মুমিনুলের ব্যাটে ফুরিয়ে না যাওয়ার গান

ক্যারিয়ারে চরম খাদের কিনারে থাকা পরিস্থিতিতে নেমে অবশেষে মুমিনুল নিলেন দায়িত্ব, প্রবল চাপ সরিয়ে দেখালেন এখনো তার উপর যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারে বাংলাদেশ।
Mominul Haque
৮৪ রানের ইনিংসের পথে মুমিনুল হক। ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক, চলতি বছর তার নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ডে টেস্ট জেতার মতো ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু রান খরায় মুমিনুল হকের অবস্থান গিয়ে ঠেকেছিল তলানিতে। নেতৃত্ব আগেই গিয়েছে, একাদশেও হারিয়ে ফেলেছিলেন জায়গা। তিনি ফুরিয়ে গেলেন কিনা এমন প্রশ্নও উঠেছিল জোরেশোরে। ক্যারিয়ারে চরম খাদের কিনারে থাকা পরিস্থিতিতে নেমে অবশেষে মুমিনুল নিলেন দায়িত্ব, প্রবল চাপ সরিয়ে দেখালেন এখনো তার উপর যথেষ্ট আস্থা রাখতে পারে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার মিরপুর টেস্টে প্রথম দিনে মাত্র ১৬ রানের জন্য দ্বাদশ সেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়েছেন মুমিনুল। আউট হয়েছেন রবীচন্দ্রন অশ্বিনের দারুণ ডেলিভারিতে। তার আগে ছিলেন দলের কাণ্ডারি। বাংলাদেশের করা ২২৭ রানের ৮৪ রানই যে এসেছে মুমিনুলের ব্যাটে। বাকিদের কেউ আর ত্রিশ পেরুতে না পারায় বাংলাদেশের ইনিংসকে মুমিনুলের একার লড়াইও বলা চলে।

অথচ এই টেস্টের একাদশেও থাকার কথা ছিল না তার। থাকার নিশ্চয়তাই বা পেতেন কীভাবে?  এর আগের এগারো ইনিংসের মধ্যে দশবারই  এক অঙ্কের ঘরে আউট হয়েছিলেন, এরমধ্যে চারবারই ছিল শূন্য রানে। রান পাচ্ছিলেন না ঘরোয়া ক্রিকেটে,  'এ' দলের হয়ে খেলতে নেমেও ব্যর্থতা সঙ্গী ছিল তার। কোথাও রান না পাওয়ায় সাবেক অধিনায়কের ভিতই নড়ে গিয়েছিল। এমনই ছন্দহীনতার চক্রে আটকে পড়েছিলেন যে তাকে প্রিয় মাঠ চট্টগ্রামেও একাদশে রাখার সাহস করেনি বাংলাদেশ।

চট্টগ্রাম টেস্টে তিন নম্বরে খেলানো হয়েছিল ইয়াসির আলি রাব্বিকে। কঠিন এই পজিশনে সুবিধা করতে পারেননি ইয়াসির। তার ব্যর্থতায় ঢাকায় সুযোগ পেয়ে যান মুমিনুল। এবার ব্যর্থ হলেও হয়ত লম্বা সময়ের জন্য দোয়ার বন্ধ হয়ে যেতে পারত। মাথার উপর চাপটা নিশ্চয়ই টের পেয়েছিলেন সাদা পোশাকে বাংলাদেশের সফল ব্যাটারদের একজন।

জাকির হাসানের বিদায়ের পর ১৫তম ওভারে ক্রিজে যান মুমিনুল। তিনি ক্রিজে আসার খানিক পর বিদায় নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরুর সময়টা একটু চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রতিকূল সময়েও  মুমিনুলকে অবশ্য সাবলীলই লেগেছে। সেই আগের সেরা সময়ের মতো আত্মবিশ্বাস নিয়ে মেরেছেন ফ্লিক, কুঁকড়ে না গিয়ে ড্রাইভে চড়ে বসতে চেয়েছেন বোলারের উপর।  জায়গা পেলেই মেরেছেন কাট।

