ইশানের রানও করতে পারেনি বাংলাদেশ

Shakib Al Hasan
আউট হয়ে ফিরছেন সাকিব আল হাসান। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় হোয়াইটওয়াশের মিশনে ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু চট্টগ্রামের ব্যাটিং স্বর্গে খেলতে নেমে সেই প্রাপ্তির কাছাকাছিও যাওয়া হয়নি। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে ইশান কিশান করলেন ২১০ রান, গড়লেন রেকর্ড। বিরাট কোহলিও পেলেন সেঞ্চুরি। ভারত ছাড়িয়ে গেলো চারশো। যার জবাব দিতে নেমে দুশো রানও করতে পারেনি লিটন দাসের দল। 

রোমাঞ্চকর প্রথম দুই ম্যাচের পর শনিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডে হলো একদম একপেশে। তাতে বাংলাদেশকে ২২৭ বিশাল ব্যবধানে হারালো ভারত। ওয়ানডেতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম হার। এর আগে ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩৩ রানে হেরেছিল টাইগাররা।

বড় হারে তিন ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ২-১ ব্যবধানে। আগে ব্যাট করে ইশানের ১৩১ বলে ২১০ রানের ইনিংসই গড়ে দেয় ম্যাচের গতিপথ। কোহলিও খেলেন ১১৩ রানের ইনিংস, ভারত করে ৪০৯ রান। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে যা কোন প্রতিপক্ষের সর্বোচ্চ। জবাব দিতে গিয়ে  ১৮২ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।

India won
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

৪১০ রানের পাহাড় ডিঙাতে গিয়ে উড়ন্ত শুরু আনেন লিটন ও এনামুল হক বিজয়। তবে শুরুটা ধরে রাখতে পারেননি তারা। পঞ্চম ওভারে দলের ৩৩ রানে পড়ে প্রথম উইকেট। ৭ বলে এক ছক্কায় ৮ করে এনামুল বিদায় নেন আকসার প্যাটেলের বলে। ইনসাউট আউট খেলতে গিয়ে পুরো ব্যাটে নিতে পারেননি। সহজ ক্যাচ যায় ফিল্ডারের হাতে।

লিটন ছিলেন আগ্রাসী, আভাস দিচ্ছিলেন বড় রানের। চার বাউন্ডারি, এক ছক্কায় লিটনের দৌড় থামান মোহাম্মদ সিরাজ। তার গতির তারতম্যে কাবু হয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ক্যাচ দেন মিডঅফে। ২৬ বলে ২৯ করেন তিনি।

পুরো সিরিজে ব্যর্থ অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ব্যাটও। এই ম্যাচে সুযোগ ছিল নির্ভার ব্যাট করে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। কিন্তু আকসারের বাঁহাতি স্পিন সুইপ করতে গিয়ে অফ স্টাম্প থেকেও সরে গিয়েছিলেন। বল তার পেছনে গিয়ে আঘাত হানে লেগ স্টাম্পে।

India
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

তিনে নেমে সাকিব শুরু থেকেই চালিয়ে খেলতে থাকেন। ইয়াসির আলির সঙ্গে জমে যাচ্ছিল তাদের  জুটি। তবে ম্যাচ জেতার চেষ্টার ছাপ দেখা যাচ্ছিল না তাদের ব্যাটে। রয়েসয়ে ব্যাট করে একটা সম্মানজনক রানের খোঁজ দেখাচ্ছিল তাদের ব্যাটে।

ওয়ানডে দলে ফিরে কিছু রান করে নিজের জায়গার দাবি জানাতে পারতেন ইয়াসির। নিজ মাঠে তিনি সুযোগ করেন হাতছাড়া। উমরান মালিকের গতিতে পরাস্ত হয়ে এলবিডব্লিউতে বিদায় নেন ৩০ বলে ২৫ করা ব্যাটার। ভাঙে ৪৫ বলে ৩৪ রানের জুটিও।

