সাক্ষাৎকার

‘আমি স্রেফ মজার জন্য খেলি’

Rani Hamid

বয়স আশি পেরিয়ে গেলেও এখনো দাবার বোর্ডে সচল রানি হামিদ। ৮১ বছর বয়েসে অংশ নিয়েছেন দাবা অলিম্পিয়াডে। ৪০ বছর ধরে বিশ্ব মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করছেন বাংলাদেশের। দাবা আঙিনায়  'দাদি' বলে পরিচিত পাওয়া কিংবদন্তি আন্তর্জাতিক মাস্টার রানি তার চলমান সময়ের হালচাল নিয়ে একান্তে কথা বলেছেন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে।

১৯৮৪ সালে অভিষেকের পর থেকে ২০২২ সাল ছাড়া প্রতিবারই দাবা অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন, এটা আপনার কাছে কি মানে বহন করে?

রানি হামিদ:  এটা খুব ভালো অনুভূতি। কারণ  দাবায় বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা একটা গর্বের বিষয়। এই ধাপে আমি এসেছি যোগ্যতা দিয়ে। বিশ্বের নানান প্রান্তের খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলা খুব ভালো অনুভূতি।

জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে ৬ষ্ঠ অবস্থানে থেকে ৪৫তম দাবা অলিম্পিয়াড প্রায় হাতছাড়া হতে বসেছিলো, পরে টানা ছয়টা জিতলেন। ৮১ বছর বয়েসে এই পারফরম্যান্সের অনুভূতি কেমন?

রানি: আমি নিজেও এই পারফরম্যান্সে অবাক। ৬টা ম্যাচে কোন ভুল না করে জিতেছি। যদিও আজ ভুল করেছি (১০ম রাউন্ডে)। আমি ১০ম রাউন্ডে অন্তত ড্র করতে পারতাম। দাবার কক্ষে আমার গরম লাগছিল এটা একটা কারণ হতে পারে হারার।

আপনি ১৮ বছরের তরুণীর মতন পারফর্ম করছেন। কেমন মনে হয়?

রানি: (জোরা হাসি) কারণ আমি দাবা খেলাটা ভালোবাসি, উপভোগ করি খেলতে। আমি থামার কথা ভাবি না। দাবা খেলা নিয়ে আমার প্রেরণার ঘাটতি নেই। আমি এখনো পারফর্ম করছি কারণ আমি খেলাটা ভালোবাসি। আমি সব কিছু ভুলে যাই (ফল) কারণ আমি খেলি স্রেফ মজার জন্য। আমি প্রতিপক্ষ নিয়ে ভাবি না। কখনো জানিই না প্রতিপক্ষ কে।

৪০ বছর ধরে খেলার কারণে আপনি অন্য দেশের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন। আপনাকে নিয়ে তাদের প্রতিক্রিয়া কি?

রানি:  আমি ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়ন সুসান কাথরুনের বিপক্ষে খেলেছি। ও অনেক বিখ্যাত খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক আছে। আজ সুসান পলগার (হাঙ্গেরাইন আমেরিকান গ্র্যান্ডমাস্টার) আমার সঙ্গে ছবি তুলে তার এক্স একাউন্টে আপলোড করল। দাবা অলিম্পিয়াডে সবাই আমাকে ইতিবাচকভাবে দেখে।

আপনার সবচেয়ে স্মরণীয় দাবা অলিম্পিয়াড কোনটা?

রানি: ১৯৮৪ সালে গ্রিসে আমি প্রথম দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নেই। তখন উন্মুক্ত বিভাগে বিশ্বের ৪ নম্বর নিউজিল্যান্ডের গ্র্যান্ডমাস্টারের সঙ্গে দীর্ঘ সময় লড়াই করি। ওই টুর্নামেন্ট আমার জন্য স্মরণীয়। মজার একটা ঘটনা ঘটেছিল। আমি প্রথমে সেখানে প্রবেশের জন্য অনুমতি পাচ্ছিলাম না। আমাকে জানানো হয় ওটা শুধু পুরুষ খেলোয়াড়দের জন্য, ভাষাগত কারণে সমস্যা হচ্ছিলো। আমাকে দীর্ঘ সময় কথা বলে পরে বোঝাতে হয়েছিলো যে আমি উন্মুক্ত বিভাগে পুরুষ খেলোয়াড়ের বিপক্ষেই খেলব।

২০১৮ সালের অলিম্পিয়াডও আমার জন্য বিশেষ। কারণ আমাকে সাংবাদিক বাছাই পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছিলো

বর্তমান দাবাড়ু যেমন নওশিন আনজুম, ওয়ালিজাহ আহমেদ, ওয়াদিফা আহমেদ, নুসরাত জাহান আলোরা দাবা অলিম্পিয়াডে অংশ নিল। তাদের পারফরম্যান্স কীভাবে মূল্যায়ন করবেন। তাদের সঙ্গে আগের খেলোয়াড়দের তফাৎ দেখেন?

রানি: তারা সাম্প্রতিক সময়ে অনেক উন্নতি করেছে এবং আরও করতে পারবে। প্রতিপক্ষের সঙ্গে তারা ভালো লড়াই করে। তারা হারলেও সত্যিই খুব ভালো লড়াই করতে পারে। কারণ ফেডারেশন থেকে তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে।

আমি কোন পার্থক্য দেখি না (আগের সঙ্গে বর্তমান খেলোয়াড়দের)। মান প্রায় একই আছে। এই মেয়েরা যদি আইএম, জিএম নর্ম অর্জন করতে পারে তাহলে আরও ধারালো আরও পরিণত হবে আগামীতে।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

5h ago