আনুষ্ঠানিক বিদায় নিয়ে মাশরাফির 'নো এক্সপেক্টেশন'

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

২০২০ সালে শেষবার বাংলাদেশের জার্সিতে দেখা গিয়েছিল মাশরাফি বিন মর্তুজাকে। এরপর জাতীয় দলের হয়ে আর তিনি খেলেননি। দেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক নেননি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরও। সম্প্রতি ফের উঠেছে অভিজ্ঞ পেসারকে মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার আলোচনা। তবে বিপিএলে সিলেট স্ট্রাইকার্সের দলনেতার ভূমিকায় থাকা মাশরাফি জানালেন, এই ব্যাপারে বোর্ড বা কারও কাছ থেকেই তার কোনো প্রত্যাশা নেই।

সিলেটের মাঠেই শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচটি খেলেছিলেন ৩৯ বছর পেরিয়ে যাওয়া মাশরাফি। তিন বছর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডেতে সেদিন ৪৭ রান খরচায় পেয়েছিলেন ১ উইকেট। মূলত চোটের কারণে ২০০৯ সালের পর আর টেস্ট খেলেননি তিনি। আর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যান ২০১৭ সালের এপ্রিলে।

বাংলাদেশের পক্ষে একটি মাত্র সংস্করণে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সাফল্যের সঙ্গে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন দলকে। ২০২০ সালের পর সেটাও থেমে যাওয়ায় মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষই বলা চলে। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পথচলা থামেনি। চলতি বিপিএলে অধিনায়কত্বের পাশাপাশি বল হাতে আছেন ভালো ছন্দে। এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচে শিকার করেছেন ৯ উইকেট।

জাতীয় দলকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলা হয়নি মাশরাফির। এবারের বিপিএলে সেই আলোচনা ফিরে এসেছে। গত সোমবার মাশরাফির সাবেক সতীর্থ ও বর্তমান বিসিবি নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক জানান, মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার সিদ্ধান্তটা সম্পূর্ণ বোর্ডের। যদি বোর্ড এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে নির্বাচকদের কোনো আপত্তি থাকবে না। কারণ তারাও চান যেন খেলোয়াড়রা মাঠ থেকে যেন বিদায় নেয়।

বৃহস্পতিবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে মাশরাফির কাছে প্রসঙ্গটি তোলা হয়। উত্তরে বলেন, নিজের ক্ষেত্রে প্রত্যাশা না থাকলেও বাকিদের জন্য এমন কিছু চান তিনি, 'আমি মনে করি, সত্যি বলতে, এটা হওয়া উচিত। আমি মনে করি, প্রত্যেকটা খেলোয়াড়, বিশেষ করে, সাকিব বা এখন যারা আছে (তাদের সঙ্গে)। আমি আমারটা বলতে পারব না। কারণ আমি অনেক দিন আগে সেটা (জাতীয় দল) ছেড়ে এসেছি। আমার কোনো প্রত্যাশা নেই (আই হ্যাভ নো এক্সপেক্টেশন)। আর আমি নিজেও বিশ্বাস করি না সেটা আমার ক্ষেত্রে। আমি আপনাদের এখানে এসে বলে গিয়েছিলাম যে আমি যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন কিন্তু জাতীয় দলে খেলব বলে আশা করিনি। আমার বাসা থেকে চাপ ছিল যে তুমি পড়ালেখা করো, আমি ক্রিকেটটাকে বেছে নিয়েছি। তখন কিন্তু আমার এত অর্থ, গাড়ি, বাড়ি কিছুই ছিল না। তো ক্রিকেট দিয়েই কিন্তু আমার জীবনের সব কিছু হয়েছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে ক্রিকেট আমার প্যাশন থেকে পেশা হয়েছে। প্যাশন এমন একটা পর্যায়ে গেছে যে আমাকে অর্থ না দিলেও আমি ক্রিকেট খেলতাম। যেটা আপনাদের এখানে আমি বারবার বলেছি, সেটা আমি বিশ্বাস করি বলেই এখনও খেলছি। এমন কোনো অর্থও আমি এখন ক্রিকেট থেকে পাই না। তাই এই মুহূর্তে এটা আমার পেশা নয়, আমার প্যাশন।'