দ্বিতীয় উইকেটে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের সঙ্গে জুটিতে প্রথম প্রতিরোধ। প্রথম সেশনের শেষ ঘণ্টা দলকে দেন ভরসা। লাঞ্চের পর ফিরে সাকিব আত্মঘাতী শটে বিদায় নিলে মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে জুটি গড়েন মুমিনুল।

কঠিন পরিস্থিতি পার করে তাদের দেখাচ্ছিল ফুরফুরে। মুমিনুলের সাবলীল ব্যাটে আস্থা পেয়ে সময় নিয়ে থিতু হয়ে পরে রান বাড়াতে থাকেন মুশফিকও। দ্বিতীয় সেশনে জয়দেব উনাদকাটের দারুণ এক বলে মুশফিকের ইতি, সমাপ্তি ৪৮ রানের জুটিও।

এবার লিটন দাসের সঙ্গে দ্রুত আরেকটি ৪০ পেরুনো জুটি। তাতে অবশ্যই লিটনই বেশি আগ্রাসী। ওয়ানডে মেজাজে খেলতে গিয়ে ২৬ বলে ২৫ করে বিদায় নেন লিটন।

মুমিনুল টিকে যান। অশ্বিন ফনা তুলছিলেন, বারবার বিপদে ফেলছিলেন। তাকেই আবার ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে বাউন্ডারি পাঠিয়েছেন। এর আগে উনাদকাটের বলে আপার কাট করেও চার পেতে দেখা গেছে তাকে। ৭৮ বলে ফিফটি তুলে নেওয়া মুমিনুল সতীর্থদের যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন অবিচল। দলের পরিস্থিতি পড়েছেন ভালোভাবে, নিজের উপর আস্থা রেখে নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন।

অশ্বিনকে লং অন দিয়ে উড়িয়ে ছক্কায় ছাড়িয়ে আশি। সেঞ্চুরি দিতে থাকে ঝিলিক। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে আসে তার চল্লিশ পেরুনো আরেক জুটি। বাকিদের মতো থিতু হয়ে মিরাজও থামেন অসময়ে। নুরুল হাসান সোহান, তাসকিন আহমেদরা তড়িঘড়ি ফিরে গেলেও  মুমিনুল ছিলেন। উইকেট ছুড়ে না দিয়ে লড়াইয়ের তীব্রতা ছিল তার ভেতর। এক প্রান্তে টানা উইকেট পতনে অবশ্য ছন্দ নষ্ট হয়েছে। মুমিনুলকেও কিছুটা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত নবম ব্যাটার হিসেবে ফেরেন অশ্বিনের দুর্দান্ত  এক ডেলিভারিতে। অফ স্টাম্পের বাইরে পড়ে টার্ন করে  বেরিয়ে যাচ্ছিল, মুমিনুল ছেড়ে দেওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন।  তবে বাড়তি বাউন্সের কারণে বল কিপারের গ্লাভসে জমা পড়ার আগে চুমু খেয়ে যায় মুমিনুলের গ্লাভসও। ১৫৭ বলে ১২ চার ও ১ ছক্কায় থামে মুমিনুলের ৮৪ রানের ইনিংস।

সেঞ্চুরির আক্ষেপ নিশ্চিয়ই হচ্ছে তার, দলের রান আরেকটু বাড়ানোর খচখচানিও পোড়াচ্ছে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে রান খরায় পায়ের নিচে নড়বড়ে হয়ে যাওয়া ভিত অন্তত এখন ফের মজবুত। ক্যারিয়ারে নতুন এবার প্রাণের মতো শক্তি পেতে পারেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটের মুমিনুলকে বাংলাদেশেরও ভীষণ দরকার।

Comments

The Daily Star  | English

Rooppur Nuclear Power Plant: First unit to start production in Dec

One of the two units of the Rooppur Nuclear Power Plant will be commissioned this December if transmission lines are ready although the deadline for the project’s completion has been extended to 2027.

4h ago