হাসানের তোপের পর শান্তর ঝড়ে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিল বাংলাদেশ
আগ্রাসী শুরু পেয়ে বড় রানের আভাস দিচ্ছিল ইংল্যান্ড। শেষের দশ ওভারে দারুণ বল করে তাদের রাশ টেনে ধরলেন হাসান মাহমুদ। জস বাটলারের ফিফটির পরও নাগালে পাওয়া যায় লক্ষ্য। তাতে রনি তালুকদারের আগ্রাসী শুরুর পর উত্তাল হয়ে উঠল নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাট। ইংল্যান্ডকে অনায়াসে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। আগে ব্যাটিং পেয়ে অধিনায়ক বাটলারের ৪২ বলে ৬৭ রানে ৬ উইকেটে ১৫৬ পর্যন্ত করতে পেরেছিল ইংলিশরা। ওই রান ২ ওভার আগেই টপকে যায় বাংলাদেশ।
দলের জেতার ভিত্তি করে দিতে বল হাতে ঝলক দেখানো হাসান ৪ ওভারে ২৬ রানে নেন ২ উইকেট। রান তাড়ায় ৩০ বলে ৫১ করে সবচেয়ে বড় অবদান শান্তর।
ছোট ছোট অবদান আছে আরও। ৮ বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা রনি ১৪ বলে করেন ২১। অভিষিক্ত হৃদয়ের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ২৪ রান। শেষটা টানতে সাকিব-আফিফ রাখেন অবদান। রানে-বলে নেওয়ার পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশ অধিনায়ক অপরাজিত থাকেন ২৪ বলে ৩৪ রানে, আফিফ করেন ১৩ বলে ১৫।
টি-টোয়েন্টিতে দ্বিতীয়বারের দেখায় ইংল্যান্ডকে হারালো বাংলাদেশ। এর আগে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম দেখায় জিতেছিল ইংল্যান্ড।
রান তাড়ায় উত্তাল শুরু আনেন দুই ওপেনার। বিশেষ করে দলে ফেরা রনি ছিলেন তেতে। আগ্রাসী শুরুর সুর বেঁধে দেন তিনিই। লিটন শুরুতে বাউন্ডারি পেলেও এক পাশে থেকে দেখছিলেন রনির আগ্রাসন। প্রথম ৩ ওভারে ৩২ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ।
আক্রমণে এসে চতুর্থ ওভারে রনিকে ছাঁটেন আদিল রশিদ। এই লেগ স্পিনারের গুগলি বুঝতে পারেননি রনি। ১৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে ২১ করে থামেন তিনি। লিটন তার উপস্থিতি থামান পরের ওভারে। জোফরা আর্চারের পেস-অফ ডেলিভারি বুঝতে পারেননি। সহজ ক্যাচ উঠিয়ে বিদায় তার। এই সিরিজে আরেকটি ব্যর্থতায় করেন ১০ বলে ১২ রান।
তিনে নামা শান্ত এরপর বদলে দিতে থাকেন ম্যাচের ছবি। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে অভিষিক্ত তৌহিদ হৃদয় ক্রিস ওকসকে মারেন টানা দুই চার। পরের ওভারে মার্ক উডকে টানা চার বাউন্ডারিতে গ্যালারিতে গর্জন তোলেন শান্ত।
১০ ওভারে ৯৮ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। শান্তর সঙ্গে দারুণ জুটি গড়ে দলকে শক্ত অবস্থানে নেওয়া হৃদয় ফেরেন থিতু হয়ে। মঈন আলির বল তুলে মারতে গিয়ে আউট হন ১৭ বলে ২৪ করে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে তার আগে চলে আসে ৩৯ বলে ৬৫ রান। খেলা তখন বাংলাদেশের অনেকটা পকেটে।
২৭ বলে তৃতীয় ফিফটি তুলে নেন শান্ত। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তার তিন ফিফটির সবকটি এলো শেষ চার ম্যাচে। ফিফটির পর ইনিংস বড় করা হয়নি তারও। উডের বাড়তি গতির এক ডেলিভারি নিচু হয়ে গিয়েছিল, তাতে স্টাম্প ভেঙে যায় তার।
অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ক্রিজে এসে এগোতে থাকেন সহজে। আফিফ হোসেনকে নিয়ে বাকি কাজ সারতে কোন সমস্যাই হয়নি তার। ৩৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৬ রানের জুটিতে ম্যাচ শেষ করে দেন তারা।
এর আগে টস হেরে খেলতে নামা ইংল্যান্ডের ইনিংসের গল্পটা দুই রকম। প্রথম ১০ ওভারে তারা তুলেছিল ১ উইকেটে ৮০ রান। শেষ ১০ ওভারে আরও ৫ উইকেট হারিয়ে তুলতে পারে স্রেফ ৭৬ রান। শেষ ৫ ওভারে ইংল্যান্ড তুলতে পারে মাত্র ৩০ রান। শেষ ৪ ওভারে আসে ২১ রান, পড়ে ৩ উইকেট।
২০০৭ সালের পর টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ড শেষের ৪ ওভারে এত কম রান আর তোলেনি। সেবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ চার ওভারে মাত্র ১৬ রান তুলেছিল তারা। শুরুতে ২ ওভারে ২১ রান দিয়েছিলেন তরুণ ডানহাতি পেসার হাসান। পরের ২ ওভারে মাত্র ৫ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ঝড়ের আভাস দেন জস বাটলার-ফিল সল্ট। এই দুজনের জুটি ভাঙার সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন অধিনায়ক সাকিব নিজেই। নাসুম আহমেদের বলে ১৯ রানে থাকা বাটলারের লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেন তিনি। জীবন পেয়ে ৪২ বলে তিনি করেন ৬৭ রান। এর আগে সল্টের ফিরতি শট নাসুমের জন্য ধরা ছিল কঠিন।
প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি করে দলকে জেতানো ডাভিড মালানকে লম্বা সময় থাকতে দেয়নি বাংলাদেশ। সাকিবের বলে ছক্কা পেটাতে গিয়ে লং অনে ধরা দেন তিনি। এই ধাক্কা সামলে দলকে টানছিলেন বাটলার। হাসানকে টানা দুই ছক্কায় উড়িয়ে ১৮০ রান বা এর আশেপাশের স্কোরের দিকেই ইঙ্গিত করছিলেন। ৩২ বলে ফিফটির পর তাকে দেখাচ্ছিল আরও ভয়ঙ্কর। বাটলারের হাতে মার খাওয়া হাসানই পরে তাকে থামান। টাইমিংয়ে গড়বড় করে ইংল্যান্ড অধিনায়ক ক্যাচ তুলে দেন শান্তর হাতে।
বাটলারের বিদায়ের পরই বদলে যেতে তাকে চিত্র। স্যাম কারান, ক্রিস ওকসরা মেটাতে পারেননি পরিস্থিতির দাবি। ইংল্যান্ডের ডানা ভেঙে নাগালেই বেঁধে রাখে বাংলাদেশ। পরে জয় তুলে তারা তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে।
Comments