বাংলাদেশে এমন কিছু অপেক্ষা করছে, জানত ভারত!

ঘরের মাঠে বাংলাদেশের সর্বশেষ দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে হার খুঁজতে হলে যেতে হবে ২০১৬ সালের অক্টোবরে। সেবার ইংল্যান্ডের কাছে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে দুইবার হারের অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু নিজ মাঠে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে স্বাগতিকদের টলাতে পারেনি আর কেউ। ঘরের মাঠে সাকিব আল হাসান, লিটন দাসদের রেকর্ড সম্পর্কে জানত ভারত। এখানে এসে যে এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে, তাও জানা ছিল তাদের।
জেনেও অবশ্য লাভ হয়নি। ২০১৫ সালের পর আরেকটি ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এসে একই অভিজ্ঞতা হয়েছে শক্তিশালী প্রতিবেশী দেশটির। এক ম্যাচ আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে বাংলাদেশ এখন ভারতকে হুঙ্কার দিচ্ছে হোয়াইটওয়াশের।
দলের কয়েকজন প্রথম সারির বোলারের অভাব আর হার্দিক পান্ডিয়া, সূর্যকুমারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু তারকাকে বিশ্রামে রেখে খেলতে এসেছিল ভারত। তবু বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মাদের নিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী স্কোয়াড ছিল তাদের।
ভারতের তারকা ব্যাটিং লাইনআপকে দুই ম্যাচেই ঘোল খাইয়েছে বাংলাদেশের বোলিং। প্রথম ম্যাচে ১৮৬ রানে আটকে ১ উইকেটে ম্যাচ জেতার পর দ্বিতীয় ম্যাচে ২৭১ রান দিয়েও শেষ দিকের নাটকীয়তায় ম্যাচ নিজেদের করে নেন মেহেদী হাসান মিরাজরা।
শনিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শেষ ম্যাচে হোয়াইটওয়াশের বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার মিশন ভারত। স্বাগতিকরা স্বপ্ন দেখছে প্রতিপক্ষকে একদম আউটপ্লেইড করার।
শুক্রবার লম্বা অনুশীলন সেরে গণমাধ্যমে হাজির হয়ে অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দর জানান, এমন কিছু হতে পারে সেই শঙ্কা ছিল তাদের, 'সত্যি বলতে বাংলাদেশ খুব ভালো দল। বিশেষ করে ঘরের মাঠে। রেকর্ডও তাই বলে। গত কয়েকবছরে তারা শুধু একটি সিরিজ হেরেছে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যে দলের বিপক্ষেই খেলেছে, ঘরের মাঠে তারা খুবই সফল। এখানে আসার আগেই আমরা জানতাম তাদের দিক থেকে কী হতে পারে।'
সুন্দরের মতে বাংলাদেশ যেমন ছন্দে আছে, আসছে ওয়ানডে বিশ্বকাপেও বড় সুযোগ তাদের, 'আমার মতে, উপমহাদেশে বাংলাদেশ খুবই ভালো দল। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তারা খুব ভালো খেলেছে। গত কয়েকবছর ধরেই তারা দারুণ করছে। আমি নিশ্চিত সামনের বিশ্বকাপে একটি ভালো টুর্নামেন্টের সুযোগ তারা নিতে চাইবে।'
দুই ম্যাচেই আরেকটু এদিক-সেদিক হলে অবশ্য হতাশায় পুড়তে হতো স্বাগতিকদেরও। প্রথম ম্যাচে ১৮৬ রান তাড়ায় নেমে ১৩৬ রানেই পড়ে গিয়েছিল ৯ উইকেট। পরে শেষ উইকেটে মোস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে ৫১ রানের অবিশ্বাস্য জুটিতে নায়ক বনেন মিরাজ। পরের ম্যাচে মিরাজের সেঞ্চুরিতে ২৭১ রান করে প্রতিপক্ষের উইকেট ফেলে চাপ বাড়ালেও শেষ দিকে রোহিত শর্মার নায়কোচিত ব্যাটিংয়ে হাতছাড়া হতে বসেছিল স্বপ্ন। শেষ পর্যন্ত তাতেও জয় এসেছে ৫ রানের। সুন্দর জানান কিছু ক্রিটিক্যাল মুহূর্তের তালগোল পাকানোর খেসারত দিয়েছেন তারা, 'দুই ম্যাচেই আমাদের সুযোগ ছিল। প্রথম ম্যাচে ৫০ (৫১) রানের মতো দরকার ছিল তাদের, হাতে এক উইকেট। আমাদের ভালো সুযোগ ছিল, শেষ ম্যাচেও। প্রথম ইনিংসে ৭০ রানে তারা ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। এরপর শ্রেয়াস ও আকসার যেভাবে ব্যাট করেছিল, আমরা ভেবেছিলাম ভালভাবেই জিতে যাবো।'
'এরপর রোহিত ভাই যে ইনিংস খেলেছে, অবিশ্বাস্য। হ্যাঁ, আমাদের সুযোগ ছিল। কেবল ক্রিটিকাল মোমেন্ট জেতা ও এক দুইটা ব্যাপার ঠিকভাবে করতে হতো। আমরা ভালো ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট খেলতে চাই। আমি নিশ্চিত সময়ের সঙ্গে আমরা ভালো খেলবো।'
সিরিজ জেতার আর সুযোগ নেই। তবে র্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের কাছে হোয়াইটওয়াশ ভারতের জন্য যথেষ্ট বিব্রতিকর পরিস্থিতি এনে দিতে পারে। শেষটায় অন্তত তাই জিততে মরিয়া সফরকারীরা, 'অবশ্যই, আমরা জিততে চাই। আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে চাই। কিছু ব্যাপার আমাদের করতে হবে। প্রসেসে মনোযোগ দেবো। এবং ম্যাচটা জিতে ওয়ানডে সিরিজটা চূড়ায় থেকে শেষ করতে চাই।'
তৃতীয় ম্যাচে নিয়মিত অধিনায়ক রোহিত শর্মার ছিটকে যাওয়ায় নেতৃত্ব দেবেন লোকেশ রাহুল। একাদশে একাধিক বদল নিশ্চিত তাদের।
Comments