সিলেটের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আলোচনা ‘অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি’ লাগছে মাশরাফির
বিপিএলের আগের আসরগুলোতে সিলেটের ফ্র্যাঞ্চাইজি ছিল ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি। বিভিন্ন মালিকানায় থাকলেও তারা নিয়মিত ছিল পয়েন্ট তালিকার তলানির দিকে। এবার অবশ্য ভিন্ন চিত্রের দেখা মিলছে। নতুন মালিকানায় বাংলাদেশের নতুন ও অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দিয়ে সিলেট স্ট্রাইকার্স এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। তবে তাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে এখনই ওঠা আলাপ অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি মনে হচ্ছে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার।
বিপিএলের মাঝপথে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে সিলেট। সাত ম্যাচে ছয় জয়ে তাদের অর্জন ১২ পয়েন্ট। সাত দলের আসরের সেরা চারে থেকে প্লে-অফে জায়গা করে নেওয়ার খুব কাছে অবস্থান করছে তারা।
আগামীকাল শুক্রবার শুরু হচ্ছে ২০২৩ বিপিএলের সিলেট পর্ব। উদ্বোধনী ম্যাচে মাঠে নামছে স্বাগতিকরা। দুপুর দুইটায় সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তারা মোকাবিলা করবে রংপুর রাইডার্সকে। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অভিজ্ঞ পেসার মাশরাফি জানান এই পর্বের ম্যাচগুলোর গুরুত্বের কথা, 'আমাদের জন্য সিলেটের ম্যাচগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ যদিও আমরা সাত ম্যাচে ছয়টি জিতেছি। অন্যান্য দলগুলো যেভাবে খেলছে, তাতে এক-দুই নম্বরে থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। লড়াইটা এমনও আছে যে খুব হাড্ডাহাড্ডি হতে পারে। এজন্য সিলেটের তিনটা ম্যাচ গুরুত্বপূর্ণ।'
সিলেটের পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতা থাকলেও শিরোপা জয়ের ভাবনা এখনই মাথায় জেঁকে বসতে দিতে নারাজ মাশরাফি। দেশের ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক আগে নিশ্চিত করতে চান পয়েন্ট তালিকার শীর্ষ দুইয়ে থেকে প্লে-অফে খেলা, 'চ্যাম্পিয়ন হিসেবে সিলেটের নাম দেখা যাবে কিনা সেটা তো কেউ বলতে পারবে না। আমিও না। দেখুন, নিজেদের নিয়ন্ত্রণে কখন পর্যন্ত থাকে? সেমিফাইনালে ওঠা পর্যন্ত। তারপর নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলে, তাদের ক্ষেত্রেই যা হওয়ার হয়। (প্রথম পর্বের পয়েন্ট তালিকায়) এক-দুইয়ে যেতে পারলে (প্লে-অফে) দুইটা সুযোগ থাকতে পারে। সেই অবস্থান তৈরি করতে পারলে মনে হবে, আমরা যথেষ্ট সফল। এরপর নির্দিষ্ট দিনে যদি ভালো খেলতে পারি, তাহলে কেন না? তবে চ্যাম্পিয়নের কথা যেটা বলা হচ্ছে, সেটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি, সেটা সময়ের ওপর ছাড়তে হবে। দল যেভাবে খেলছে, সেটা চালিয়ে নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। দল হিসেবে আমরা চেয়েছি সিলেট আাগে যেরকম ছিল, সেখান থেকে বের হয়ে আসে এবং সিলেটের যে দর্শক আছে, তারা যেন দলটাকে আপন করতে পারে এবং সিলেট দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, সেই বিশ্বাসটা করা। সেটা তৈরি হয়েছে। সেমিফাইনাল (প্লে-অফ) পর্যন্ত যেতে পারলে সব কিছু নির্দিষ্ট দিনের ওপর নির্ভর করছে।'
বিপিএলের আগের আট আসরের সাতটিতে খেলে সিলেট কেবল একবারই প্লে-অফের টিকিট পেয়েছিল। সেটাও ১০ বছর আগে, ২০১৩ সালে। এবার দলটির পারফরম্যান্স স্থানীয় দর্শকদের জন্য আনন্দের বলে মনে করেন মাশরাফি, 'সেই সঙ্গে সিলেটের দর্শকরা তাদের দলটাকে যেভাবে চাচ্ছিল, সেভাবে হয়তো এখন পর্যন্ত পেয়েছে। এটা দলের জন্য যেমন আনন্দের, ঠিক তেমনি দর্শকদের জন্যও আনন্দের। আমরাও চেষ্টা করব আমাদের প্রতিশ্রুতি রাখতে। খেলার কথা তো বলা যায় না (অবশ্য)।'
প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ও উইকেটশিকারিদের তালিকার শীর্ষ দশে সিলেটের ক্রিকেটারদের সরব উপস্থিতি। ব্যাটিংয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয় আছেন যথাক্রমে তিন ও সাতে। বোলিংয়ে পাঁচ, ছয় ও সাতে রয়েছেন যথাক্রমে পাকিস্তানের মোহাম্মদ আমির, রেজাউর রহমান রাজা ও মাশরাফি নিজে। দলে দেশি-বিদেশি তারকার ছড়াছড়ি না থাকলেও মাঠের পারফরম্যান্সই যে মুখ্য সেটা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি, 'বাজেটের একটা ইস্যু থাকে সব সময়। নির্দিষ্ট বাজেটের ভেতরে সম্ভাব্য সেরা যেটা করা যায়, সেটাই করা হয়েছে। দল মাঠে নামার আগে হয়তো অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু মাঠে নামার পর আমি মনে করি, সবাই দলটাকে নিজের করে নিয়েছে। কাগজে-কলমে অবশ্যই আমরা সেরা দল নই। আমরা হয়তো সেরা তিনেও থাকব না। সেটা অন্য বিষয়। কাগজে-কলমে খেলা হয়ও না, এটা সত্য। মাঠে যারা (ভালো) খেলে, তারা জেতে। আবার কাগজ-কলমও বিপিএলের মতো প্রতিযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায়, স্থানীয় ক্রিকেটাররা যদি পারফর্ম করতে না পারে তখন।'
'আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সেরা তিন ব্যাটসম্যান– জাকির (হাসান), তৌহিদ ও শান্ত তিনজন নিয়মিত রান করেছে। মুশফিক (মুশফিকুর রহিম) একটায় দ্রুত রান করে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে গেছে। বোলিংয়ে রাজা ভালো করছে। (তানজিম হাসান) সাকিব প্রথম ম্যাচে ভালো করেছে। ইমাদ (ওয়াসিম) ও আমির অসাধারণ করেছে। আমরা (বিদেশিদের মধ্যে) তাদেরকে দলের সঙ্গে রেখেছি, যারা লম্বা সময় থাকবে। এমন না কেউ এক-দুই ম্যাচ খেলেই আবার চলে যাবে। এখানে টাকার প্রয়োজন হয়। বাজেটের ভেতর থেকে সেরা যেটা করা যায়, সেটাই করা হয়েছে।'
Comments