ভারতকে বিদায়ের শঙ্কায় ফেলে ফাইনালে এক পা শ্রীলঙ্কার

জুয়াটা ধরলেন রিশাভ পান্ত। স্টাম্প ভাঙতে পারলে জয়ের সম্ভাবনা বাড়ত অনেকাংশে। আর মিস করলে এক বল আগেই হার। কারণ অপর প্রান্তে ব্যাক আপ করার কেউ ছিল না। সাধারণত থাকেও না। আর জুয়াতে হারলেন পান্ত। ভাঙতে পারেননি স্টাম্প। আর ওভার থ্রো থেকে দ্বিতীয় রান নিয়ে শ্রীলঙ্কা পেয়ে গেল দারুণ এক জয়।

মঙ্গলবার দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ম্যাচে ভারতকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৭৩ রান করে ভারত। জবাবে ১ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছায় লঙ্কানরা।

এশিয়া কাপে ভালোভাবে টিকে থাকতে হলে জিততেই হতো ভারতকে। অন্যদিকে জয় পেলে ফাইনালে অনেকটাই নিশ্চিত লঙ্কানদের। এমন ম্যাচে আরও একবার দলগত পারফরম্যান্সের অসাধারণ নৈপুণ্য দেখালো লঙ্কানরা। ভারতকে রীতিমতো বিদায়ের শঙ্কায় ফেলে দিয়ে দুর্দান্ত এক জয় তুলে নিয়েছে দাসুন শানাকার দল।

পাকিস্তানের বিপক্ষে ক্যাচ ফেলা আর্শদিপ এদিন শেষ ওভারে এদিন দুর্দান্ত বোলিং করছিলেন। ছয় উইকেট হাতে নিয়ে মাত্র ৭ রানের লক্ষ্যে থাকা লঙ্কানদের আটকে রাখেন পাঁচ বল পর্যন্ত। পঞ্চম বলটি ডটও হতে পারতো, যদি পান্ত উইকেট ভাঙতে পারতেন। এমনটা হলে হয়তো ফলাফলও হতে পারতো ভিন্ন। কিংবা সুপার ওভার। 

তবে লক্ষ্য তাড়ায় এদিন রীতিমতো উড়ন্ত সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা। দুই ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও কুশল মেন্ডিসের জুটিতে আসে ৯৭ রান। রানের গতি সচল রেখে ১১ ওভারেই এ রান করেন এ দুই ব্যাটার। তৃতীয় স্পেলে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই এ জুটি ভাঙেন যুজবেন্দ্র চাহাল। তার বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দেন নিসাঙ্কা।

আর লঙ্কানদের ওপেনিং জুটি ভেঙে দারুণ উজ্জীবিত হয়ে ওঠে ভারতীয় দল। সে ওভারে চারিথ আসালাঙ্কাকেও ফেরান চাহাল। পরের ওভারে রবিচন্দ্রন অশ্বিন তুলে নেন দাসুঙ্কা গুনাথিলাকাকে। তবে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা পরের ওভারে এসে দেন চাহাল। আরেক সেট ব্যাটার মেন্ডিসকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ফলে ১৩ রানের ব্যবধানে ৪টি উইকেট হারিয়ে বড় চাপে পড়ে শ্রীলঙ্কা।

এরপর ভানুকা রাজাপাকশাকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। পঞ্চম উইকেটে দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন তারা। শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থেকে ৬৪ রানের জুটি গড়ে শেষ করেন বাকি কাজ। 

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৭ রানের ইনিংস খেলেন মেন্ডিস। ৩৭ বলে ৪টি চার ও ৩টি ছক্কায় এ রান করেন। তার সমান ৩৭ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৫২ রান করেন নিসাঙ্কা। ১৮ বলে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় হার না মানা ২৫ রানের ইনিংস খেলেন শানাকা। ১৭ বলে ২টি ছক্কায় ২৫ রান করে অপরাজিত থাকেন রাজাপাকশা। ভারতের পক্ষে ৩৪ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন চাহাল।

এর আগে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা ভারতের শুরুটা ভালো হয়নি। দলীয় ১১ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ২ রান যোগ হতে হারায় আরও একটি। লোকেশ রাহুলকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মহেশ থিকসানা। আর আগের ম্যাচের হাফসেঞ্চুরিয়ান বিরাট কোহলিকে রানের খাতা খোলার আগেই বোল্ড করে দেন দিলসান মাধুশাঙ্কা।

তবে তৃতীয় উইকেটে সূর্যকুমার যাদবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। ৯৭ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে প্রাথমিক চাপ সামলে নেন এ দুই ব্যাটার। রোহিতকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন চামিকা করুনারত্নে। এরপর অবশ্য খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সূর্যকুমারও। এরপর বাকি ব্যাটারদের ছোট ছোট ইনিংসের লড়াকু পুঁজিই পায় ভারত।

দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৭২ রানের ইনিংস খেলেন রোহিত। ৪১ বলে ৫টি চার ও ৪টি ছক্কায় এ রান করেন অধিনায়ক। ২৯ বলে ১টি করে চার ও ছক্কায় ৩৪ রান করেন সূর্যকুমার। ১৭ রান করে আসে হার্দিক পান্ডিয়া ও রিশাভ পান্তের ব্যাট থেকে। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ২৪ রানের খরচায় ৩টি উইকেট পান মাধুশাঙ্কা। ২টি করে উইকেট নেন করুনারত্নে ও শানাকা।

ফাইনালে উঠতে হলে এখন অন্য ম্যাচগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে ভারত। একই সঙ্গে আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ তো জিততে হবেই। তবে আগামীকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তান জিতলে তাদের সঙ্গে ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যাবে শ্রীলঙ্কারও। সেক্ষেত্রে শেষ দুটি ম্যাচ হবে নিছক আনুষ্ঠানিকতার।

অথচ এই শ্রীলঙ্কা বিদায় নিতে পারতো বাংলাদেশের বিপক্ষেই। ম্যাচের বেশির ভাগ অংশ এগিয়ে থেকেও হার মানতে হয় টাইগারদের। মূলত মাঝের দিকে বাজে বোলিংয়ের কারণে হারে টাইগাররা। আর তখন থেকেই যেন উজ্জীবিত লঙ্কানরা। সে ধারায় এখন ফাইনালের পথে দলটি।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago