বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শেষদিকে কাঙ্ক্ষিত ঝড় তুলতে না পারলেও লিটন দাসের ফিফটিতে চ্যালেঞ্জিং পুঁজি পেল বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় ডাভিড মালান ও অধিনায়ক জস বাটলারের কাঁধে চড়ে কক্ষপথে ছিল ইংল্যান্ড। এরপর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শততম উইকেট নিয়ে মোস্তাফিজুর রহমান এনে দিলেন গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু। দারুণ ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে যুক্ত হলো বাকি বোলারদের নৈপুণ্য। ঘুরে দাঁড়িয়ে ইংলিশদের হোয়াইটওয়াশ করল সাকিব আল হাসানের দল।

মঙ্গলবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডকে ১৬ রানে হারাল বাংলাদেশ। ফলে তিন ম্যাচের সিরিজে এই সংস্করণের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ৩-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা। আগের দুই ম্যাচে যথাক্রমে ৬ ও ৪ উইকেটের ব্যবধানে জিতে সিরিজ আগেই ঘরে তুলেছিল স্বাগতিকরা।

এদিন জয়ের জন্য ১৫৯ রানের লক্ষ্য পায় ইংল্যান্ড। ১৩ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেটে ১০০ রান। ক্রিজে ছিলেন দারুণ খেলতে থাকা মালান ও বাটলার। ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষায় ছিলেন মঈন আলি, বেন ডাকেট, ক্রিস ওকসরা। ফলে জয়ের পাল্লা ভারী ছিল তাদের দিকেই। তবে মোস্তাফিজের এনে দেওয়া ব্রেক থ্রু কাজে লাগিয়ে পরে দারুণ বল করেন তাসকিন আহমেদ আর সাকিবও। ফলে পাশার ডান উল্টে দিয়ে ইংল্যান্ডকে ৬ উইকেটে ১৪২ রানে আটকে জয়ের হাসি হাসে বাংলাদেশ।

টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ভোগান্তির কথা ক্রিকেট দুনিয়ায় অজানা নয়। গত দুই বছরে অনুষ্ঠিত দুটি বিশ্বকাপেও ব্যর্থ হয়েছে তারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবার ওয়ানডেতে হারার পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা - সেটাও আবার ৩-০ ব্যবধানে - তাই যেমন স্মরণীয় হয়ে থাকবে, তেমনি এই ফল ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ। এখান থেকেই হয়তো শুরু হতে পারে এই সংস্করণকে আপন করে নেওয়ার পালা।

এই প্রথম কোনো বড় দলকে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ। এর আগে এমন অভিজ্ঞতা তাদের ছিল জিম্বাবুয়ে, আয়ারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে।

ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ইংল্যান্ডকে চেপে ধরতে শুরুতেই উইকেট দরকার ছিল। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার তানভীর ইসলাম প্রথম ওভারেই বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন। উইকেটের পেছনে গ্লাভস হাতে থাকা লিটন দারুণ দক্ষতায় স্টাম্পড করেন ফিল সল্টকে। টার্নে পরাস্ত হওয়া সল্ট ১ বল খেলে রানের খাতা খুলতে পারেননি। ড্রাইভ করার চেষ্টায় ক্রিজ থেকে বেরিয়ে গিয়ে সময়মতো ফিরতে পারেননি তিনি।

পরের ওভারে বল হাতে পেয়েই উইকেটের উল্লাস করেন অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন। কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মাঠের আম্পায়ার মালানের বিপরীতে এলবিডব্লিউয়ের সিদ্ধান্ত দেওয়ার পর রিভিউ নিয়ে বাঁচেন তিনি। রিপ্লে দেখে তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্ত দেন যে ইনসাইড এজ হয়েছিল মালানের। যদিও সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিতর্ক হওয়ার অবকাশ থাকে।

