ফাইনালে পাকিস্তান, বিদায় ভারত

ছবি: টুইটার

শেষ ওভারে পাকিস্তানের দরকার দাঁড়াল ১১ রান। হাতে কেবল ১ উইকেট। জয়ের পাল্লা তখন ভারী আফগানিস্তানের দিকে। তবে স্ট্রাইকে থাকা নাসিম শাহের ভাবনায় ছিল বিস্ময়কর কিছু! বল হাতে গতির ঝড় তোলা এই ক্রিকেটার নায়ক হয়ে গেলেন ব্যাট হাতে। ফজলহক ফারুকির টানা দুই ফুল টস বলে ছক্কা হাঁকিয়ে সমীকরণ মিলিয়ে ফেললেন তিনি। নাটকীয় জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে নাম লেখাল পাকিস্তান।

বুধবার শারজাহতে শেষ ওভারে গড়ানো সুপার ফোরের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ১ উইকেটে জিতেছে বাবর আজমের দল। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে ১২৯ রানের সাদামাটা সংগ্রহ গড়ে আফগানরা। জবাব দিতে গিয়ে পাকিস্তানের জন্য এই সহজ লক্ষ্যই হয়ে পড়েছিল পাহাড়সম। খাদের কিনারায় থাকা অবস্থায় ডানহাতি পেসার নাসিম ব্যাটিংয়ে দেখান বীরত্ব। তাতে ৯ উইকেটে ১৩১ রান তুলে ৪ বল হাতে রেখে জয় নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

পাকিস্তানের জয়ে এশিয়া কাপের ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে গেছে শ্রীলঙ্কারও। দুই দলের নামের পাশে রয়েছে দুই ম্যাচে ৪ পয়েন্ট করে। অন্যদিকে, আসর থেকে বিদায় ঘণ্টা বেজে গেছে আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন ভারত ও আফগানিস্তানের। দুটি করে ম্যাচ খেলে প্রতিটিতে হেরেছে তারা। সুপার ফোরের বাকি থাকা দুটি ম্যাচ এখন কেবলই আনুষ্ঠানিকতার।

লক্ষ্য তাড়ায় প্রথমেই বিপাকে পড়ে পাকিস্তান। তাদের অধিনায়ক বাবর আজম গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন। তাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন ফারুকি। নাজিবউল্লাহ জাদরানের সরাসরি থ্রোতে কাটা পড়েন ফখর জামান। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ওপেনার মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ এরপর দলের হাল ধরেন। তবে রিজওয়ানকে আরেকটি বড় ইনিংস খেলার সুযোগ দেননি আফগান তারকা রশিদ খান। একটি করে চার-ছক্কায় ২৬ বলে ২০ রান করে আউট হন তিনি। 

ব্যাটিং অর্ডারে প্রমোশন পেয়ে পাঁচে নামা শাদাব খান ক্রিজে গিয়ে রানের গতি বাড়ান। চতুর্থ উইকেটে ইফতিখারের সঙ্গে ৪১ বলে ৪২ রানের জুটি গড়েন তিনি। সেসময় পাকিস্তানের সহজ জয়ের ছবিই হয়তো আঁকতে শুরু করেছিলেন ভক্ত-সমর্থকরা। কিন্তু রশিদের পাশাপাশি আফগানিস্তানের দুই পেসার জ্বলে ওঠায় ম্যাচ নেয় নাটকীয় মোড়। মাত্র ৩১ রানের মধ্যে তারা তুলে নেন ৬ উইকেট।

১৬তম ওভারে ইফতিখার ৩৩ বলে ৩০ রান করে মিড উইকেটে ফরিদ আহমেদের শিকার হন। পরের ওভারে শাদাবকে বিদায় করে রশিদ। ১ চার ও ৩ ছয়ে তার সংগ্রহ ২৬ বলে ৩৬ রান।

শেষ ১৮ বলে পাকিস্তানের সামনে সমীকরণ ছিল ১৮ বলে ২৫ রানের। হাতে ছিল ৫ উইকেট। তবে পরপর দুই ওভারে জোড়া উইকেট হারিয়ে জয় মুঠো থেকে বেরিয়ে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল তারা। মোহাম্মদ নওয়াজ ও খুশদিল শাহকে ঝুলিতে পোরেন ফারুকি। হারিস রউফের পর ৮ বলে ২ ছক্কায় ১৬ করা আসিফ আলিকেও মাঠের বাইরে পাঠান ফরিদ। তাতে আফগানরা পেতে থাকে অসাধারণ জয়ের সুবাস।

বাকি গল্পটা ১৯ বছর বয়সী নাসিমের। ৪ বলে ১৪ রানে অপরাজিত থেকে দলকে স্মরণীয় জয় পাইয়ে দেন তিনি। আফগানদের হয়ে ফরিদ ও ফারুকি সমান ৩১ রানের বিনিময়ে সমান ২ উইকেট নেন। ২ উইকেট তুলতে রশিদের খরচা ২৫ রান।

এর আগে উদ্বোধনী জুটিতে ২৪ বলে ৩৬ রান এনে ভালো শুরু পায় আফগানিস্তান। পাকিস্তান দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় পরপর দুই ওভারে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে। দ্বিতীয় ওভারে মোহাম্মদ হাসনাইনকে টানা ২ ছক্কা হাঁকানো রহমানউল্লাহ গুরবাজ ফেরেন বোল্ড হয়ে। তাকে ফেরান হারিস রউফ। পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে স্লোয়ারে হজরতউল্লাহ জাজাইয়ের স্টাম্প উপড়ে নেন হাসনাইন। জাজাই ফিরতে পারতেন কিছুক্ষণ আগেই। তবে রউফের বলে তার তোলা ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি নাসিম শাহ।

ইব্রাহিম জাদরান ও করিম জানাত চাপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে কমে যায় রানের গতি। তারা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আর কোনো জুটিই জমে ওঠেনি। যদিও অল্প পুঁজি নিয়ে বোলারদের কল্যাণে দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা উপহার দেয় তারা।

ধুঁকতে থাকা জানাত নওয়াজের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে লং-অনে ফখরের তালুবন্দি হন। নাজিবউল্লাহকে বিস্ফোরক হতে দেননি শাদাব। তিনিও লং-অনে ধরা পড়েন ফখরের হাতে। পরের ওভারের প্রথম বলে নাসিম বিদায় করেন আফগান দলনেতা মোহাম্মদ নবিকে। গোল্ডেন ডাকের তিক্ত স্বাদ নিতে হয় তাকেও। এক প্রান্ত আগলে থাকা ইব্রাহিম পারেননি হাত খুলতে। রিজওয়ানের ক্যাচ বানিয়ে তার মন্থর ইনিংসের ইতি টানেন রউফ। শেষদিকে আজমতউল্লাহ ওমারজাই ও রশিদ মিলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রান যোগ করেন।

ইব্রাহিম দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন ৩৭ বলে। জাজাই ৪ চারে ১৭ বলে ২১ রানের ইনিংস খেলেন। ২ চার ও ১ ছয়ে রশিদ অপরাজিত থাকেন ১৫ বলে ১৮ রানে। পেসার রউফ ২ উইকেট পান ২৬ রানে।

Comments

The Daily Star  | English

Life insurers mired in irregularities

One-fourth of the life insurance firms in the country are plagued with financial irregularities and mismanagement that have put the entire industry in danger.

7h ago