‘খেলাধুলায় এখনও প্রাণ ফেরেনি’

Jubaidur Rahman Rana

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় দেশের খেলাধুলাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়। ২৯ আগস্ট পাঁচ সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়। ১ অক্টোবর কমিটিটি পুনর্গঠিত হয়। জাতীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোর অ্যাড-হক কমিটি গঠনের পাশাপাশি ক্রীড়াঙ্গণে গঠনতন্ত্র সংস্কারেরও দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই অনুসন্ধান কমিটির মেয়াদ ১০ মে শেষ হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক এবং জাতীয় শাটলার থেকে সংগঠক বনে যাওয়া জুবাইদুর রহমান রানা দ্য ডেইলি স্টারকে তাদের সাফল্য, ব্যর্থতা, বাধা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন।

যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শনিবার বলেছেন যে খেলাধুলায় অনুসন্ধান কমিটির মেয়াদ আর বাড়ানো হবে না। গত সাত মাসে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

জুবাইদুর রহমান রানা: আমরা অনেক কিছু অর্জনের আশা করেছিলাম – একটি ভালো গঠনতন্ত্র তৈরি করা, শক্তিশালী কমিটি গঠন করা এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। আমি বলব আমরা আমাদের লক্ষ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ অর্জন করেছি, যদিও অন্যরা দাবি করতে পারে এটি ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। তবে, আমাদের প্রধান কাজ ছিল খেলাধুলার গঠনতান্ত্রিক সংস্কার, যা এখনও অসম্পূর্ণ।

খেলাধুলার গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রত্যাশা পূরণে অনুসন্ধান কমিটি কতটা সক্ষম হবে?

জুবাইদুর: আজ [রবিবার] আমি ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি বলেছেন একটি নতুন কমিটি বাকি কাজ সম্পন্ন করবে। যদিও তিনি এটি একটি পৃথক সংস্থা হবে কিনা তা নির্দিষ্ট করেননি, তবে সম্ভবত বিদ্যমান অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা কাজটি চালিয়ে যাবেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮০ শতাংশ গঠনতান্ত্রিক সংস্কার সম্পন্ন হয়েছে।

ক্রীড়া উপদেষ্টা কি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়ে বিশেষভাবে কিছু উল্লেখ করেছেন?

জুবাইদুর: হ্যাঁ, তিনি বিসিবির গঠনতন্ত্র সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছেন। তিনি আমাকে বিসিবি গঠনতন্ত্র সংস্কার কমিটিতে তাকে এবং আরও পাঁচজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে বলেছিলেন। তিনি আমাকে আরও বলেছিলেন যে অ্যাড-হক কমিটির কাজ শেষ হলে কমিটির নাম পরিবর্তন করা হবে।

খেলাধুলায় গঠনতন্ত্র সংস্কার আসলে কীভাবে করা হয়?

জুবাইদুর: আমরা কারও উপর নতুন গঠনতন্ত্র চাপিয়ে দিতে পারি না। এর বদলে গঠনতন্ত্রের খসড়া তৈরির আগে আমরা সকল অংশীজনের সঙ্গে বসি। এরপর এই খসড়াগুলো পর্যালোচনার জন্য ফেডারেশনগুলোতে পাঠানো হয়। যদি তাদের কোনো পরামর্শ বা উদ্বেগ থাকে, তাহলে আমরা সেগুলো চূড়ান্ত করার আগে সমাধান করি। অনেক বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে সঠিক নির্বাচন প্রক্রিয়া নেই এবং বেশ কয়েকটি কেবল অন্য ফেডারেশন থেকে অনুলিপি করা হয়েছে।

অনুসন্ধান কমিটির মেয়াদ শনিবার শেষ হয়েছে, কিন্তু এটি মাত্র ২৯টি অ্যাড-হক কমিটি গঠন করেছে। বাকিগুলোর কী হবে?

জুবাইদুর: আমরা ৩০টি ফেডারেশনের জন্য অ্যাড-হক কমিটি জমা দিয়েছিলাম, কিন্তু বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্টস ফেডারেশনের কমিটি জমা দেওয়ার চার মাস পরেও ঝুলে আছে। আমরা বাকি ২৩টির কমিটি ৫ মে জমা দিয়েছি এবং আগামীকাল [সোমবার] আনুষ্ঠানিকভাবে সেগুলো হস্তান্তর করব।

৫৩টি ক্রীড়া সংস্থার জন্য কমিটি গঠনে সাত মাস কাজ করার পর আপনি কি মনে করেন এটি একটি সাফল্য ছিল, নাকি আপনি হতাশ?

