একাধিক সুযোগ হাতছাড়ায় বাংলাদেশের আক্ষেপের দিন

Taijul Islam
উইকেট নিয়ে তাইজুল ইসলামের উল্লাস ছবি: ফিরোজ আহমেদ

দিনটা হতে পারত নিখাদ বাংলাদেশের। পঞ্চাশের ভেতর ভারতের তিন উইকেট তুলে নেওয়ার পর বিপদজনক রিশভ পান্তকেও ফেরানো গিয়েছিল সময়মতো। চেতশ্বর পূজারা আর শ্রেয়াস আইয়ারও ফিরতে পারতেন দ্রুত। এই দুজনকেই বাংলাদেশের ফিল্ডাররা জীবন দিলেন তিনবার। তারা তা কাজেও লাগালেন বেশ ভালোভাবে।

বুধবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৯০ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ২৭৮ রান। ২০৩ বলে সর্বোচ্চ  ৯০ রান করে দিনের একদম শেষভাগে আউট হয়েছেন পূজারা। তার উইকেট পাওয়ায় মিলেছে কিছুটা স্বস্তি। তবে আরেক পাশে তিনবার জীবন পেয়ে অস্বস্তির কাটা হয়ে টিকে আছেন ৮২ রান  করা শ্রেয়াস।

পুরো দিনে দলের সেরা বোলার তাইজুল ইসলাম। ৩০  ওভার হাত ঘুরিয়ে ৮৪  রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৭১ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। বাকি উইকেটটি পান খালেদ আহমদ।

টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক শুরু আনেন লোকেশ রাহুল-শুভমান গিল। প্রথম ঘণ্টায় বাংলাদেশের পেসারদের বোলিংও ছিল বেশ সাদামাটা। দুজনেই হয়ে গিয়েছিলেন থিতু। উইকেটে কিছু অসমান বাউন্স থাকলেও তাদের টিকে থাকায় সমস্যা মনে হচ্ছিল না।

Cheteshwar Pujara & Shreyas Iyer
১৪৯ রানের জুটি গড়েন পূজারা ও শ্রেয়াস। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ভারতের দুই ওপেনারই ফেরেন নিজেদের ভুলে। তাইজুলের বলে স্কুপ করতে খেলেন আলতোভাবে, লেগ স্লিপে তার সহজ ক্যাচ ধরেন ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বি। পুরো দিনে উঠা চার ক্যাচের মধ্যে এই একটাই নিতে পারে বাংলাদেশ।

৪০ বলে ২০ করে গিলের বিদায়ের খানিক পর থামেন অধিনায়ক রাহুল। খালেদ আহমেদের নির্বিষ এক ডেলিভারি ইতি টানে তার। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল আয়েশি ঢঙে খেলতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে আনেন তিনি। ৫৪ বলে ৩ চারে ২২ করেন রাহুল। পরের ওভারেই সবচেয়ে বড় সাফল্য পায় বাংলাদেশ। তাইজুলের দারুণ শার্প টার্ন করা বলে কাবু হয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন বিরাট কোহলি। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি ৫ বলে ১ রান করা ভারতের সেরা ব্যাটারের।

৪৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে হকচকিয়ে যাওয়া ভারত ঘুরে দাঁড়ায় পান্তের ব্যাটে। আগ্রাসী বাঁহাতি ব্যাটার ক্রিজে নেমেই খেলতে থাকেন শট, রান আনতে থাকেন দ্রুত। চাপ অনেকটা আলগা হয়ে যায় তার ব্যাটে।

৩ উইকেটে ৮৫ রান নিয়ে লাঞ্চে যাওয়া ভারত দ্বিতীয় সেশনের শুরুতেই হারাতে পারত পূজারাকে। ১২ রানে থাকা ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটার ইবাদত হোসেনের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে। কিপার সোহান ডান দিকে ঝাঁপিয়ে বল স্পর্শ করতে পারলেও জমাতে পারেননি গ্লাভসে। এই ক্যাচের মূল্য যে কত পরে বাকি দিনে বুঝিয়ে দেন পূজারা।

দ্বিতীয় সেশনে বাংলাদেশ নিতে পারে একটাই উইকেট, ৩০ ওভারে রান আসে ৮৯। সেই উইকেটটা ছিল ভীষণ দামি। আগ্রাসী মেজাজ নিয়ে বোলারদের উপর চেপে বসেছিলেন পান্ত। কোন বোলারকেই পাত্তা দিচ্ছিলেন না। মিরাজকে মিড উইকেট দিয়ে চার-ছয় মারার পর ভেতরে ঢোকা একটা নিচু বাউন্সের বল পড়তে ভুল করেন। তার ব্যাট প্যাড গলে তা গিয়ে আঘাত হানে স্টাম্প। ৪৫ বলে ৬ বাউন্ডারি, ২ ছক্কায় ৪৫ করে থামেন ভারতের কিপার ব্যাটার।

এরপরই জুটি বেধে বাংলাদেশকে হতাশ করতে থাকেন পূজারা-শ্রেয়াস। ক্রিজে এসে চতুর উপস্থিতি দিয়ে থিতু হতে সময় নেননি শ্রেয়াস। থিতু হয়েই অবশ্য বিদায় নিতে পারতেন। ৪৮তম ওভারে সাকিব আল হাসানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন তিনিও। এবারও কিপার সোহান তা হাতে রাখতে পারেননি। তখন ৩০ রানে ছিলেন শ্রেয়াস।

ফিফটির আগে তিনি আর দেননি কোন সুযোগ। অনায়াসে চালাতে থাকেন ব্যাট। তবে অতি আত্মবিশ্বাসের তোড়ে মিরাজের বলে আরেকবার ক্যাচ দিয়েছিলেন। ৬৭ রানে ওয়াইড লং অন দিয়ে উড়িয়ে ছক্কা মারতে গিয়েছিলেন। বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়ানো ইবাদত হোসেন ছেড়ে দেন তার একদম লোপ্পা ক্যাচ।

ইবাদত দিনের শেষভাগে এসে আরেক দফা আক্ষেপে পুড়েন। ৭৭ রানে তার বলে বোল্ড হয়ে বিদায় নিতে পারতেন শ্রেয়াস। কিন্তু বল শ্রেয়াসকে পরাস্ত করে স্টাম্পে আঘাত হানলেও অবিশ্বাস্যভাবে বেল পড়েনি।

পরের ওভারে তাইজুল দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন সেঞ্চুরির কাছে থাকা পূজারাকে। এতে ভাঙে ৩১৬ বলে ১৪৯ রানের জুটি। 

নতুন ব্যাটার আকসারও ফিরতে পারেন ১ রান করে। তাইজুলের বলে ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ব্যাটে-প্যাডে খেলে ক্যাচ দিয়েছিলেন। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নেয়নি বাংলাদেশ। আল্ট্রা এজ প্রযুক্তিতে দেখা যায় রিভিউ নিলে উইকেটটি পেতে পারত বাংলাদেশ। দিনের একদম শেষ বলে তাকে অবশ্য ফেরাতে পারেন মিরাজ।

Comments

The Daily Star  | English

Step up diplomacy as US tariff clock ticks away

Bangladesh must intensify trade diplomacy to protect garment exports from steep US tariffs as the clock runs down on a three-month reprieve, business leaders warned yesterday.

10h ago