিল করা হয়, ফিরতি শট আর ঠেকাতে পারেননি স্বর্ণা।
বৃহস্পতিবার কমলাপুরের বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তাফা কামাল স্টেডিয়ামে খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ করতে থাকে ভারত। গোল পেতেও দেরি হয়নি তাদের। ৮ মিনিটেই এগিয়ে যায় সফরকারী দল। অধিনায়ক নিতু লিন্ডার ডিফেন্স চেরা পাস ধরে দ্রুত গতিতে বাংলাদেশের বক্সে গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন শিবানি দেবি।
এক গোলে পিছিয়ে গিয়েও আক্রমণ ধারালো করতে পারছিল না বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে কিছু বলের যোগান এলোমেলো হয়ে যায় প্রতিপক্ষের সীমানায়। উল্টো শিবানি আতঙ্ক ছড়ানো খানিক পর পরই। ২৪ মিনিটে তার শট ঠেকিয়ে দেন বাংলাদেশের কিপার স্বর্ণা।
৩৫ ও ৩৭ মিনিটে দুবার সুযোগ পেয়েছিলেন স্বপ্না রানী। ৩৫ মিনিটে তার মারা শট যায় বারের উপর দিয়ে। দুই মিনিট পর বক্সে রাখতে পারলেও ভারতের গোলরক্ষক তা আটকে দেন। পরের মিনিটে প্রতি আক্রমণে গিয়ে গোল পেতে পারত ভারত। বিরতির খানিক আগে নেহার ক্রস অল্পের জন্য বাইরে গেলে ভারত পায়নি দ্বিতীয় গোল।
বিরতির পর বাংলাদেশের উপর আরও চাপ বাড়ায় ভারত। প্রথম দশ মিনিটে আদায় করে দুটি কর্নার। ৫৪ মিনিটে দ্বিতীয় গোল প্রায় এসেই গিয়েছিলো। নেহার কাছ থেকে বল পেয়ে বক্সের ভেতর গোলরক্ষকে ফাঁকি দিলেও নিশানায় রাখতে পারেননি পূজা।
পরের মিনিটে শিবানির শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান বাংলাদেশের কিপার স্বর্ণা। ঝিমিয়ে থাকা স্বাগতিক গ্যালারি মাতোয়ারা করতে ৬০ মিনিটে ডান প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে তীব্র গতিতে ছুটেছিলেন সাগরিকা। কিন্তু বল যোগান দেওয়ার মতন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি তিনি।
৭০ মিনিটে স্বপ্নার কর্নার থেকে বল পেয়ে সুরমা জান্নাত বাইরে মারলে হতাশা বাড়ে স্বাগতিক দলে। ৭৯ মিনিটে ভারতীয় ডিফেন্ডারের ভুলে পাওয়া কর্নার কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশের ফুটবলাররা। ৮৩ মিনিটে বক্সের ভেতর বল পেয়েও বাংলাদেশ অধিনায়ক আফিদা খাতুন সুযোগ হাতছাড়া করেন। তার দুর্বল শট ধরতে কোন সমস্যা হয়নি ভারতীয় কিপারের।
৮৭ মিনিটে স্বপ্নার কর্নার বারে লেগে প্রতিহত হলে লাল সবুজ প্রতিনিধিদের আশা আরও কমে যায়। পরের মিনিটে প্রতি আক্রমণে গিয়ে বা পায়ে দারুণ শট নেন ভারতের নেহা। তার শটও বারে লেগে ফিরে যায়।
৯৩ মিনিটে নাটকীয়ভাবে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ। দলকে খেলায় ফেরান সেই সাগরিকা। বাংলাদেশের হার যখন অনেকটা নিশ্চিত, তখনই মঞ্চে হাজির সাগরিকা। বক্সের বাইরে থেকে ভুল পাস ঘুরে বল পেয়ে বক্সে ঢুকে চতুর ফরোয়ার্ড বল জড়িয়ে দেন জালে। উল্লাসে মাতে পুরো গ্যালারি।
এরপর টাইব্রেকার ও টসের নাটকীয়তা। ম্যাচ কমিশনারের ভুল বার্তায় এলোমেলো হয়ে যায় সব কিছু।
Comments