বিজয়ের ঝড়ো ফিফটির পর জানাতের তাণ্ডবে শীর্ষে বরিশাল

আফিফ হোসেন ও কার্টিস ক্যাম্পারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। লক্ষ্য তাড়ায় এনামুল হক বিজয় ফরচুন বরিশালকে উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়ার পর পাল্টা আঘাত করলেন নিহাদুজ্জামান। তবে আটে নামা করিম জানার আড়াইশর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে জিতিয়ে দিলেন দলকে।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

আফিফ হোসেন ও কার্টিস ক্যাম্পারের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। লক্ষ্য তাড়ায় এনামুল হক বিজয় ফরচুন বরিশালকে উড়ন্ত শুরু এনে দেওয়ার পর পাল্টা আঘাত করলেন নিহাদুজ্জামান। তবে আটে নামা করিম জানার আড়াইশর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করে জিতিয়ে দিলেন দলকে।

বিপিএলে শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে ৩ উইকেটে জিতেছে বরিশাল। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬ উইকেটে ১৬৮ রান তোলে চট্টগ্রাম। জবাবে ৪ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেটে ১৭১ রান করে জয় নিশ্চিত করে সাকিব হাসানের দল।

ওপেনিংয়ে নেমে ম্যাচসেরা হওয়া বিজয় খেলেন ৭৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। ৫০ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন সমান ৬টি করে চার ও ছক্কা। চট্টগ্রামের বাঁহাতি স্পিনার নিহাদুজ্জামান মাত্র ১৭ রানের বিনিময়ে ৪ উইকেট নেন। তার তোপে এক পর্যায়ে ১১৭ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে ফেলেছিল বরিশাল। তবে জানাত তাণ্ডব চালিয়ে দলকে পাইয়ে দেন পয়েন্ট। কেবল ১২ বল খেলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় তিনি করেন ৩১ রান।

এই জয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্সকে টপকে চলতি বিপিএলের পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠেছে বরিশাল। সমান ৮ ম্যাচে দুই দলেরই পয়েন্ট সমান ১২। তবে নেট রান রেটে এগিয়ে আছেন সাকিবরা। সাত দলের আসরের ছয় নম্বরে থাকা চট্টগ্রামের পয়েন্ট ৮ ম্যাচে ৪।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে শক্ত ভিত গড়তে পারেনি চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় ওভারেই পাকিস্তানের মোহাম্মদ ওয়াসিমকে ফিরতি ক্যাচ দেন মেহেদী মারুফ। ভারতের ব্যাটার উন্মুক্ত চাঁদ থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি। আক্রমণে এসে প্রথম বলেই তাকে বিদায় করেন খালেদ আহমেদ।

ওপেনার ম্যাক্স ও'ডাউড ও আফিফ তৃতীয় উইকেটে ৪২ রানের জুটি গড়েন। আফিফ শুরু থেকেই ছিলেন আগ্রাসী মেজাজে। খালেদকে অষ্টম ওভারে ছক্কা ও চার মারেন তিনি। পরের ওভারে পাকিস্তানের ইফতিখার আহমেদকে একই কায়দায় পেটান নেদারল্যান্ডসের ও'ডাউড।

খালেদই ফের সাফল্য এনে দেন বরিশালকে। র‍্যাম্প শট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক বিজয়ের গ্লাভসবন্দি হন ও'ডাউড। ফলে তার হাত খোলার প্রয়াস সফল হয়নি। ৩৪ বলে ৩৩ রান আসে তার ব্যাট থেকে।

পরের ওভারে অধিনায়ক শুভাগত হোমও সাজঘরের পথ ধরেন। এরপর আফিফকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় শিকার ধরেন কামরুল ইসলাম রাব্বি। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় লিডিং এজে ইফতিখারের হাতে ক্যাচ দেন তিনি। আফিফের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ রান। ২৩ বল মোকাবিলায় তিনি মারেন ৩ চার ও ২ ছক্কা। তবে আফিফ আউট হতে পারতেন অনেক আগেই। চাঁদের বিদায়ের ঠিক পরের বলে। কিন্তু থার্ড ম্যানে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন রাব্বি।

১৪তম ওভারে ১০২ রানে পড়ে যায় ৫ উইকেট। সেখান থেকে চট্টগ্রামকে ভালো সংগ্রহ পাইয়ে দেন আয়ারল্যান্ডের ক্যাম্পার। ইরফান শুক্কুরকে সঙ্গে নিয়ে ষষ্ঠ উইকেটে ৬৬ রান যোগ করেন তিনি। ২৫ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ে অপরাজিত থাকেন ৪৫ রানে।

