নেপালকে উড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তানের দারুণ সূচনা
দারুণ ছন্দে থাকা অধিনায়ক বাবর আজম জ্বলে উঠলেন আরও একবার। তার সঙ্গে গর্জে ওঠেন ইফতেখার আহমেদও। দুইজনই পান সেঞ্চুরি। তাতে বিশাল পুঁজিই পায় পাকিস্তান। এরপর পাকিস্তানের বোলারদের তোপে দাঁড়াতেই পারেননি আনকোরা নেপালের ব্যাটাররা। ফলে বিশাল জয়েই আসর শুরু করল বাবর আজমের দল।
বুধবার মুলতানে ২০২৩ সালের এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে নেপালকে ২৩৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে পাকিস্তান। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪২ রান করে তারা। জবাবে ২৩.৪ ওভারে ১০৪ রানেই গুটিয়ে যায় প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলতে আসা দলটি।
২৩৮ রানের এই জয়টি রানের ব্যবধানে এশিয়া কাপে নিজেদের সর্বোচ্চ জয়। তবে সব মিলিয়ে দ্বিতীয়। ২০০৮ সালে করাচীতে হংকংয়ের বিপক্ষে ৭৫ রানের ব্যবধানে জিতেছিল ভারত। যা এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ জয়ের রেকর্ড। আর পাকিস্তানের সর্বোচ্চ জয়টি ছিল ২০০০ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেবার ২৩৩ রানে টাইগারদের হারিয়েছিল তারা।
এদিন টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা সে অর্থে ভালো না করতে পারলেও অধিনায়ক বাবর আজম ও ইফতিখার আহমেদের জোড়া সেঞ্চুরিতে বড় পুঁজিই পায় পাকিস্তান। অথচ দলীয় ২৫ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়েছিল তারা। এরপর মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে ৮৬ রানের জুটি গড়ে সে চাপ সামলে নেয় দলটি।
অবশ্য এরপর ১৩ রানের ব্যবধানে দুটি উইকেট শিকার করে ম্যাচে ফিরেছিল নেপাল। তবে চতুর্থ উইকেটে ইফতেখারকে নিয়ে ২১৪ রানের জুটিতে ফের কোণঠাসা করে দেয় তাদের। এরপর শেষ দিকে বাবর সহ শাদাব খানকে তুলে নিলেও এর আগেই রানের পাহাড় গড়ে পাকিস্তান।
তিনে নামা বাবর ১৫১ রানের ইনিংস খেলেন। শেষ ওভারে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ১৩১ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ১৪টি চার ও চারটি ছক্কা। এশিয়া কাপে পাকিস্তানের কোনো ব্যাটারের এটি সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। আগের কীর্তিটি ছিল ইউনিস খানের দখলে। ২০০৪ সালে কলম্বোতে হংকংয়ের বিপক্ষে ১২২ বলে ১৪৪ রান করেছিলেন তিনি।
১০৪ ওয়ানডের ১০২ ইনিংসে বাবরের এটি ১৯তম সেঞ্চুরি। পাকিস্তানের পক্ষে এই সংস্করণে তার চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে কেবল সাঈদ আনোয়ারের। ২৪৭ ম্যাচে ২০টি সেঞ্চুরি নিয়ে আছেন শীর্ষে। বিস্ফোরক কায়দায় ইফতিখার পান ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির স্বাদ। ছয়ে নেমে ৭১ বলে ১০৯ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ১১টি চার ও চারটি ছক্কা।
দলীয় ১২৪ রানে ৪ উইকেট হারানোর জুটি বাঁধেন বাবর ও ইফতিখার। ইনিংসের শেষভাগে তরতর করে রান বাড়াতে থাকেন দুজনে। তাদের মারমুখী ব্যাটিংয়ে শেষ ৮ ওভারেই পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে যোগ করে ১১৪ রান। ১৩১ বলে গড়েন ২১৪ রানের জুটি। এশিয়া কাপে এটি সব মিলিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ ও পঞ্চম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রানের কীর্তি। পঞ্চম উইকেটে আগের রেকর্ড জুটি ছিল পাকিস্তানেরই উমর আকমল ও শহিদ আফ্রিদির দখলে। ২০১০ সালে ডাম্বুলায় বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা যোগ করেছিলেন ১৩৭ রান।
এছাড়া ৪৪ রান করেন রিজওয়ান। ৫০ বলে ৬টি চারের সাহায্যে এই রান করেন তিনি। নেপালের পক্ষে ৮৫ রানের খরচায় ২টি উইকেট নেন সম্পলি কামি। ১টি করে উইকেট নেন সন্দীপ লামিচানে ও কারান ছেত্রি।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ খেলতে আসা নেপালের শুরুটা ছিল বিবর্ণ। শাহিন শাহ আফ্রিদি ও নাসিম শাহর তোপে দলীয় ১৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তারা। এরপর আরিফ শেখকে নিয়ে সে আপ সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন কামি। চতুর্থ উইকেটে ৯ রানের জুটি গড়ে দারুণ প্রতিরোধও গড়েছিলেন তারা।
কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে তাদের ব্যাটিং লাইন-আপ। মূলত শাদাব খানের ঘূর্ণি জালে পড়ে দলটি। ফলে মাত্র ৩১ রান তুলতেই শেষ ৭টি উইকেট হারায় নেপাল। অবশ্য চতুর্থ উইকেট জুটির প্রতিরোধের পর দুই সেট ব্যাটারকে ফেরান হারিস রউফ। আর লেজ ছাঁটাইয়ের কাজটা দারুণভাবে করেন শাদাব।
নেপালের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৮ রানের ইনিংস খেলেন কামি। আরিফের ব্যাট থেকে আসে ২৬ রান, এ দুই ব্যাটার ছাড়া কেবল গুলসান ঝা (১৩) দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পেরেছেন। পাকিস্তানের পক্ষে ২৭ রানের খরচায় ৪টি উইকেট পান শাদাব। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন শাহিন ও রউফ।
Comments