চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি

চ্যালেঞ্জিং উইকেটে ভারতের চারশো ছাড়ানো পুঁজির জবাব দেওয়ার কোন অবস্থাই দেখাতে পারল না বাংলাদেশ। দুই পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ও উমেশ যাদব মিলে ছেঁটে ফেলেন টপ অর্ডার। এরপর বাংলাদেশ ইনিংসে হানা দেন রিষ্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব। তাদের তোপে ব্যাটিং ধসে দ্বিতীয় দিন শেষেই বড় হারের শঙ্কায় সাকিব আল হাসানের দল।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিন যেন বাংলাদেশের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। ভারতের ৪০৪ রানের পর দিনশেষে ৮ উইকেটে ১৩৩ রান করেছে বাংলাদেশ। ফলোঅন এড়াতেই এখনো চাই ৭২ রান।
১০ ওভার বল করে ৩৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের মূল হন্তারক রিষ্ট স্পিনার কুলদীপ। ১৪ রানে ৩ উইকেট নেন সিরাজ।
সকালের সেশনে ৩০ ওভারে ভারতের কেবল ১ উইকেট ফেলতে পারে বাংলাদেশ, রান উঠে ৭০। ৮ম উইকেটে ৯২ রান যোগ করে ফেলেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন ও কুলদীপ। দ্বিতীয় সেশনে গিয়ে ইনিংস থামায় তারা।

চা-বিরতির পৌনে এক ঘণ্টা আগে নেমে সিরাজের করা ইনিংসের প্রথম বলেই খোঁচা মেরে বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বা দিকে ঝাঁপিয়ে তার ক্যাচ গ্লাভসে জমান রিশভ পান্ত। এই নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দ্বিতীয়বার গোল্ডেন ডাকের শিকার হলেন তিনি।
তিনে সুযোগ পেয়েছিলেন ইয়াসির আলি রাব্বি, বড় সুযোগ ছিল তার সামনে। থিতু হওয়ার চেষ্টায় স্ট্রাইক নিয়ে খেলছিলেন। কিন্তু উমেশের বল আলতো ঢঙে খেলতে গিয়ে স্টাম্পে টেনে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১৭ বলে ৪ রান করেন ইয়াসির।
টেস্টে এই প্রথমবার চার নম্বরে খেলতে নামেন লিটন দাস। অভিষিক্ত জাকির হাসানকে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় চালান তিনি। থিতু হতে অবশ্য সময় লাগেনি তার। দ্রুত পেয়ে যান বাউন্ডারির দেখা। উমেশের উপরই লিটন ঝাঁজ মিটিয়েছেন। পুল, লেট কাট, কাভার ড্রাইভে টানা তিন বলেই মারেন তিন চার।
চা-বিরতির পর নেমে আর লিটন আগাতে পারেননি। আর কোন রানই যোগ করতে পারেননি তিনি। সিরাজ তাকে টলাতে স্লেজিং করে খ্যাপানোর চেষ্টা করেন, কিছুটা সম্ভবত মনোযোগও নড়ে যায় লিটনের। ঠিক পরের বলেই নিচু হওয়া বল আলতোভাবে খেলতে গিয়ে পুরো ব্যাটে নিতে পারেননি, নিচের কানায় লেগে বল আঘাত হানে তার স্টাম্পে।
জাকিরকে মনে হচ্ছিল সাবলীল, থিতু হয়ে পড়েছিলেন তিনি। জায়গা পেলেই অশ্বিনকে কাট করতে পারছিলেন। তবে থিতু হওয়ার পরই শুরু হয় আসল কাজ, সেখানে মনোযোগ ধরে রাখতে ব্যর্থ এই বাঁহাতি। সিরাজের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৪৫ বলে ২০ করা জাকির। এরপর বাকিটা সময় নড়বড়ে অবস্থায় কেবল কাঁপুনিয়ে দেখা গেছে স্বাগতিকদের ইনিংসে।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান পাঁচে নেমে দলকে ভরসা দিতে পারেননি। থিতু হওয়ার চেষ্টায় সময় নিচ্ছিলেন, কিন্তু ধুঁকছিলেন বিস্তর। বল হাতে নিয়ে তার ভোগান্তির ইতি টানেন কুলদীপ।
বাঁহাতি রিষ্ট স্পিনারের বল এগিয়ে এসে ফ্লিকের মতো খেলতে গিয়েছিলেন, লেন্থ টেনে দেওয়া বলে আউট সাইড এজ হয়ে সাকিবের ক্যাচ যায় স্লিপে। ২৫ বলে ৩ রান করেন তিনি।
ক্রিজে এসেই যাই যাই করছিলেন নুরুল হাসান সোহান। কুলদীপের বল একদম বুঝতেই পারছিলেন না। আম্পায়ার্স কলে একবার বেঁচে গিয়েও ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। কুলদীপের বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দেন শর্ট লেগে।
শেষ ভরসা হয়ে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। কুলদীপের শিকার তিনিও। টার্ন করা বল খানিকটা সামনের পায়ে খেলতে গিয়ে পরাস্ত হয়ে পায়ে লাগান তিনি। রিভিউ নিয়ে এলবিডব্লিউতে তাকে ফেরায় ভারত। ৫৮ বল খেলে অভিজ্ঞ ব্যাটার করেন ২৮ রান। খানিক পর তাইজুলকে বোল্ড করে চতুর্থ উইকেট তুলেন কুলদীপ। দিনের শেষ ৯ ওভার ইবাদত হোসেনকে নিয়ে পার করে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

নবম উইকেটে তাদের জুটিতে ৫৪ বলে এসেছে ৩১ রান। ৩৫ বলে ১৬ রান নিয়ে ক্রিজে আছেন মিরাজ, ২৭ বল খেলে ১৩ রানে অপরাজিত ইবাদত।
Comments