ইনিংসের শেষ দুই ওভারে ৩৪ রান আনে চট্টগ্রাম। ওয়াসিম ও সাকিব করেন খরুচে ওভার। শেষ বলে রানআউট হওয়া শুক্কুর করেন ১৯ বলে ২০ রান। খালেদ ও রাব্বি ২ উইকেট করে নেন। সাকিব তিন ওভারে ৩৫ রান দিয়ে থাকেন উইকেটশূন্য।

লক্ষ্য তাড়ায় কাঙ্ক্ষিত সূচনা পায় বরিশাল। প্রথম দিকে অবশ্য সংগ্রাম করতে হচ্ছিল বিজয়কে। এক পর্যায়ে ১১ বলে তার রান ছিল ১। দ্বিতীয় ওভারের শেষ দুই শর্ট ডেলিভারিতে বাঁহাতি পেসার মেহেদী হাসান রানাকে স্কয়ার লেগ দিয়ে টানা ছক্কা হাঁকান। সেই থেকে খোলা তরবারি হয়ে ওঠে তার ব্যাট।

চতুর্থ ওভারে শুভাগতকে ফের জোড়া ছক্কা মারেন বিজয়। পরের ওভারে রানা ১৩ রান দিলেও ভাঙেন ৪৮ রানের উদ্বোধনী জুটি। আরেক ওপেনার সাইফ হাসান ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন।

মিডিয়াম পেসার ক্যাম্পারের ওপর চড়াও হন বিজয়। ৩ চার ও ১ ছয়ে ওই ওভার থেকে আসে ১৯ রান। পাওয়ার প্লে শেষে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ৬৭ রান। কিন্তু এই শক্ত ভিত নড়চড়ে যায় নিহাদুজ্জামানের বোলিংয়ে।

দলীয় ৭২ থেকে ১১৭, এই ৪৫ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় বরিশাল। অষ্টম ওভারে বল হাতে নিয়ে পরপর দুই বলে দুই অভিজ্ঞ সাকিব ও মাহমুদউল্লাহকে তুলে নেন নিহাদুজ্জামান। সাকিব হন বোল্ড। মাহমুদউল্লাহ ওয়াইড বলে হন স্টাম্পড।

নিহাদুজ্জামানের পরের ওভারে শ্রীলঙ্কার চতুরঙ্গ ডি সিলভাও হন স্টাম্পড। শুরুতে দারুণ বল করা পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী আক্রমণে ফিরে তুলে নেন বিজয়কে। মাত্র ২৭ বলে ফিফটি স্পর্শ করা ডানহাতি ব্যাটার হন বোল্ড। এরপর পাকিস্তানের ইফতিখার আহমেদকে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে দেননি সেই নিহাদুজ্জামানই। ২০ বল খেলে কোনো বাউন্ডারি ছাড়া ১৩ রান করেন তিনি।

চট্টগ্রামের দিকে হেলে পড়া ম্যাচ ঘুরিয়ে নিজেদের দিক টেনে আনেন আফগান করিম। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে চার মেরে শুরু হয় তার। খরুচে রানাকে ১৭তম ওভার টানা দুই ছক্কা মারেন তিনি। প্রচুর রান দেওয়া আরেক বলার ক্যাম্পারের পরের ওভার থেকে আদায় করে নেন দুই চার।

জানাত অবশ্য ফিরতে পারতেন সাজঘরে। ক্যাম্পারের বলে লং-অফে তার ক্যাচ ফেলে দেন রানা। অন্যপ্রান্তে থাকা সালমান হোসেন ১৯তম ওভারে মৃত্যুঞ্জয়কে এলোমেলো করে দেন। এক ছয়ের পাশাপাশি মারেন দুই চার। ফলে ম্যাচ হাতের মুঠোয় চলে আসে বরিশালের।

শেষ ওভারে বরিশালের দরকার দাঁড়ায় ২ রান। প্রথম বলেই জানাত ফেরেন চাঁদের দুর্দান্ত ক্যাচে। এরপর চার মেরে খেলা শেষ করে দেন ওয়াসিম। সালমান ১৪ বলে ১৮ রানের অপরাজিত থাকেন।

Comments

The Daily Star  | English

Small businesses, daily earners scorched by heatwave

After parking his motorcycle and removing his helmet, a young biker opened a red umbrella and stood on the footpath.

35m ago