জুবাইদুর: সত্যি বলতে, আমি মনে করি না আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। আমরা পুরোপুরি কাউকে সন্তুষ্ট করতে পারিনি। যখন একজন ব্যক্তি একা কাজ করে, তখন তার ফলাফল পাঁচজন জড়িত থাকার চেয়ে আলাদা হয়। আমরা পাঁচজনই গভীরভাবে খেলাধুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলাম, কিন্তু আমরা অন্য যেকোনো পাঁচজন ব্যক্তির চেয়ে আলাদা কী এমন করেছি, অন্যরা সম্ভবত এই সমস্ত কমিটি গঠনে একই পরিমাণ সময় নিত। এর জন্য আমাদের জবাবদিহি করা উচিত। আমরা এই কাজে সাত মাস কাটিয়েছি – আমরা কি খেলোয়াড়দের সেই সময়গুলো ফেরত দিতে পারব?

মাত্র ৫৩টি কমিটি গঠনে সাত মাস সময় লাগল কেন?

জুবাইদুর: সহযোগিতার অভাব ছিল। উদাহরণ হিসেবে বলি একটি কমিটি গঠনের জন্য প্রায় ১০ থেকে ৭০ জনের সঙ্গে আলোচনা করার পরেও আমাদের সুপারিশকৃত কিছু নাম চূড়ান্ত তালিকায় অনুপস্থিত ছিল। কমিটিগুলো প্রায়শই আমরা জমা দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ পর প্রকাশিত হত। তাই সাত থেকে আট মাস সময় লেগেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে ২৯টি নতুন অ্যাড-হক কমিটি খেলাধুলায় প্রাণ ফিরিয়ে আনতে কতটা কাজ করেছে?

জুবাইদুর: সত্যি বলতে, খেলাধুলায় এখনও প্রাণ ফেরেনি। আমি সম্প্রতি বেশ কয়েকটি জেলা ও বিভাগ ঘুরে দেখেছি অনেক খেলার মাঠ হাঁটু-উঁচু ঘাসে ভরে গেছে। আমরা কী অর্জন করেছি? আমরা ১৭ থেকে ১৯ সদস্যের অ্যাড-হক কমিটি গঠন করেছি, যেখানে প্রকৃত কমিটিতে ২৭ থেকে ২৯ জন সদস্য থাকা উচিত। তাই আমাদের ১০ জন সদস্য কম আছে যারা অর্থপূর্ণ অবদান রাখতে পারত।

ক্রীড়াঙ্গণে কখন নির্বাচন হওয়া উচিত?

জুবাইদুর: গঠনতন্ত্র সংস্কারের পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। সরকারের উচিত এই সংস্কারগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া; অন্যথায়, অনুসন্ধান কমিটি গঠনের উদ্দেশ্য অপূর্ণ থেকে যাবে।

অ্যাড-হক কমিটি গঠনের সময় আপনি কি কোনো চাপের সম্মুখীন হয়েছিলেন?

জুবাইদুর: হ্যাঁ, বাইরে থেকে চাপ ছিল, কিন্তু আমরা তাতে নতি স্বীকার করিনি। তবে, আমাদের কিছু অভ্যন্তরীণ সুপারিশ বিবেচনা করতে হয়েছিল।

গত সাত মাস নিয়ে আপনার কোনো অনুশোচনা আছে কি?

জেআরআর: ঠিক অনুশোচনা নয়, তবে আমরা অনেক বেশি সহযোগিতামূলক পরিবেশে শুরু করেছিলাম। সময়ের সঙ্গে  আমরা সম্মিলিত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ হতে পারিনি।  ব্যক্তিগত এজেন্ডাগুলো ভোগান্তির কারণ, যেখান থেকে সংঘাত দেখা দেয়।

Comments

The Daily Star  | English

JnU students vow to stay on streets until demands met

Jagannath University (JnU) students tonight declared that they would not leave the streets until their three-point demand is fulfilled

5h ago