‘ক্রিকেটার হিসেবে দায়িত্ব সময়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকা’

দেশে-বিদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক আসরগুলোতে দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গেও তার সম্পর্ক অনেক পুরনো। ২০০১ সাল থেকে এখানে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তিনি। এবার বিপিএলে তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন রংপুর রাইডার্সের।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বললেও আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে এখনও অবসর নেননি শোয়েব মালিক। যদিও পাকিস্তানের জার্সিতে এই সংস্করণে ২০২১ সালের পর আর খেলা হয়নি তার। তবে দেশে-বিদেশে ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক আসরগুলোতে দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন তিনি। বাংলাদেশের সঙ্গেও তার সম্পর্ক অনেক পুরনো। ২০০১ সাল থেকে এখানে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে যাচ্ছেন তিনি। এবার বিপিএলে তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন রংপুর রাইডার্সের। সিলেটে দলের অনুশীলনের ফাঁকে রোববার গণমাধ্যমে এই বর্ষীয়ান তারকা কথা বলেন তার ফিটনেস ও আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ভবিষ্যৎ, বাংলাদেশের ক্রিকেট ও বিপিএলসহ আরও অনেক কিছু নিয়ে।

আপনার দলে মোহাম্মদ নাঈম শেখ, শামীম হোসেনের মতো তরুণরা আছে। এমনকি অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান বেশ কিছু দিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। কিন্তু এখনও সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি। তাদেরকে কাছ থেকে দেখছেন আপনি। তাদের নিয়ে আপনার কী পর্যবেক্ষণ ও তাদের প্রতি কী পরামর্শ? 

শোয়েব মালিক: আমার ভাবনা খুবই সাধারণ, 'কঠোর পরিশ্রম করে যাও।' সবটুকু প্রতিভাই ওদের আছে। আমি নিশ্চিত, পরিশ্রম করে গেলে ওরা ধারাবাহিক পারফরম্যান্স দিতে শুরু করবে। ওদের খেলায় প্রতিভার ঝলক আমি দেখেছি। আশা করি, ওরা দলের জন্য ভালো করবে। এই দলের হয়ে (রংপুর) যেমন, বাংলাদেশের হয়েও করবে।

তারা কি আপনার সঙ্গে কথা বলে? প্রশ্ন করে?

মালিক: হ্যাঁ, তারা আমাকে অনেক প্রশ্ন করে। যেহেতু আমি দলের সবচেয়ে বেশি বয়সী ক্রিকেটার, অনেকেই আমার কাছে আসে এবং নানা কিছু জানতে চায়। আমারও ওদেরকে সহায়তা করতে পেরে ভালো লাগে। ব্যাপারটি হলো দলের ভেতর নিজের অভিজ্ঞতা ছড়িয়ে দেওয়া। এমনকি অন্য দল থেকেও কেউ যদি আসে, আমি তার সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করি। যে কোনো ক্রিকেটারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি সব সময়ই তৈরি আছি।

আপনার বয়স ৪১ হতে মাত্র দুই দিন বাকি। এখনও বেশ দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন। এই বয়সে খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা কীভাবে আসে? 

মালিক: বিশ্বাস করুন, যদিও  আমার বয়স দলে সবচেয়ে বেশি, তবে আমার ফিটনেস আপনি তুলনা করতে পারেন ২৫ বছর বয়সী কোনো ক্রিকেটারের সঙ্গে। আমাকে যা অনুপ্রাণিত করে তা হলো, আমি এখনও মাঠে আসা উপভোগ করি। আমি অনভুব করি, সেই ক্ষুধাটা এখনও আছে। এই দুটি ব্যাপার (উপভোগ আর ক্ষুধা) যতদিন আছে, ক্রিকেট খেলা চালিয়ে যাব।

এই কারণেই অবসরের কথা চিন্তাও করছি না আমি। যদি সম্ভব হয়, আমি অবসর নিতে চাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে কিংবা পরিপূর্ণ ক্রিকেট খেলে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই প্রক্রিয়াই (অবসরের) শুরু হয়নি এবং নিজের ক্রিকেট আমি উপভোগ করছি। যেখানেই সুযোগ মেলে, আমি যাই ও খেলি।

পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার ইচ্ছা এখনও আছে?

মালিক: টেস্ট ও ওয়ানডে থেকে তো অবসরই নিয়েছি। টি-টোয়েন্টি আমি এখনও খেলতে প্রস্তুত আছি, পুরোপুরিই তৈরি আছি এবং যখনই সুযোগ পাই, নিজের সেরা দিয়ে যাচ্ছি।

সম্প্রতি পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) শীর্ষ পর্যায়ে পরিবর্তন এসেছে। এতে করে জাতীয় দলের ফেরার সম্ভাবনা বা আশা কি আপনার বেড়েছে?

মালিক: দেখুন ভাই, ওসব নিয়ে আমি একটুও ভাবি না। ওই ধরনের ভাবনা আমার মাথা ও মনে আসেই না। কারণ, আমি একজন ক্রিকেটার এবং জীবনে অনেক কিছু দেখা হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে এসে, এসব ব্যাপার আমাকে আর ভাবায় না। একজন অ্যাথলেট হিসেবে… এই বার্তাটি সব অ্যাথলেটের জন্যই, দলীয় খেলায় কখনোই ভাবার কিছু নেই যে কে আপনার পক্ষে আছে, কে নেই। লক্ষ্য থাকা উচিত ঘাম ঝরানো, কঠোর পরিশ্রমে ভরসা রাখা এবং নিজের প্রতি ও আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখা।

অনুশীলনে মোহাম্মদ রফিকের (রংপুরের সহকারী কোচ ও বাংলাদেশের কিংবদন্তি স্পিনার) বোলিংয়ের বিপরীতে ব্যাট করতে দেখা গেল আপনাকে। একসময় তার বিপক্ষে খেলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও। তাকে এখন কেমন দেখছেন?

