বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল জমাতে পারে যে পাঁচটি লড়াই

বুধবার থেকে লর্ডসে শুরু হচ্ছে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল। অস্ট্রেলিয়ার সামনে শিরোপা ধরে রাখার মিশন, দক্ষিণ আফ্রিকার সুযোগ প্রথমবার এই কাপ উঁচিয়ে ধরার। এই দুই দলের লড়াইয়ের ভেতর ছোট ছোট আরও কিছু লড়াই গড়ে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।

প্যাট কামিন্স বনাম এইডেন মার্করাম

এইডেন মার্করাম ২০২২-২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ অস্ট্রেলিয়া সফরে খেলেননি, তবে ২০১৮ সালে আগের দেখায় অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক প্যাট কামিন্স তাকে চারবার আউট করেছিলেন। বল টেম্পারিংয়ের কারণে আলোচিত সেই সিরিজ প্রোটিয়ারা ৩-১ ব্যবধানে জিতেছিলো।  মার্করাম সেবার ডিন এলগারের সঙ্গে ওপেন করেছিলেন এবং দুটি সেঞ্চুরি সহ সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন।

২০২২ সালে যেখানে তার গড় ছিল মাত্র ১৫, সেখানে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবারও টপ অর্ডারে ফিরে আসেন এবং এরপর থেকে ১২টি টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি সহ তার গড় ৪০-এর বেশি।

স্টিভ স্মিথ বনাম কাগিসো রাবাদা

অস্ট্রেলিয়ার সেরা ব্যাটসম্যান বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলার যেকোনো দিক থেকেই একটি দারুণ লড়াই।  তবে এই দুজনের মধ্যে ২০১৬ সাল থেকে একটি উত্তাপময় ইতিহাস রয়েছে। তখন কাগিসো রাবাদা অস্ট্রেলিয়ায় তার প্রথম সফরে অস্ট্রেলিয়ান লাইন-আপকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন এবং দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল। প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার ২২ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন, যার মধ্যে স্টিভ স্মিথকে দুবার আউট করেন তিনি। হোবার্টে অস্ট্রেলিয়া ৮৫ রানে গুটিয়ে গেলে ৪৮ রানে অপরাজিত থাকেন স্মিথ।

সব মিলিয়ে, রাবাদা টেস্টে স্মিথকে চারবার আউট করেছেন। তবে ২০২২-২৩ সালে অস্ট্রেলিয়ায় তাদের শেষ সফরে দক্ষিণ আফ্রিকার এই ফাস্ট বোলারকে মোকাবেলা করার সময় এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের গড় ছিল ৫০। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তার সাম্প্রতিকতম ইনিংসে সিডনিতে তিনি একটি সেঞ্চুরি করেছিলেন। তারা দুজনেই লর্ডসে খেলতে ভালোবাসেন – স্মিথের ব্যাটিং গড় প্রায় ৬০, অন্যদিকে রাবাদা বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা, 'হোম অফ ক্রিকেটে' তার খেলা দুটি টেস্টে ১৩ উইকেট নিয়েছেন এবং গড়ে প্রতি ৩৫ বলে একবার উইকেট পেয়েছেন তিনি।

ফাইনালের আগে দক্ষিণ আফ্রিকান প্রতিদ্বন্দ্বী সম্পর্কে স্মিথ বলেছেন, 'সে একজন মানসম্পন্ন বোলার, তার রেকর্ডই কথা বলে, শুধুমাত্র লর্ডসে নয়, বিশ্বজুড়ে।'

ট্র্যাভিস হেড বনাম কেশব মহারাজ

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে বামহাতি অর্থোডক্স স্পিনারদের বিরুদ্ধে ট্র্যাভিস হেডের স্ট্রাইক রেট ৯৩.৩, যা যেকোনো ধরণের বোলারের বিপক্ষে তার সর্বোচ্চ। গত দুই বছরে তিনি মাত্র দুবার বামহাতি স্পিনে আউট হয়েছেন, দুইবারই শ্রীলঙ্কার প্রবাথ জয়সুরিয়া  তাকে শিকার ধরেন।

দক্ষিণ আফ্রিকার বামহাতি স্পিনার কেশব মহারাজ টেস্টে হেডকে আউট করতে পারেননি (২৮ বলে ২৯ রান), যদিও তিনি তাকে ওয়ানডেতে একবার আউট করেছেন, তবে সেটিও অস্ট্রেলিয়ান বামহাতি ব্যাটসম্যান ইডেন গার্ডেন্সে ২০২৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ৪৮ বলে ৬২ রান করে দলকে জয়ের পথে নিয়ে যাওয়ার পরেই হয়েছিল। যদি হেড মহারাজকে মোকাবেলা করার সুযোগ পান, তবে কিছু লড়াই হতেই পারে।

জশ হ্যাজেলউড বনাম রায়ান রিকেলটন

রায়ান রিকেলটন এই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা আবিষ্কার। তার সাম্প্রতিক কয়েকটি চিত্তাকর্ষক টেস্ট পারফরম্যান্স অস্ট্রেলিয়াকে ভাবনায় ফেলবে। যার মধ্যে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৫৯ রানের বিশাল ইনিংস রয়েছে।

এই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে বামহাতি ওপেনারদের বিরুদ্ধে জশ হ্যাজেলউডের গড় ২১.৫৭, যা অস্ট্রেলিয়ার মূল ফাস্ট বোলারদের মধ্যে সেরা। হ্যাজেলউড এই বছর আইপিএলের লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানকে আউট করতে মাত্র চারটি বল নিয়েছিলেন (রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ১২ রানের জয়ের সময় রিকেলটন ১৭ রানে এলবিডব্লিউ হন হ্যাজেলউডের বলে)। তবে এই প্রোটিয়া ওপেনার গত দুই বছরে ডানহাতি বোলারদের বিরুদ্ধে তার দলের সর্বোচ্চ গড়ের (৬৫.৪০) ব্যাটসম্যান।

ট্রিস্টিয়ান স্টাবস বনাম নাথান লায়ন

ট্রিস্টিয়ান স্টাবস দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান, যিনি তার নিজের দিনে স্পিনের বিরুদ্ধে আধিপত্য বিস্তার করেন। ২০২৩-২৫ চক্রে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান অফ-স্পিনের বিরুদ্ধে ১২১ এবং বামহাতি অর্থোডক্সের বিরুদ্ধে ৮৩ গড়ে রান করেছেন। তার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি গত অক্টোবরে চট্টগ্রামে বাংলাদেশের অফ স্পিনারদের আক্রমণের বিরুদ্ধে এসেছিল। পরের মাসে ডারবানে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরেকটি সেঞ্চুরি করেছিলেন, যেখানে বামহাতি স্পিনার প্রবাথ জয়সুরিয়া দ্বিতীয় ইনিংসে ৪০ ওভার বোলিং করেন।

তবে, টেস্ট ক্রিকেটে ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে স্টাবসের গড় মাত্র ১৭ এবং তার ১৬ ইনিংসে ডানহাতি ফাস্ট বোলারদের কাছে ১১ বার আউট হয়েছেন। তাই যদি তিনি অস্ট্রেলিয়ার পেস আক্রমণ সামাল দিয়ে দিতে পারেন, তবে লায়নকে তাকে কাবু করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

7h ago