হৃদয়ভাঙা হারে বাংলাদেশের বিদায় 

দুই দলের জন্যই বাঁচা-মরার লড়াইয়ের আগে কথার লড়াইয়ে যে উত্তাপ উঠেছিল ব্যাটে-বলেও ছড়াল তা। বারবার রঙ বদলালো, মোড় নিল নাটকীয়তার। তবে উত্তেজনায় কাঁপা প্রহর পেরিয়ে শেষ পর্যন্ত আরেকটি হৃদয়ভাঙার কষ্টে পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। শেষ ওভারে রোমাঞ্চকর জয়ে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পা রাখল শ্রীলঙ্কা। 

বৃহস্পতিবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ২ উইকেটে হারিয়ে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের করা ১৮৩ রান তারা পেরিয়ে যায় ৪ বল আগে। 

বিশাল রান তাড়ায় শ্রীলঙ্কার হিরো কুশল মেন্ডিস। ৩৭ বলে ৬০ রান করার পথে চারটি জীবন পেলেন তিনি! অধিনায়ক দাসুন শানাকা খেললেন মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া ইনিংস। শেষটা করতে না পারলেও তার ৩৩ বলে ৪৫ রান দলের জয়ে রাখল দারুণ ভূমিকা।

লঙ্কানদের জিততে শেষ তিন ওভারে দরকার ছিল ৩৪ রান। লঙ্কানদের শেষ ভরসা তখন অধিনায়ক শানাকা। শেখ মেহেদীর প্রথম ৪ বল থেকে ৮ রান আনার পর পঞ্চম বলটা লঙ অন দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ধরা দেন তিন। বাংলাদেশেরও জয় তখন যেন মুঠোয়। কিন্তু কে জানত অপেক্ষা করছে আরও নাটকীয়তা।

যে ইবাদত শুরুতে ব্রেক থ্রো দিয়ে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেই ইবাদতই পরে হয়ে গেলেন খলনায়ক। ১৯তম ওভার করতে যখন আসেন তখন ম্যাচ জিততে ২৫ রান চাই শ্রীলঙ্কার। চামিকা করুনারত্নে প্রথম দুই বল থেকে ৪ রান নেওয়ার পর তৃতীয় বলে মারলেন বাউন্ডারি। সেই বলটি হলো 'নো'। পরের দুই বল থেকে আরও ৩ রান আসার পর পঞ্চম বলে স্ট্রাইক পেতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান করুনারত্নে। আবারও দাপুটে অবস্থানে চলে আসে বাংলাদেশ। কিন্তু অভিষিক্ত আসিতা ফার্নেন্দো এসে শেষ বলে মেরে দেন বাউন্ডারি।

শেষ ওভারে ৮ রানের প্রয়োজনে প্রথম বল থেকে আসে ১ রান। শেখ মেহেদীর পরের বলে আবার বাউন্ডারি মেরে দেন আসিতা। পরের বলে লং অনে ফেলে দুই রান নেওয়ার পর দেখা যায় বল হয়েছে নো। খেলা শেষ, উল্লাসে মাতোয়ারা তখন লঙ্কান ক্যাম্প।  পুরো ইনিংসে বাংলাদেশ 'নো' বল করল চারটি, ওয়াইড আটটি! 

১৮৪ রান তাড়ায় দ্বিতীয় ওভারের ফিরতে পারতেন কুশল। তাসকিনের বলে উইকেটের পেছনে তার ক্যাচ গ্লাভসে জমাতে পারেননি মুশফিকুর রহিম।

প্রথম তিন ওভারে আড়ষ্ট থাকলেও মোস্তাফিজ ও সাকিবের দুই ওভারে ১৩ ও ১৮ করে নিয়ে ৫ ওভারে ৪৫ করে ফেলে শ্রীলঙ্কা। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে প্রথম ব্রেক থ্রো আনেন ইবাদত। ইবাদতে বাউন্সারের গতি টের না পেয়ে পুল করে সহজ ক্যাচ দেন পাথুম নিশানকা।

ওই ওভারের শেষ বলেই আরেক উইকেট পেয়ে যান ইবাদত। চারিথা আসালাঙ্কা টাইমিংয়ের গড়বড়ে ধরা দেন লং অফে। ঝড় তুলা কুশল সপ্তম ওভারেও ফিরতে পারতেন। শেখ মেহেদীর বলে উড়াতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হয়ে ধরা দিয়েছিলেন মুশফিকের গ্লাভসে। কিন্তু পরে দেখা যায় ওভারস্টেপে 'নো' বল করেছিলেন মেহেদী।