মালিক: আমি তাকে বয়স জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি বললেন যে তার বয়স ৫৭ বছর (মূলত ৫২ বছর)। তবে এখনও তিনি নেটে যেভাবে বল করেন, এমনকি (অনুশীলনে) ফুটবলে তিনি যেভাবে খেলেন, এখনও তিনি বেশ ফিট!

তার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছি। দেশের জন্য তিনি সত্যিই ভালো করেছেন। মানুষ হিসেবেও তিনি দারুণ। কোচিং স্টাফের অন্যরাও ক্রিকেটারদের নানাভাবে সাহায্য করেন। এই কোচিং স্টাফ বেশ তরুণ হলেও তাদের সবচেয়ে ভালো দিক হলো, ম্যাচ হারলেও তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে না। এটিই সবচেয়ে জরুরি। কৃতিত্ব তাই তাদের প্রাপ্য। গোটা দলকে এক সুতোয় গেঁথে রাখছেন তারা। অনুশীলনের সম্ভাব্য সেরা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।

আর মাত্র দুই ম্যাচ খেললেই ৫০০ টি-টোয়েন্টির মাইলফলক স্পর্শ করবেন। আপনার শুরুর সময়ের চেয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এখন কতটা পাল্টে গেছে? 

মালিক: টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট শুরুর সময় ১৩০-১৪০ রান অনেক ক্ষেত্রেই ছিল যথেষ্ট। এখন উইকেট যদি ভালো হয়, ২২০-২৩০ রানও নিরাপদ নয়। শুরুর দিনগুলোর চেয়ে তাই অনেক কিছুই এখন বদলে গেছে। ক্রিকেটার হিসেবে সবার দায়িত্ব সময়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকা, যেন সর্বোচ্চ পর্যায়ে টিকে থাকা যায় এবং নিজের খেলার ধারাবাহিক থাকা যায়, দলের জন সহায়ক থাকা যায়। বছরের পর বছর ধরে আমি এটাই করার চেষ্টা করছি যেন সময়ের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে থাকা যায়, যাতে যেখানেই খেলতে যাই না কেন, দলের চাহিদা যেন মেটাতে পারি।

টি-টোয়েন্টিই কি আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সংস্করণ? 

মালিক: মোটেই তা নয়। তিনশর কাছাকাছি (২৮৭টি) ওয়ানডেও খেলেছি আমি! কখনোই ভাবিনি যে এটাই আমার সংস্করণ বা এরকম কিছু। ক্রিকেটার হিসেবে দায়িত্ব হলো নিজের কাছে জিজ্ঞেস করা, এরপর মনের ভেতর থেকে যা আসবে, সেটায় অটল থাকা। নিজের জন্য লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই এটা করে আসছি।

নেটে আপনাকে বোলিং অনুশীলন করতে দেখা গেল। নতুন কোনো অস্ত্র যোগ করার চেষ্টা করছেন? 

মালিক: বোলিংয়ে গোটা দুয়েক বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করছি। কারণ, টি-টোয়েন্টিতে অফ স্পিনাররা আক্রমণে আসা মাত্রই ব্যাটসম্যানরা আগ্রাসী হতে শুরু করে। এজন্যই কিছু বৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি আমি এবং কাজ করছি সেসব নিয়ে।

স্পিন বোলিংয়ের বিপক্ষে আপনি দুর্দান্ত। ডাউন দ্য উইকেট এলেই যেন নিশ্চিত ছক্কা! এই প্রসঙ্গে কী মনে হয়? 

মালিক: ছক্কা হয় যদি বল জায়গায় থাকে। বল যদি আমার স্লটে না থাকে, তখন সেভাবেই সামলাতে হয়। এটা অনুশীলন থেকে আসে। কঠোর পরিশ্রম থেকে আসে। পরিশ্রম ছাড়া ধারাবাহিকভাবে কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়। পরিশ্রমই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এরপর নিজের ওপর বিশ্বাস।

টি-টোয়েন্টিতে ১২ হাজারের বেশি রান আপনার। ৭৫টি ফিফটি থাকলেও এখনও কোনো সেঞ্চুরি নেই। ব্যাটিং পজিশনের কারণে অবশ্য সেঞ্চুরি পাওয়া কঠিনই আপনার জন্য। ক্যারিয়ার শেষের আগে এই অপূর্ণতা ঘোচানো নিয়ে কী মনে হয়?

মালিক:  হ্যাঁ, আমি নিশ্চিতভাবেই চেষ্টা করব… হয়তো ওপেন করা শুরু করতে হবে! আমি মিডল অর্ডারে ব্যাট করি। দলের চাওয়া থাকে, খেলা শেষ করে আসা। দলের জন্য ফিনিশার হওয়া নিয়েই তাই মূলত আমার ভাবনা থাকে। এজন্যই হয়তো আপনারা আমার কাছ থেকে সেঞ্চুরি পাননি।

একবার মনে আছে আমার, ওপেন করেছিলাম (মূলত তিন নম্বরে নেমেছিলেন) এবং ৯৫ রানে অপরাজিত ছিলাম। পরে মনে হচ্ছিল, আর পাঁচ-ছয় রান যদি হতো! তবে ব্যাপারটি হলো, আমি সব সময় দলের জন্য খেলি এবং ফিনিশারের ভূমিকাটাই সবচেয়ে প্রাধান্য পায়। যদি কখনও সুযোগ আসে, শতরানের কাছাকাছি যদি যেতে পারি, সেঞ্চুরির সব চেষ্টাই করব।

Comments

The Daily Star  | English

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

8h ago