আনন্দ নিয়ে ক্রিকেট খেলে গেছেন বলে জানান মাশরাফি। 'নড়াইল এক্সপ্রেস' খ্যাত ডানহাতি পেসারের মতে, মাঠ থেকে বিদায় দেওয়ার সংস্কৃতি চালু হওয়া উচিত, 'যখন আমি ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ি, যখন ক্রিকেটের ওই আমেজ ছিল না, তখন থেকেই কিন্তু আমি খেলাটাকে ভালোবেসেছি। তো নির্দিষ্ট এই খেলার প্রতি আমার যে ভালোবাসা আছে, আরেকজন ক্রিকেটারেরও হয়তো তাই-ই আছে। তার ক্ষেত্রেও হয়তো সে একই কাজ করবে। আমি তো তারটা বলতে পারব না, আমি আমারটা বলতে পারব। আমি ক্রিকেটটা খেলেছি (কারণ) ভালোবেসেছি, এজন্য আমি এখনও খেলি। তিন বছর আগের যে কথা হলো, তিন বছর আগে আমি কিন্তু ওই প্রত্যাশা নিয়ে যাইনি। ক্রিকেট বোর্ড থেকে বা কোনো জায়গা থেকে কী দিবে, সেই আশায় কিন্তু আমি বসেছিলাম না। আমি আগেও বললাম যে আমার আনন্দ আমার কাছে। আমি এখানে আনন্দ বিক্রিও করতে আসিনি, কিনতেও আসিনি। আমার যেটা মন চেয়েছে, আমি যদি শান্তিতে ঘরে গিয়ে ঘুমাতে পারি, ক্রিকেটের ক্ষেত্রে সেটাই আমি করেছি। আর এজন্য আমি কারও কাছ থেকে কিছু আশাও করি না। সত্যি বলতে আপনি যদি মনে করেন, আপনারা যদি হাজারবার বলেন, আমি হাজারবার বলব যে আমি কিছুই আশা করি না, আমার ক্ষেত্রে না। তবে আমি যেটা বললাম যে অবশ্যই, ওই সংস্কৃতিতে যাওয়া উচিত। ওই সংস্কৃতি চালু করা উচিত।'

প্রত্যাশা না থাকার পাশাপাশি কোনো ক্ষোভও মনে পুষে রাখেননি মাশরাফি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি তার যা আছে, সেটার পুরোটাই ভালোবাসায় মোড়ানো। তার চাওয়া, ক্রিকেটাররা যে শ্রম দেন ও ত্যাগ স্বীকার করেন, সেটার স্বীকৃতি হিসেবে আনুষ্ঠানিক বিদায়ের সম্মানটুকু যেন পান, 'যারা আছে এখন, সাকিব-তামিম-মুশফিক-(মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদ, কেউ স্বীকার করুক বা না করুক, তারা বাংলাদেশের কিংবদন্তি। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তো তাদের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষ যেন ওই সুযোগটা পায়। ওই সম্মান নিয়ে যেন তারা মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারে। কারণ দীর্ঘদিন দীর্ঘসময় তারা এখানে শ্রম দিয়েছে। অনেক কিছু ত্যাগ করে সময় দিয়েছে। মানুষ তো হিসাব করে, কত টাকা পেল, কী পেল। কিন্তু কত শ্রম তারা এখানে দিয়ে গেছে, দিনের পর দিন কত আত্মত্যাগ করেছে, এটা তো কেউ জানে করে না। ওই সম্মানটা যেন তারা পায় বা তাদের ধারাবাহিকতায় যারা ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি সময়ে আছে বা তরুণ তারকা আছে, তাদের যেন ওই বিশ্বাসটা আসে যে আমাদের দেশ থেকে আমরা এতটুক সম্মান নিয়ে যেতে পারব। এটাই। তবে আমার নিজের কোনো প্রত্যাশা নাই। এটা নিয়ে আমার কোনো ক্ষোভ, রাগ কিচ্ছুই নাই। একদম সততার সঙ্গে বলছি। আমার কোনো ক্ষোভ নাই, বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রতি আমার কেবল ভালোবাসা আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Poll irregularities: Sedition among 3 new charges added against three ex-CECs

BNP filed a case against 24 individuals, including three former chief election commissioners, 10 election commissioners, and top government and police officials, for their alleged role in irregularities during national polls in 2014, 2018, and 2024

32m ago