প্রসব পরবর্তী জটিলতায় সাফজয়ী নারী ফুটবলারের মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

বয়সভিত্তিক পর্যায়ে ছিলেন নিয়মিত মুখ। খেলেছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলেও। বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর ঘরোয়া লিগে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু প্রসব পরবর্তী জটিলতা কেড়ে নিল মোসাম্মৎ রাজিয়া খাতুনের জীবনপ্রদীপ। না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বাংলাদেশের হয়ে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা ফুটবলার।

বৃহস্পতিবার ভোরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রাজিয়া। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল মাত্র ২৩ বছর।

দ্য ডেইলি স্টারকে রাজিয়ার ভাই ফজলুল হক জানিয়েছেন, গতকাল বুধবার রাত ১০টার দিকে সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে একটি পুত্র সন্তান প্রসব করেন রাজিয়া। তবে এরপর তার শারীরিক পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপ হতে থাকে এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান।

রাজিয়ার স্বামী ও সাবেক ফুটবলার ইনাম রহমান অবশ্য তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে রাজিয়ার মৃত্যু হয়েছে। আগে থেকে টাকা পাঠানো সত্ত্বেও রাজিয়ার ভাই ও মা তাকে হাসপাতালে ভর্তি না করিয়ে বাড়িতে প্রসব করায়।

স্থানীয় চিকিৎসক সঞ্চয় মণ্ডল জানিয়েছেন, পেটে ব্যথার কথা জানালে রাত ১১টার দিকে তিনি রাজিয়াকে একটি ট্যাবলেট খেতে দেন। তখন মা ও সন্তান দুজনই সুস্থ ছিল। তবে রাত ৩টার দিকে ফোন পাওয়ার পর গিয়ে রাজিয়াকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পান। তখন জরুরি ভিত্তিতে তিনি রাজিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন।

২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বয়সভিত্তিক পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন রাজিয়া। ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ নারী চ্যাম্পিয়নশিপজয়ী দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালেই জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। সেবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলেন তিনি।

এরপর পারফরম্যান্সের কারণে বাফুফের ক্যাম্প থেকে বাদ পড়ার পর আর জাতীয় দলে ফেরা হয়নি রাজিয়ার। তবে নিয়মিত ঘরোয়া পর্যায়ে খেলছিলেন তিনি। প্রতিনিধিত্ব করেছেন নাসরিন স্পোর্টিং ক্লাব, এফসি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কাচারিপাড়া একাদশের।

রাজিয়ার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ নারী জাতীয় দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নারী দলের দায়িত্বে থাকা কোচ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, 'আমার একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবর শোনাটা খুবই দুঃখজনক আমার জন্য। গত বছরও সে নারী লিগে খেলার সময় তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল।'

রাজিয়ার সাবেক সতীর্থ সাবিনা খাতুন, সানজিদা আক্তার ও আরও কয়েকজন তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনও (বাফুফে) শোক প্রকাশ করেছে।

Comments