মাইলফলকের ম্যাচে লড়াইও করতে পারলো না বাংলাদেশ

এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারল তামিম ইকবালের দল।

মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ২০০তম ম্যাচ। আবার বাংলাদেশ দলের শততম ওয়ানডেতে। এর আগে ঘরের মাঠে ৭টি সিরিজ ছিল বাংলাদেশের পক্ষে। কিন্তু এমন ম্যাচে লড়াইটাও জমিয়ে করতে পারলো না টাইগাররা। জেসন রয়ের সেঞ্চুরির পর আদিল রশিদ-স্যাম কারানের বোলিং তোপে বিশাল ব্যবধানেই হারে স্বাগতিকরা।

শুক্রবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৩২ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেটে ৩২৬ রান করে তারা। জবাবে ৩২ বল বাকি থাকতে ১৯৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। তাতে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ হারল তামিম ইকবালের দল।

এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই ব্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশ। যদিও টস জিতেছিলেন তামিম ইকবালই। এক রাশ বিস্ময় উপহার দিয়ে ফিল্ডিং বেছে নেন টাইগার অধিনায়ক। প্রতিপক্ষ অধিনায়ক বাটলারও জানান তার পছন্দ ছিল ব্যাটিং। শেষ পর্যন্ত বিশাল পুঁজিই গড়ে ইংলিশরা। লক্ষ্য তাড়ায় নেমেও শুরু থেকে বিপদে ছিল টাইগাররা।

সিরিজের হার নিশ্চিত হওয়ার ম্যাচে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল সাকিব-তামিমের জুটি। ৯ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর দলের হাল ধরেছিলেন তারা। সাম্প্রতিক সময়ে এ দুই ক্রিকেটার নানা কারণে ছিলে আলোচনায়। বিশেষকরে দুই তারকার মধ্যে কথা বলা বন্ধ নিয়ে। তবে এদিন একত্রে ১১১ বল মোকাবেলা করে গড়েছিলেন ৭৯ রানের জুটি। 

এদিন স্যাম কারানের করা প্রথম ওভারেই জোড়া ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। দুই ব্যাটার ফেরেন গোল্ডেন ডাক পেয়ে। কারানের আউটসুইঙ্গারে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জেসন রয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরমুখী হন লিটন। পরের বলে আরও একটি আউটসুইঙ্গার ডেলিভারিতে খোঁচা মারতে গিয়ে উইকেটরক্ষক বাটলারের হাতে ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

চার নম্বরে নামা অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও করেন হতাশ। পরের ওভারে ফিরে তাকে তুলে নেন সেই কারান। তিনিও শিকার হন উইকেটের পেছনে বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে। যদিও আম্পায়ার প্রথমে আঙুল তোলেননি। রিভিউ নিলে রিপ্লেতে দেখা উইকেটরক্ষক হাতে যাওয়ার আগে ব্যাট চুমু খেয়ে যায় বল। ফলে ৯ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে বড় বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।

মুশফিকের বিদায়ের পর অধিনায়ক তামিমের সঙ্গে দলের হাল ধরেন সাকিব। দেখে শুনে ব্যাট করে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা চালান তারা। তাদের ৭৯ রানের জুটিটি ভাঙেন মঈন আলী। এগিয়ে গিয়ে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন তামিম। তবে লংঅফে জেমস ভিন্সের ক্যাচে পরিণত হন তিনি। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৫ রান। খেলেন ৬৫টি বল। ৩১ বলে করেছিলেন ২৪ রান। তবে পরের ১১ রান করতে খেলেন আরও ৩৪ বল।

এরপর মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৩৪ রানের জুটি গড়ে আউট হয়ে যান সাকিবও। তাকে বিদায় করেন আদিল। তার অফস্টাম্পের বাইরে রাখা বলে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে খেলতে গিয়ে টাইমিংয়ে হেরফের করে ক্যাচ তুলে দেন মিডঅনে দাঁড়ানো কারানের হাতে। ৬৯ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৫৮ রান করেন এ অলরাউন্ডার।

এরপর অফিফ হোসেনের সঙ্গে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ের চেষ্টা চালান মাহমুদউল্লাহ। তবে ৩৮ রানের বেশি জুটি গড়তে পারেননি। ৭ রানের ব্যবধানে এ দুই ব্যাটারকে ফেরান আদিল। কার্যত তখনই হার নিশ্চিত হয়ে যায় বাংলাদেশের। এরপর তাসকিনের ব্যাটে কেবল হারের ব্যবধানই কমেছে। ২১ বলে ২১ রান করেন রানআউট হন তিনি।

ইংলিশদের হয়ে ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন কারান ও আদিল। ৬.৪ ওভার করে কারান খরচ করেছেন ২৯ রান। আদিল পুরো কোটা বল করে খরচ করেন ৪৫ রান।

এর আগে ইংলিশ শিবিরে শুরুর ধাক্কাটা দেন তাসকিন আহমেদ। ফিল সল্টকে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। এরপর আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ডেভিড মালানকে নিয়ে দলের হাল ধরেন জেসন। স্কোরবোর্ডে ৫৮ রান যোগ করেন এ দুই ব্যাটার। সেখানে মালানের অবদান মাত্র ১১ রান। এদিন বড় ক্ষতি করার আগে তাকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মিরাজ।

কিছুক্ষণ পর জেমস ভিন্সকে তুলে নেন তাইজুল ইসলাম। তবে অপর প্রান্তে নিয়মিত বাউন্ডারি মেরে রানের গতি সচল রাখেন জেসন। ইনিংসের মূল ভিত্তিটা অধিনায়ক বাটলারকে নিয়ে গড়েন এ ওপেনার। চতুর্থ উইকেটে ১০৯ রানের জুটি গড়েন তারা।

এর মাঝেই ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বাদশ সেঞ্চুরি তুলে নেন জেসন। শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে খেলেন ১৩২ রানের ইনিংস। ১২৪ বলে ১৮টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। এরপর বাটলার ও স্যাম কারানরা জ্বলে উঠলে বড় সংগ্রহই মিলে দলটির।

যদিও জেসনের বিদায়ের পর তাসকিন দ্রুত উইল জ্যাককে ফেরালে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছিল বাংলাদেশ। তবে মঈন আলী এসে পাল্টা আঘাত করতে থাকেন। শুরু থেকেই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দ্রুত রান তুলতে থাকেন তিনি। সঙ্গী বাটলারও হাত খুলে খেলতে থাকেন। এ দুই ব্যাটার ষষ্ঠ উইকেটে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৫২ রান।

বাটলারকে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মিরাজ। এর আগে ৬৪ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় খেলেন ৭৬ রানের ইনিংস। আর কারান উইকেটে নেমেই আগ্রাসী। মাত্র ১৯ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় হার না মানা ৩৩ রানের দারুণ এক ক্যামিও খেলেন এ অলরাউন্ডার। তাতেই সোয়া তিনশ পেরিয়ে যায় দলের সংগ্রহ।

বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন ৬৬ রানের খরচায় পান ৩টি উইকেট। ৭৩ রানের বিনিময়ে ২টি উইকেট মিরাজের।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago