বার্নাব্যুতে এবার মিলানের কাছে ধরাশায়ী রিয়াল

ছবি: এএফপি

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে সবশেষ ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার কাছে ধরাশায়ী হয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। নিজেদের ডেরায় ১০ দিনের মধ্যে আরও একবার হারের তেতো স্বাদ পেল তারা। চলতি মৌসুমে অধারাবাহিক এসি মিলান এবার কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যদের হতাশায় পোড়াল।

মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের প্রথম পর্বের ম্যাচে প্রতিযোগিতার বর্তমান ও রেকর্ড ১৫ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়ালের বিপক্ষে ৩-১ গোলে জিতেছে ইতালিয়ান ক্লাবটি। প্রথমার্ধে মালিক চিয়াও মিলানকে এগিয়ে দেওয়ার পর পেনাল্টি থেকে সমতা টানেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র। বিরতির আগে আলভারো মোরাতা ফের সফরকারীদের লিড পাইয়ে দেওয়ার পর দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ান টিয়ানি রেইন্ডার্স।

সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ঘরের মাঠে পরপর দুই ম্যাচ হারল রিয়াল। সব মিলিয়ে এবারের মৌসুমে এটি স্প্যানিশ ক্লাবটির তৃতীয় হার। গত সপ্তাহে লা লিগায় বার্সার কাছে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার আগে গত মাসের শুরুতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে লিলের কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল তারা।

সিরি আতে ছন্দহীনতায় ভোগা মিলান রয়েছে পয়েন্ট তালিকার সাতে। চলমান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে প্রথম দুই ম্যাচে তারা হেরেছিল লিভারপুল আর বায়ার লেভারকুসেনের কাছেও। সেই ধাক্কা সামলে টানা দুটি জয় তুলে নিল ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সাতবারের শিরোপাজয়ীরা। রিয়ালকে পরাস্ত করার করার আগে তারা জিতেছিল ক্লাব ব্রুগের বিপক্ষে।

শুরু থেকেই আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা লড়াইয়ে বল দখল ও আক্রমণে আধিপত্য করে রিয়াল। ৫৭ শতাংশ সময় বল পায়ে রেখে গোলমুখে ২৩টি শট নিয়ে ১০টি তারা রাখে লক্ষ্যে। কিন্তু স্বাগতিকদের চেয়ে দাপট কোনো অংশে কম ছিল না মিলানের। গোলমুখে পাওলো ফনসেকার শিষ্যদের নেওয়া ১৪টি শটের মধ্যে লক্ষ্যে ছিল নয়টি।

খেলা শুরুর আগে ভ্যালেন্সিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি শোক প্রকাশ করা হয়। প্রথমার্ধের তৃতীয় মিনিটেই ম্যাচের প্রথম সুযোগটি আসে কিলিয়ান এমবাপের সামনে। কিন্তু বার্সার বিপক্ষে অনেক সুযোগ হাতছাড়া করা ফরাসি স্ট্রাইকার এদিনও ভীষণ হতাশ করেন। লুকাস ভাজকেজের পাসে তার কোণাকুণি শট দূরের পোস্ট খুঁজে নিতে পারেনি। চার মিনিট পর লুকা মদ্রিচের ফ্রি-কিক অনায়াসে লুফে নেন মিলানের গোলরক্ষক মাইক মেনিয়ঁ।

দ্বাদশ মিনিটে গোল হজম করে পিছিয়ে পড়ে রিয়াল। ক্রিস্টিয়ান পুলিসিচের কর্নারে জোরালো হেডে বল জালে পাঠান জার্মান ডিফেন্ডার চিয়াও। লড়াইয়ে সমতা ফিরতে পারত দুই মিনিটের মধ্যেই। কিন্তু মেনিয়ঁ দৃঢ়তার ছাপ রেখে ঝাঁপিয়ে করেন জোড়া সেভ। এমবাপের শট ফেরানোর পর ভিনিসিয়ুসের প্রচেষ্টাও রুখে দেন তিনি।