৬ রানে বেঁচে যাওয়া মালান এগোতে থাকেন। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে অধিনায়ক বাটলারকে। তারা দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৭৬ বলে ৯৫ রানের জুটি। তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান বাঁহাতি মোস্তাফিজ। ১৪তম ওভারে আক্রমণে ফিরে ফিফটি করার মালানকে লিটনের ক্যাচ বানান তিনি। এই উইকেট দিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার ও প্রথম পেসার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শততম উইকেট পূরণ করেন তিনি।

৪৭ বলে ৬ চার ও ২ ছয়ে ৫৩ রান করেন মালান। সঙ্গী হারিয়ে টেকেননি বাটলার। পরের বলেই মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত থ্রোতে রানআউট হন তিনি। ৪ চার ও ১ ছয়ে ৩১ বলে ৪০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। দ্রুত ২ উইকেট পড়ে যাওয়ায় ইংলিশদের ভিত নড়ে যায়।

মঈন ও ডাকেট ধাক্কা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ১৬তম ওভারে হাসান মাহমুদকে চার-ছয় মেরে তারা আনেন ১১ রান। ফলে শেষ চার ওভারে ৪০ রান তাদের দরকার দাঁড়ায়। তবে ১৭তম ওভারে তাসকিন বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন ম্যাচ। একই ওভারে মঈন ও ডাকেটকে ছাঁটেন তিনি। ১০ বলে ৯ করে মঈন ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দেন মিরাজের হাতে। ফুল ডেলিভারিতে ১১ বলে ১১ রান করা ডাকেটের স্টাম্প উপড়ে যায়।

পরের ওভারে মোস্তাফিজ খরচ করেন মোটে ৫ রান। এরপর ১৯তম ওভারে ৪ রান দিয়ে সাকিব সাজঘরে পাঠান স্যাম কারানকে। শেষ ওভারে ২৭ রানের কঠিন সমীকরণ মেলানো হয়নি ওকস ও জর্ডানের। প্রথম দুই বলেই চার হজমের পর তরুণ পেসার হাসান নিজেকে সামলে নেন। পরের চার বলে মাত্র ২ রান দিয়ে উল্লাসে মাতান বাংলাদেশকে।

এর আগে টস হেরে আগে ব্যাট করে ২ উইকেটে ১৫৮ রান তোলে বাংলাদেশ। এক পর্যায়ে ১৮০ কিংবা এর বেশি রানের সম্ভাবনা জাগলেও শেষ পর্যন্ত ১৬০ রানও করতে পারেনি তারা। ১৫ ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ ছিল ১ উইকেটে ১৩১ রান। কিন্তু শেষ পাঁচ ওভারে ভীষণ ভোগে স্বাগতিকরা। আরেকটি উইকেট খুইয়ে তারা স্কোরবোর্ডে যোগ করতে পারে কেবল ২৭ রান।

ম্যাচসেরা লিটন ফিফটি পেয়ে গিয়েছিলেন। ছন্দে থাকা শান্তও থিতু হয়ে পড়েছিলেন। উইকেট হাতে ছিল নয়টি। কিন্তু ১৬ থেকে ২০ ওভারে প্রত্যাশিত রান তুলতে পারেনি বাংলাদেশ। লিটন ৫৭ বলে খেলেন ৭৩ রানের ইনিংস। রনি তালুকদার ৩ চারে ২২ বলে করেন ২৪ রান। নাজমুল হোসেন শান্ত অপরাজিত থাকেন ৩৬ বলে ৪৭ রান। অধিনায়ক সাকিব ৬ বলে অপরাজিত ৪ রান করেন।

সিরিজসেরার পুরস্কার জেতেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটার শান্ত। তিন ম্যাচে এক হাফসেঞ্চুরিসহ ১২৭.৪৩ স্ট্রাইক রেটে ১৪৪ রান করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

If consensus commission fails, it will be a collective failure: Ali Riaz

He made the remarks in his opening statement during the 14th day of the second phase of dialogues with political parties

34m ago