ইবাদত তার দ্বিতীয় ওভারেও পান সাফল্য। দানুশকা গুনাথিলেকা অফ স্টাম্পের বাইরের বলে টেনে মারতে যান। ক্যাচ চলে যায় স্কয়ার লেগে। অনেক উঁচুতে উঠা ক্যাচ দারুণ দক্ষতায় হাতে জমান তাসকিন।

কুশল তৃতীয়বারের মতো জীবন পান ৩১ রানে। ইবাদতের লেগ স্টাম্পের বাইরের বল ঘুরিয়ে নাগাল পাননি। মুশফিক গ্লাভসে বল জমিয়ে জোরালো আবেদন করলেও আম্পায়ার দেন ওয়াইড। বাংলাদেশ রিভিউ নেয়নি।

ভানুকা রাজপাকসে হতে পারতেন লঙ্কানদের বড় ভরসা। কিন্তু তাকে সেই সুযোগ দেননি তাসকিন। তাসকিনের বলে আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যানে ক্যাচ দেন ৪ বলে স্রেফ ২ রান কর রাজাপাকসে।

৪৪ রান আরও একবার রান আউট থেকে বেঁচে ৩২ বলে ফিফটি পুরো করেন কুশল। তাকে অবশেষে থামানো যায় মোস্তাফিজের বলে। আপার কাট করতে গিয়ে থার্ড ম্যাচে তাসকিনের হাতে জমা দেন তিনি। ৩৭ বলে ৪ বাউন্ডারি, তিন ছক্কায় ৬০ রান করে যান লঙ্কান ওপেনার।

কুশলের সঙ্গে জুটিতে খেলার গুরুত্বপূর্ণ ফেইজে মোড় ঘোরানোর নায়ক শানাকা। পঞ্চম উইকেটে ৩৫ বলে তারা আনেন ৫৪ রান। প্রথম দুই ওভারে ইবাদতের স্পেল ছিল ২-০-১৩-৩! পরের দুই ওভারে তিনি দিয়ে দেন ৩৮ রান। তাকে মারার শুরুটা করেন শানাকাই।

১৩তম ওভার থেকে চলে আসে ২২ রান। ম্যাচ হেলে যায় লঙ্কানদের দিকে। মেহেদী হাসান মিরাজের পরের ওভার থেকেও আসে ১১ রান।

কুশল আউট হওয়ার পর ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকেও দ্রুত হারিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। সেই চাপ রাখতে দেননি শানাকা। ১৮তম ওভারে তিনি ফিরলেও পরের নাটকীয়তায় বাংলাদেশ পুড়েছে যন্ত্রণায়।

টস হেরে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল দারুণ। ব্যর্থ দুই ওপেনার নাঈম শেখ ও এনামুল হক বিজয়কে একাদশ থেকে ছেঁটে মেইক শিফট দুই ওপেনার নামিয়ে দেয়। সাব্বির রহমান-মেহেদী হাসান মিরাজ নেমেই দেখান অভিপ্রায়। সাব্বির এক চারে আউট হয়ে গেলেও মিরাজ পাওয়ার প্লে কাজে লাগান দারুণভাবে।

৬ ওভারে ৫৫ রান। ২৬ বলে ৩৮ করে বিদায় নেন মিরাজ। তিনে নামা সাকিব ও চারে নামা মুশফিকুর রহিম ছিলেন না সেরা ছন্দে। অনেকটা সময় নিয়ে থিতু হয়ে সাকিব ২২ বলে ফেরেন ২৪ করে। মুশফিক শুরুতেই ৪ রান করে ক্যাচ দেন।

বাংলাদেশ বড় রানে চড়ে মূলত আফিফ হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ব্যাটে। ২২ বলে ৩৯ করেন আফিফ। মাত্র ৯ বলে ২৪ করে অপরাজিত মোসাদ্দেক। মাঝে মাহমুদউল্লাহ ২৭ রান করলেও তা করতে লেগে যায় ২২ বল।

স্কোড় বোর্ডে চ্যালেঞ্জিং রান নিয়ে দারুণ লড়াই জমিয়ে জেতার অনেক কাছে গিয়েও পেরে উঠেননি সাকিবরা। এশিয়া কাপ থেকে বিদায় নেওয়ায় এবার তাদের খালি হাতে ফিরতে হবে দেশে।

Comments

The Daily Star  | English

Money laundering: NBR traces Tk 40,000cr in assets abroad

The National Board of Revenue has found assets worth nearly Tk 40,000 crore in five countries which it believes were bought with money laundered from Bangladesh, said the Chief Adviser’s Office yesterday.

5h ago