সাকিব এগুচ্ছিলেন ফিফটির দিকে। কিন্তু বাঁহাতি রিষ্ট স্পিনার কুলদীপের বল বাছ-বিচার করতে না পারে বিদায় তার। কুলদীপের বলে প্রায় নাথিং শটে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হন ৫০ বলে ৪৩ করা সাকিব। আগের ম্যাচে রান করা মাহমুদউল্লাহ এদিন পারেননি। প্রথম দুই ম্যাচে বাংলাদেশকে জেতানোর হিরো মেহেদী হাসান মিরাজও শেষটায় এসে ব্যর্থ। এরপর বাংলাদেশের ইনিংসে খুব বেশি এগুনোর বাস্তবতা ছিল না। তাসকিন আহমেদ-মোস্তাফিজুর রহমান মিলে ম্যাচটা কিছুটা লম্বা করেছেন, এটুকুই।

দুপুরে  টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে শিখর ধাওয়ানের উইকেট হারালেও ইশানের ব্যাটে পিষ্ট হতে থাকে বাংলাদেশ। কোহলিকে এক পাশে রেখে চার-ছয়ের বৃষ্টি শুরু করেন তিনি।

দ্রুতই শরীরী ভাষায় নেতিয়ে পড়ে বাংলাদেশের। চড়ে বসা ইশানের ব্যাটের ঝাঁজ অসহায়ভাবে সহ্য করতে থাকেন বোলাররা।

৪৯ বলে ফিফটি স্পর্শ করেছিলেন ইশান, পরের ৩৬ বলে করে ফেলেন সেঞ্চুরি। সেঞ্চুরির পর তার ব্যাট যেন আরও দুর্বার। পুল, ফ্লিক, ড্রাইভের পসরায় গ্যালারি থেকে বল আনার কাজে ব্যস্ত হতে হয় ফিল্ডারদের। একশো থেকে দুইশো রানে যেতে ইশান খেলেন স্রেফ ৪১ বল।

মাত্র ১২৬ বলে ডাবল সেঞ্চুরি করে গড়েন দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড। ১৩১ বলে ২১০ রানের ইনিংসে মেরেছেন ২৪ চার আর ১০ ছক্কা। অর্থাৎ ১৫৬ রানই আসে বাউন্ডারি থেকে। ওয়ানডেতে ডাবল সেঞ্চুরি পেতে সবচেয়ে কম ম্যাচ খেলা ব্যাটসম্যানও তিনি।

ইশানের বিস্ফোরক দিনে চাপা পড়ে যায় কোহলির দারুণ সেঞ্চুরি। ১ রানে জীবন পেলেও পরে সামলে নিয়ে ভারতের সেরা ব্যাটার খেলেন চোখ ধাঁধানো ইনিংস। ওয়ানডেতে ৪৪তম ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৭২তম সেঞ্চুরির পর অবশ্য বেশি টেকেননি। তবে এই দুজনের ব্যাটেই ভারত পেয়ে যায় চারশো ছাড়ানোর ভিত।

ইনিংস বিরতির সময়ই এই ম্যাচের ফয়সালা হয়ে গিয়েছিল। সিরিজ জিতে যাওয়া বাংলাদেশ নির্ভার হয়ে ব্যাটিংয়ে কিছু রান করলে দর্শকরা পেত বিনোদন। সেই চেষ্টায় গিয়ে হতাশ করেন লিটন, সাকিবরা। ব্যাট করার জন্য বেশ ভালো উইকেটে প্রতিপক্ষের একজন ডাবল সেঞ্চুরি, ও একজন সেঞ্চুরি করলেও বাংলাদেশ কেউ ফিফটিও করতে পারেননি। নিশ্চিতভাবেই তাই সুযোগ হাতছাড়ার আক্ষেপে পুড়বেন তারা।

 

Comments

The Daily Star  | English

The elephant in the room no one is talking about

Reform of political parties is of urgent need

10h ago