সাকিব-ইফতেখারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে জিতল বরিশাল

বিপিএলে বরাবরই সত্যিকারের টি-টোয়েন্টির আমেজ উপহার দিত চট্টগ্রামের মাঠ। সেখানে এবার কিছুটা ভিন্ন ছিল শুরুর দিকে। তেমন বড় স্কোর দেখা দিচ্ছিল না সাগরিকায়। এদিন জহুর আহমেদের এ বদনাম যে ঘোচানোর দায়িত্ব নেন সাকিব আল হাসান ও ইফতেখার আহমেদ। দুইজনই খেললেন নিজেদের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। তাও রীতিমতো তাণ্ডব তুলে। হলো নতুন নতুন রেকর্ড। ফরচুন বরিশাল পেল টানা চতুর্থ জয়।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে রংপুর রাইডার্সকে ৬৭ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে ফরচুন বরিশাল। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২৩৮ রান করে বরিশাল। জবাবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৭১ রানের বেশি করতে পারেনি রংপুর।

এদিন পঞ্চম জুটিতে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েন সাকিব ও ইফতেখার। মাত্র ৮৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৯২ রান করেন এ দুই ব্যাটার। ভেঙে ফেলেন ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ভিটালিটি ব্লাস্টের ম্যাচে নর্দাম্পটনশায়ারের বিপক্ষে বার্মিংহ্যাম বিয়ার্সের অ্যাডাম হোস ও ড্যান মৌসলির ১৭১ রানের জুটির রেকর্ড। এই রেকর্ডে রংপুরকে বিশাল লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় বরিশাল। শেষ পর্যন্ত সে রানে চাপা পড়ে রংপুর।

পঞ্চম উইকেটে বিশ্বরেকর্ড গড়লেও বিপিএলের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এটা নয়। আছে তিন নম্বরে। ২০১৭ সালের ফাইনালে ক্রিস গেইল ও ব্রান্ডন ম্যাককালামের গড়া দ্বিতীয় উইকেট জুটির অবিচ্ছিন্ন ২০১ রানের রেকর্ড সর্বোচ্চ। দলীয় সংগ্রহও বিপিএলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এই চট্টগ্রামে ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম ভাইকিংসের বিপক্ষে ৪ উইকেটে সর্বোচ্চ ২৩৯ রান তুলতে সক্ষম হয়েছিল রংপুর। 

অথচ ম্যাচের শুরুতে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল না বরিশাল। পঞ্চম ওভারে এনামুল হক বিজয় ও ইনফর্ম ইব্রাহীম জাদরানকে তিন বলের ব্যবধানে তুলে নিয়ে জোড়া ধাক্কা দেন হারিস রউফ। এক ওভার পর তো টানা দুই বলে মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহকে তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেন হাসান মাহমুদ। দলীয় ৪৬ রানেই চার উইকেট হারিয়ে চাপে ছিলেন তারা। সেখান থেকে দলকে টেনে তো তোলেনই, গড়েন বিশাল পুঁজি।

ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে ১০০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন ইফতেখার। মাত্র ৪৫ বলে ৬টি চার ও ৯টি ছক্কায় এ রান করেন তিনি। অথচ প্রথম ১৩ বলে মাত্র ৯ রান করেছিলেন ইফতেখার। এরপর শুরু হয় তার তাণ্ডব। সাকিব অবশ্য শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা চালান। তবে শেষ দিকে দানবীয় রূপে আবির্ভূত হন তিনিও। ৪৩ বলে ৯টি চার ও ৬টি ছক্কায় খেলেন হার না মানা ৮৯ রানের ইনিংস।

মূলত দ্বাদশ ওভার শেষেই মূল আক্রমণের শুরু করেন এ দুই ব্যাটার। শামিম হোসেন পাটোয়ারি করা ১৩তম ওভারে চার ছক্কায় ২৫ রান নেন ইফতেখার। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তাদের। এমনকি টি-টোয়েন্টির অন্যতম সেরা বোলার হারিসও পার পাননি। ১৯তম ওভারে এসে তিনটি ছক্কা ও একটি চার দিয়ে হজম করেছেন ২৪ রান। শেখ মেহেদী হাসানের করা শেষ ওভারে আসে ২৭ রান। সবমিলিয়ে শেষ আট ওভারে আসে ১৪৪ রান।

লক্ষ্য তাড়ায় নেমে রানের গতি সচল রেখে ব্যাটিং করতে পারেনি রংপুর। ২৮ রানের ওপেনিং জুটি গড়েন সাইম আইয়ুব ও রনি তালুকদার। কিন্তু খেলেছেনও ২৮ বল। টপ অর্ডারে কেউ ঝলসে উঠতে পারেননি। পারেননি মিডল অর্ডারের কেউও। মোহাম্মদ নাঈম শেখ কিছুটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু রানআউটে কাটা পাড়েন। মিরাজের বলে ডিপ কভারে পাঠিয়ে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন নাঈম। কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বির দারুণ থ্রোতে ঠিক সময়ে উইকেটে পৌঁছাতে পারেননি তিনি। সে ওভারে আউট হন শেখ মেহেদীও। ফলে ৭৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখনই হার দেখতে শুরু করে রংপুর।

এরপর শামিমের সঙ্গে ৩৬ বলে ৫৭ রানের জুটি গড়ে লড়াইয়ের চেষ্টা চালান মোহাম্মদ নাওয়াজ। এরপর নাওয়াজ আউট হলে এক প্রান্তে আগ্রাসী ব্যাটিং করেন শামিম। তবে তাদের যথেষ্ট ছিল না। কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন শামিম। ২৩ বলে ৩টি চার ও ৪টি ছক্কার সাহায্যে সাজান নিজের ইনিংস। ২৪ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৩ রান করেন নাওয়াজ। নাঈমের ব্যাট থেকে আসে ৩১ রান। বরিশালের পক্ষে ২৬ রানের খরচায় ৩টি উইকেট নেন মিরাজ। ২টি করে উইকেট পান রাব্বি ও ওয়াসিম।  

Comments

The Daily Star  | English

UK govt unveils 'tighter' immigration plans

People will have to live in the UK for 10 years before qualifying for settlement and citizenship

1h ago