আর্সেনালকে ফের হারিয়ে ৫ বছর পর ফাইনালে পিএসজি

বল দখলে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি সুযোগ তৈরিতে আধিপত্য দেখাল আর্সেনাল। তাদের আক্রমণের ঝাপটা সামলে পিএসজি উপহার দিল উজ্জীবিত পারফরম্যান্স। দুই অর্ধে ফরাসি ক্লাবটি দুবার খুঁজে নিল জালের ঠিকানা। অনেক সুযোগ হাতছাড়া করা মিকেল আর্তেতার শিষ্যরা শেষদিকে ব্যবধান কমালেও তা কাজে এলো না। দুই লেগেই জিতে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের টিকিট পেল প্যারিসিয়ানরা।
বুধবার রাতে ঘরের মাঠ পার্ক দে প্রিন্সেসে সেমিফাইনালের ফিরতি লেগে ২-১ গোলে জিতেছে লুইস এনরিকের দল। গত সপ্তাহে আগের লেগে ইংলিশ ক্লাবটিকে তাদের মাঠে ১-০ গোলে হারিয়েছিল তারা। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-১ গোলের অগ্রগামিতায় দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে ঠাঁই মিলেছে তাদের। এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব প্রতিযোগিতায় বায়ার্ন মিউনিখের কাছে হেরে তারা হয়েছিল রানার্সআপ।
প্রথমার্ধে স্প্যানিশ মিডফিল্ডার ফাবিয়ান রুইজের গোলে এগিয়ে যাওয়া পিএসজি দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান বাড়ায় মরক্কান ডিফেন্ডার আশরাফ হাকিমির লক্ষ্যভেদে। মাঝে পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন পর্তুগিজ মিডফিল্ডার ভিতিনিয়া। এরপর ইংলিশ ফরোয়ার্ড বুকায়ো সাকা জাল কাঁপালেও ঘুরে দাঁড়ানো হয়নি আর্সেনালের।
ম্যাচের ৫৪ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখা গানাররা গোলমুখে ১৯টি শট নেয়। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল চারটি। অন্যদিকে, পিএসজি গোলপোস্টে ১১টি শট নিয়ে ছয়টি লক্ষ্যে রাখতে পারে।
তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন ডেকলান রাইস। ডানপ্রান্ত থেকে ইউরিয়েন টিম্বারের ক্রসে ইংলিশ মিডফিল্ডারের হেড থাকেনি লক্ষ্যে। সেসময় ধারে কাছেও ছিলেন না পিএসজির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুম্মা।
পরের পাঁচ মিনিটে থমাস পার্টের লম্বা থ্রো-ইন থেকে আরও দুবার গোলের সম্ভাবনা জাগায় আর্সেনাল। কিন্তু জ্বলে ওঠা দোন্নারুমাকে ফাঁকি দেওয়া যায়নি। চতুর্থ মিনিটে গাব্রিয়েল মার্তিনেল্লির প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেওয়ার পর অষ্টম মিনিটে মার্টিন ওডেগার্ডের দূর থেকে নেওয়া শট বামদিকে ঝাঁপিয়ে রুখে দেন তিনি।
গোলের জন্য মরিয়া গানাররা বেশ ঝুঁকি নিয়ে খেলতে থাকে। আক্রমণে জোর দেওয়ায় রক্ষণভাগ প্রায়শই হয়ে পড়ে অরক্ষিত। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে পিএসজি খেলায় ফিরলে জমে ওঠে লড়াই।
১৭তম মিনিটে গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল স্বাগতিকরা। ডি-বক্সের ভেতর থেকে খাভিচা কাভারাতস্খেলিয়ার জোরাল শট বাধা পায় ডান দিকের পোস্টে। ছয় মিনিট পর পাল্টা আক্রমণে ভালো অবস্থান থেকেও স্প্যানিশ গোলরক্ষক দাভিদ রায়া বরাবর দুর্বল শট নেন দিজিরে দোয়ে।
২৭তম মিনিটে লিড আদায় করে নেয় প্যারিসিয়ানরা। দলটির ফ্রি-কিক আটকে দিলেও পুরোপুরি বিপদমুক্ত করতে পারেনি সফরকারীরা। বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের প্রান্ত থেকে রুইজের বাম পায়ের শট জালে জড়ালে গোটা স্টেডিয়াম উল্লাসে ফেটে পড়ে। দুই লেগ মিলিয়ে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।
আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের লড়াইয়ে ৬৪তম মিনিটে আবার দোন্নারুম্মা দেখান নৈপুণ্য। ইতালিয়ান গোলরক্ষক পাখির মতো হাওয়ায় ভেসে এক হাত দিয়ে ব্যর্থ করে দেন দূরের পোস্টের দিকে যেতে থাকা বাঁকানো শট। অবিশ্বাস আর হতাশায় মাথা ঝাঁকাতে থাকেন সাকা।
ডি-বক্সে ইংলিশ ডিফেন্ডার মাইলস লুইস-স্কেলির হাতে বল লাগায় তিন মিনিট পর ভিএআরের সাহায্য নিয়ে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। ফলে ফাইনালের ওঠা নিশ্চিত করার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় পিএসজি। কিন্তু ভিতিনিয়ার দুর্বল গড়ানো শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ফিরিয়ে আর্সেনালকে আশায় রাখেন রায়া।
৭২তম মিনিটেই অবশ্য দুই শিবিরে ঠিক উল্টো চিত্রের দেখা মেলে। টমাস পার্টে বলের নিয়ন্ত্রণ নিতে ব্যর্থ হলে তা পেয়ে যান বদলি নামা উসমান দেম্বেলে। ফরাসি উইঙ্গারের পাসে নিখুঁত শটে নিশানা ভেদ করেন হাকিমি। ফলে দুই লেগ মিলিয়ে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়ে পিএসজি বসে পড়ে পুরোপুরি চালকের আসনে।
চার মিনিট পর ম্যাচে কিছুটা উত্তেজনা ফিরে আসে সাকার গোলে। মার্কিনিয়োসের সঙ্গে বল দখলের লড়াইয়ে জিতে বদলি লেয়ান্দ্রো ত্রোসারের দেওয়া ক্রস ভাগ্যক্রমে পৌঁছায় তার কাছে। প্রথমবারের চেষ্টায় না পারলেও পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা দোন্নারুম্মাকে দ্বিতীয় দফায় পরাস্ত করেন তিনি।
৮০তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি সাকা। বদলি নামা রিকার্দো কালাফিওরির বামদিক থেকে করা ক্রস দোন্নারুম্মাকে ফাঁকি দিয়ে পড়ে তার ঠিক সামনে। কিন্তু ফাঁকায় থেকে ফাঁকা জাল পেয়েও বল উড়িয়ে মারেন তিনি। সেইসঙ্গে আর্সেনালের সম্ভাবনাও একরকম শেষ হয়ে যায়। শেষ বাঁশি বাজার আগে তেমন কোনো উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা আর দেখাতে পারেনি তারা।
আগামী ১ জুন মিউনিখে অনুষ্ঠিত হবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ২০২৪-২৫ মৌসুমের ফাইনাল। সেখানে অধরা শিরোপার স্বপ্নে বিভোর পিএসজির প্রতিপক্ষ তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান। আরেক সেমিতে দুই লেগ মিলিয়ে ৭-৬ ব্যবধানের অগ্রগামিতায় বার্সেলোনাকে পরাস্ত করেছে তারা।
Comments