রিয়ালের চাপ ধরে রাখাকে পূর্ণতা দিয়ে ২৩তম মিনিটে বার্নাব্যুর গ্যালারিতে হাসি ফেরান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড ভিনিসিয়ুস। পানেনকা শটে তিনি জাল কাঁপিয়ে স্কোরলাইন ১-১ করেন। ডি-বক্সে তাকেই স্বদেশি ডিফেন্ডার এমারসন ফেলে দেওয়ায় রেফারি বাজিয়েছিল পেনাল্টির বাঁশি।

৩২তম মিনিটে রেইন্ডার্সের জোরালো নিচু শট ঠেকান আন্দ্রিই লুনিন। কিন্তু সাত মিনিট পর আর জাল অক্ষত রাখতে পারেননি রিয়ালের ইউক্রেনিয়ান গোলরক্ষক। নিজেদের সীমানায় আহেলিয়া চুয়ামেনির ভুল পাস ধরে আক্রমণ শানায় মিলান। পুলিসিচের কাছ থেকে ডি-বক্সে বল পেয়ে শট নেন রাফায়েল লেয়াও। তা পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে ব্যর্থ হন লুনিন। আলগা বল অনায়াসে জালে ঠেলে দেন রিয়ালের সাবেক স্প্যানিশ স্ট্রাইকার মোরাতা।

আবার সমতায় ফিরে বিরতিতে যাওয়ার সুযোগ ছিল রিয়ালের। তবে আরেক দফা ভীষণ আক্ষেপ জাগান এমবাপে। এদার মিলিতাওয়ের থ্রু বল মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে দ্রুত ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন তিনি। কিন্তু গোলরক্ষককে একা পেয়েও জালের ঠিকানা খুঁজে নিতে পারেননি।

দ্বিতীয়ার্ধের সপ্তম মিনিটে মিলান ব্যবধান আরও বাড়াতে পারত। ডানপ্রান্ত থেকে এমারসনের মাপা ক্রসে পর্তুগিজ উইঙ্গার লেয়াওয়ের হেড রুখে দক্ষতার ছাপ রাখেন লুনিন। পিছিয়ে থাকা রিয়াল মরিয়া হয়ে উঠলেও আক্রমণে কাঙ্ক্ষিত ধার দেখাতে পারছিল না। উল্টো ৭৩তম মিনিটে ফের গোলের উল্লাস করে মিলান। রিয়ালের রক্ষণভাগের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে লেয়াওয়ের পাসে লক্ষ্যভেদ করেন ডাচ মিডফিল্ডার রেইন্ডার্স।

৮১তম মিনিটে জার্মান ডিফেন্ডার অ্যান্টোনিও রুডিগার জোরালো ভলিতে বল পাঠান জালে। জেগে ওঠে শিরোপাধারী রিয়ালের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা। যদিও সেটা ফিকে হয়ে যায় অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই। ভিএআরের সাহায্য নিয়ে রেফারি গোল বাতিল করেন অফসাইডের কারণে।

ম্যাচের একদম শেষদিকে দুই দলই একটি করে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করে। ৮৭তম মিনিটে থিও হার্নান্দেজের ক্রসে রুবেন বদলি লফটাস-চিকের শট আটকে দেন লুনিন। যোগ করা সময়ের তৃতীয় মিনিটে ফরাসি গোলরক্ষক মেনিয়ঁ আবার বাধার দেয়াল হয়ে আবির্ভূত হন। ভিনিসিয়ুসের ক্রসে বদলি ব্রাহিম দিয়াজের হেড গোললাইন পেরোতে দেননি তিনি।

চার ম্যাচে দুই জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে ১৭ নম্বরে নেমে গেছে রিয়াল। সমান ম্যাচে পয়েন্ট নিয়ে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকা মিলান উঠে এসেছে ১৮ নম্বরে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল। একই সময়ে শুরু হওয়া আরেক ম্যাচে ঘরের মাঠ অ্যানফিল্ডে লেভারকুসেনকে ৪-০ গোলে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আর্নে স্লটের শিষ্যরা। চার ম্যাচের সবকটিতে জিতে তাদের অর্জন পূর্ণ ১২ পয়েন্ট।

Comments

The Daily Star  | English

What does Trump 2.0 mean for businesses in Bangladesh?

For local business communities, Donald Trump’s victory in the presidential race has been shorthand for the expectation that Western apparel orders and some foreign investments would shift to Bangladesh, with global fashion powerhouse China possibly facing higher import tariffs from the US.

7h ago