ওয়ানডেতে মুশফিকের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড, বাংলাদেশেরও রেকর্ড রান

Mushfiqur Rahim
ফাইল ছবি: ফিরোজ আহমেদ

লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্তর সত্তর ছাড়ানো দুটি ইনিংসে পাওয়া ভিতে আবারও জ্বলে উঠলেন মুশফিকুর রহিম আর তাওহিদ হৃদয়। স্লগ ওভারে আয়ারল্যান্ডের বোলারদের এলোমেলো করতে থাকলেন তারা। মুশফিক পরে সবটা আলো কেড়ে নিলেন নিজের দিকে। চার-ছক্কার তাণ্ডবে খেললেন বিস্ফোরক ইনিংস। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন। তার নৈপুণ্যে আগের ম্যাচে গড়া দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও ভেঙে ফেলল বাংলাদেশ।

সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৪৯ রান করেছে বাংলাদেশ। একই ভেন্যুতে ঠিক আগের ম্যাচে করা ৩৩৮ রান পড়ে গেল পেছনে। বাংলাদেশকে চূড়ায় তুলে ৬০ বলে ১০০ রান করে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। এটিই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম বলে করা শতক। এর আগে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৬৩ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটা এতদিন ছিল সাকিব আল হাসানের দখলে। মুশফিকের বিস্ফোরণের দিনে ফিফটি করেন আরও দুজন। লিটন ৭১ বলে করেন ৭০ রান। শান্তর ব্যাট থেকে আসে ৭৭ বলে ৭৩ রান। গত ম্যাচে অভিষেকে ৯২ করা হৃদয় ৩৪ বলে খেলেন ৪৯ রানের আগ্রাসী ইনিংস।

টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অতি সতর্ক শুরু করেছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও লিটন। সকালের বৃষ্টির পর দুপুরেও  সিলেটের আকাশ ছিল মেঘে ঢাকা। বল সুইং করার শুরুর সময়টা তাই দেখে খেলতে চেয়েছিলেন তারা।

দুজনেই থিতু হয়েছিলেন। যখন ডানা মেলা দরকার তখনই বিদায় তামিমের। লিটনের মারা শট শর্ট ফাইন লেগে রেখে প্রান্ত বদলের জন্য ছোটেন তামিম। কিন্তু দৌড়ে ছিল না ক্ষীপ্রতা, ডাইভও দেননি তিনি। মার্ক অ্যাডায়ারের সরাসরি আসা থ্রো ভেঙে দেয় তার স্টাম্প।

এরপর শান্তর সঙ্গে জমে উঠে লিটনের জুটি। প্রথম ২২ বলে ৬ রান করা লিটন খোলস ছেড়ে বেরোতে দেরি করেননি। বাউন্ডারি ও স্ট্রাইক রোটেশনে গতি বাড়িয়ে ফিফটি তুলে নেন ৫৩ বলে। ছক্কা মেরে ফিফটি করে ওয়ানডেতে পৌঁছান ২ হাজার রানের মাইলফলকে। বাংলাদেশের হয়ে ২ হাজার রানে তিনি যৌথভাবে দ্রুততম। শাহরিয়ার নাফীসও ৬৫ ইনিংসে করেছিলেন ২ হাজার রান।

ছবি: স্টার

ফিফটির পরও গতি বহাল ছিল লিটনের। তিন অঙ্কের দিকে ছুটছিলেন তিনি। মনে হচ্ছিল অনায়াসে পেয়েও যাবেন তা। কিন্তু গেল কয়েক দিন যেভাবে সফট ডিসমিসাল হচ্ছিলেন, এবারও হলেন তাই। কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে একদম আলতো ঢঙে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ৭১ বলে তিন চার ও তিন ছক্কায় করেন ৭০ রান। দ্বিতীয় উইকেটে এতে ভাঙে ৯৬ বলে ১০১ রানের জুটি।

আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকেই যেন শুরু সাকিবের। শান্ত ছিলেন আঁটসাঁট। সময় নিয়ে থিতু হয়ে দ্রুতই ডানা মেলতে থাকেন তিনি। লিটনের পর সাকিবের সঙ্গেও জমে উঠছিল তার জুটি। তবে এদিন থিতু হয়ে থেমে যান সাকিব।

গ্রাহাম হোমের বলে ক্যাচ উঠিয়ে ফিরে যান আগের ম্যাচে ৯৩ করা সাকিব। এদিন ১৯ বল খেলে তিনি করেন ১৭ রান।

সাকিবের খানিক পর ফিরে যান শান্তও। গ্রাহাম হিউমের লেগ স্টাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট লাগিয়ে কিপারের হাতে জমা দেন তিনি। ৭৭ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটি করে শান্ত ফেরেন ৭৩ রান করে।

আগের দিন অভিষেকে রাঙানো হৃদয় আর ঝড় তোলা মুশফিকের ঘাড়ে পড়ে স্লগ ওভারে রানের গতি বাড়ানোর ভার। দলের চাহিদা আবারও মেটান তারা। প্রথম ম্যাচের ঝাঁজ টেনে এদিনও বাহারি শটের পসরায় মাতেন মুশফিক, হৃদয় খেলতে থাকেন চড়াও হয়ে। ৩৩ বলে ছক্কা মেরে ফিফটি স্পর্শ করেন মুশফিক। পরে চার মেরে তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলকও ছোঁয়ে ফেলেন তিনি।

মাত্র ৬৫ বলে জুটিতে একশো তুলে ফেলেন দুজন। ছুটছিলেন সেঞ্চুরির দিকে। অভিষেকের পর টানা দুই ওয়ানডেতে ফিফটি করা প্রথম বাংলাদেশি হওয়ার কাছে ছিলেন হৃদয়। মাত্র ১ রানের জন্য তা পাওয়া হয়নি তার। অ্যাডায়ারের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে ফেরেন ৩৪ বলে ৪৯ রান করে। পঞ্চম উইকেটে তার আগে মাত্র ৭৮ বলে চলে আসে ১২৮ রান।

হৃদয় থামলেও মুশফিকের হুঙ্কার যেন বাড়ছিল। আইরিশ বোলারদের উপর চড়াও হয়ে স্ট্রোকের পসরা মেলে ধরেন তিনি। কখনো এগিয়ে তিনি এসে ওড়ান, কখনো স্কুপ করে পাঠান সীমানার বাইরে। আবার কখনো আপার কাটে করেন মুগ্ধ। সেঞ্চুরি পেতে শেষ ওভারে ৯ রান দরকার ছিল মুশফিকের। প্রথম দুই বল পর স্ট্রাইক পেয়ে বাকি চার বলে সেই কাজ সেরে ফেলেন তিনি। ৬০ বলের ইনিংসে মুশফিক মারেন ১৪ চার আর ২ ছক্কা। ফলে ক্যারিয়ারের নবম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটার দিন তার জন্য হয়ে থাকল সবচেয়ে স্মরণীয়।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

7h ago