সুপার ওভারের রোমাঞ্চে পাকিস্তানকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস

রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নতুন ইতিহাস গড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

লক্ষ্য তাড়ায় জয়টা মূল ম্যাচেই পেতে পারত যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের বোলাররা শেষদিকে ঘুরে দাঁড়ানোয় তা পূরণ হয়নি সহ-আয়োজকদের জন্য। তবে দারুণ ব্যাটিংয়ে স্কোর সমান করে তারা। অবধারিতভাবে ম্যাচ গড়ায় সুপার ওভারে। সেখানে মোহাম্মদ আমিরের এলোমেলো ওভারে ১৮ রান তুলে নেয় দলটি। সে লক্ষ্য তাড়ায় ১৩ রানের বেশি করতে পারেনি পাকিস্তান। এতে চমক দেখিয়ে রোমাঞ্চকর এক জয় তুলে নতুন ইতিহাস গড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

বৃহস্পতিবার ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের 'এ' গ্রুপের ম্যাচে সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারায় যুক্তরাষ্ট্র। মূল ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৫৯ রান তোলে পাকিস্তান। জবাবে পুরো ওভার খেলে ৩ উইকেট হারিয়ে সমান রান তোলে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর সুপার ওভার শেষে স্বাগতিকরা মাতে তাদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় জয়ের সুতীব্র উল্লাসে।

আমিরের করা সুপার ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি আদায় করে নেন অ্যারন জোন্স। তবে পাকিস্তানের হতাশার বাড়িয়ে অতিরিক্ত খাত থেকেই সাতটি রান তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। বাঁহাতি আমিরের তিনটি ওয়াইড থেকে আরও চার রান দৌড়ে দেন জোন্স ও হারমিত সিং। শেষ পর্যন্ত ১৮ রান তুলে নেয় যুক্তরাষ্ট্র।

১৯ রানের কঠিন লক্ষ্য নিয়ে প্রথম বলেই তালগোল পাকিয়ে ফেলে পাকিস্তান। অফের দিকে সরে গিয়ে ইফতিখার আহমেদ ব্যাটে-বলে সংযোগ করতে না পারায় হয়নি ওয়াইড, ডট বল। পরের বলে চার মারেন তিনি। আরেকটি ওয়াইডের পর অবশ্য সৌরভ নেত্রভালকরের তৃতীয় বলে ক্যাচ তুলে দেন। এরপর শাদাব খান নেমে প্রথম বলে লেগ বাইতে বাউন্ডারি মারলেও পরে আর কিছু করতে পারেননি। এতে পাঁচ রান দূরেই থামে পাকিস্তান। আর অন্যপ্রান্তে থাকা ফখর জামান স্ট্রাইকই পাননি। চলতি বিশ্বকাপে এর মধ্যেই দ্বিতীয় সুপার ওভার দেখল সমর্থকরা। এর আগে ওমানের বিপক্ষে সুপার ওভারে জয় পেয়েছিল নামিবিয়া।

এর আগে মূল ম্যাচে লক্ষ্য তাড়ায় নেমে শুরুটা দারুণ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ৩৬ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন দুই ওপেনার স্টিভ টেইলর ও অধিনায়ক মোনাঙ্ক প্যাটেল। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে টেইলরকে উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের ক্যাচে পরিণত করে এ জুটি ভাঙেন নাসিম শাহ। আন্দ্রেয়াস গাউসকে নিয়ে আরও একটি দারুণ জুটি গড়েন মোনাঙ্ক। ৪৮ বলে ৬৮ রান যোগ করেন স্কোর বোর্ডে। তাতেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দলটি।

গাউসকে বোল্ড করে দিয়ে এ জুটি ভাঙেন হারিস রউফ। এরপর দ্রুত মোনাঙ্ককে তুলে নেন মোহাম্মদ আমির। তাতে ম্যাচে ফেরে পাকিস্তান। কিন্তু তাদের হতাশা বাড়াতে থাকেন নিতিশ কুমার ও অ্যারন জোন্স। চতুর্থ উইকেটে ৪৮ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটার। শেষ ওভারে ১৫ তুলে পাকিস্তানের সম পরিমাণ রান তুলে নিলে সুপার ওভারে গড়ায় ম্যাচটি।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫০ রান করেন মোনাঙ্ক। ৩৮ বলে ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় এই রান করেন তিনি। ২৬ বলে ২টি করে চার ছক্কায় ৩৬ রান করে অপরাজিত থাকেন জোন্স। গাউসের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। শেষ দিকে কার্যকরী ১৪ রান করেন নিতিশ কুমার।

এর আগে টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে শুরুতেই চেপে ধরেছিল যুক্তরাষ্ট্র। পাওয়ার প্লের মধ্যেই তুলে নেয় তিনটি উইকেট। স্লিপে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ  ধরে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ফিরিয়ে ওপেনিং জুটি ভাঙেন স্টিভ টেইলর। স্কোরবোর্ডে আর পাঁচ রান যোগ হতেই উসমান খানকে তুলে নেন নশতুশ কেনজিগে।

পঞ্চম ওভারে পাক শিবিরে আঘাত হানেন আলী খান। তিনি ফেরান ফখর জামানকে। ফলে দলীয় ২৬ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে বড় চাপে পড়ে পাকিস্তান। অপর প্রান্ত আগলে রাখলেও দারুণ সংগ্রাম করতে থাকেন অধিনায়ক বাবর আজম। প্রথম ২৪ বলে মাত্র ৯ রান তোলেন অধিনায়ক।

তবে উইকেটে নেমেই কিছুটা হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন শাদাব খান। তার সঙ্গে হাত খুলে খেলতে চেষ্টা করেন বাবরও। চতুর্থ উইকেটে জুটিতে ইনিংস মেরামত করে এগিয়ে যেতে থাকেন এ দুই ব্যাটার। ৪৮ বলে যোগ করেন ৭২ রান। শাদাবকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন কেনজিগে। স্কুপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়েন নেট্রাভালকারের হাতে। পরের বলে আজম খানকে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন এই পেসার।

এরপর ইফতিখার আহমেদের সঙ্গে ২৭ রানের জুটি গড়ে জাসদিপ সিংয়ের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন বাবর। এরপর খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি ইফতিখারও। শেষ দিকে শাহিন শাহর ঝড়ো ইনিংসে লড়াকু পুঁজিই পায় পাকিস্তান।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন বাবর। ৪৩ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় এই রান করেন তিনি। ২৫ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন শাদাব। ৩টি ছক্কার সঙ্গে ১টি চার মারেন এই অলরাউন্ডার। ১৪ বলে ৩টি চারের সাহায্যে ২৩ রান করেন আফ্রিদি। ১৮ রান করেন ইফতিখার।

.

Comments

The Daily Star  | English
Yunus-led interim govt takes charge

2 months of interim govt: Hopes still persist

The interim government had taken oath two months ago with overwhelming public support and amid almost equally unrealistic expectations.

6h ago